মজে যাওয়া গুজারপুর খাল। নিকাশির উপায়।
প্রাচীনতার চাদর ছেড়ে ধীরে ধীরে আধুনিক হয়েছে শহর। তৈরি হচ্ছে আর পাঁচটা শহরের মতো ঝাঁ চকচকে পাকা বাড়ি। বেড়েছে অফিস কাছারির সংখ্যা। যানবাহন। আর আধুনিকতার এ সব আইকনের সঙ্গে স্বাভাবিক নিয়মেই শহরকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়েছে যানযট, বেহাল নিকাশি থেকে যোগাযোগের সমস্যা। বর্তমানে যা জর্জরিত করছে আমতার মানুষকে।
কলাতলার মোড় থেকে সিনেমাতলা পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার রাস্তা আমতার জীয়ন কাঠি। রাস্তার দু’পাশে রয়েছে গ্রামীণ হাসপাতাল, টোলিফোন এক্সচেঞ্জ, বিডিও অফিস প্রভৃতি নানা সরকারি দফতর। শহরের প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্রও এটি। প্রায় ১৬০০ ছোট-বড় দোকান আছে রাস্তার ধারে। রয়েছে একাধিক হাইস্কুল। ফলে যানবাহন আর মানুষের ভিড়ে সবসময় থিক থিক করে এই রাস্তা। রাস্তাটিকে দু’ভাগে ভাগ করলে প্রথম অংশ কলাতলা মোড় থেকে সিটিসি বাসস্ট্যান্ড এবং দ্বিতীয় অংশ সিটিসি বাসস্ট্যান্ড থেকে সিনেমাতলা। আমতা-ধর্মতলা, আমতা-উলুবেড়িয়া, বাগনান-আমতা, সাঁকরাইল-আমতা প্রভৃতি রুটের বাস কলাতলা হয়েই বাসস্ট্যান্ডে আসে। এ ছাড়া ডিহিভুরসুট-হাওড়া, ঝিখিরা-হাওড়া, মুচিঘাটা-করুণাময়ী রুটের বাসও কলাতলা মোড় দিয়েই চলাচল করে। এ ছাড়া এই রাস্তাতেই চলাচল করে বিভিন্ন রুটের অটোরিকশা ও ট্রেকার। ফলে কলাতলা থেকে সিনেমাতলা পর্যন্ত গাড়ির ভিড় লেগেই থাকে। পরিণতিতে নিত্য যানজট। বাস, অটো- ট্রেকার যাত্রীদের সিংহভাগ শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঢোকেন হেঁটে কিংবা রিকশায়, মোটরবাইক, সাইকেলে। ফলে সকালের যানজট চলে রাত পর্যন্ত।
শহরের সঙ্গে সড়কপথে হাওড়া শহরের সরাসরি যোগাযোগে বিকল্প পথ বলতে হাওড়া-আমতা লোকাল। কিন্তু মেলে সকাল আর সন্ধ্যায়। বাকি সময় ভরসা সড়কপথ। কিন্তু সরাসরি হাওড়া শহরে যাতাযাতের কোনও উপায় নেই তাঁদের। এক সময় হাওড়া থেকে আমতার মধ্যে দু’টি রুটে বেসরকারি বাস চলাচল করত। একটি আমতা-হাওড়া (ভায়া রাণিহাটি, আন্দুল, মৌড়ি, শিবপুর), অন্যটি হাওড়া-আমতা (ভায়া মুন্সিরহাট, বড়গাছিয়া, ডোমজুড় ও দাশনগর)। প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ এই রুটে যাতায়াত করতেন। কিন্তু দু’টি রুটেই কয়েক বছর ধরে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন বাসিন্দারা। এখন তাঁদের ঘুরপথে বিভিন্ন রুটের বাস ধরে পৌঁছতে হয় হাওড়া শহরে। বাস বন্ধের বিষয়ে জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের সহ সভাপতি অজয় ভট্টাচার্য বলেন, “বাস মালিকেরাই এই রুটে বাস চালাতে চাইছেন না। আমরা এ জন্য বিজ্ঞাপনও দিলেও সাড়া মেলেনি।” বাস মালিকদের দাবি, ওই রুটে বাস চালিয়ে তাঁদের লোকসান হচ্ছিল বলেই বাস তুলে নিয়ছেন তাঁরা। বর্তমানে হাওড়া-আমতা সিটিসি বাস চললেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম বলে আমতাবাসীর দাবি।
বেহাল আমতা বাসস্ট্যান্ড (বাঁদিকে)। যানজটের এমন ছবি রোজকার ঘটনা (ডানদিকে)।
যানজন নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, শহর বাড়ার সঙ্গে রাস্তা চওড়া হওয়ার পরিবর্তে ক্রমশ সংকীর্ণ হয়েছে। দখল হয়ে গিয়েছে ফুটপাথ। অথচ বেড়েছে জনসংখ্যা। তার ফলেই এমন অবস্থা। ফুটপাথ দখল করে একদিকে যেমন বসেছে দোকান, তেমনই বড় দোকানগুলিও অনেক ক্ষেত্রে ফুটপাথের ধখল নিয়েছে। এর মাঝে পড়ে নাকাল হচ্ছেন পথচারীরা। আমতা কেন্দ্রীয় ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষে সুকুমার মালিক, নারায়ণচন্দ্র বসু বলেন, ‘‘ফুটপাথ দখলদারির সঙ্গে কোনও প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী যুক্ত নন। ফুটপাথকে জবরদখল মুক্ত করতে আমরাই পুলিশকে বহুবার বলেছি।’’ যদিও পুলিশের বক্তব্য,প্রশাসনের অন্য অংশকে এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে। তাঁরা সাহায্য করতে পারেন মাত্র। পাশাপাশি রাস্তাকে হকারমুক্ত করতে রাজনৈতির দলগুলির সদিচ্ছারও প্রয়োজন রয়েছে বলে অভিমত পুলিশের। পুলিশ তাদের সাহায্য করতে পারে মাত্র। তবে সুকুমারবাবু ও নারায়ণবাবু স্বীকার করেন, বহু মানুষের রুটি-রুজির প্রশ্ন এখানে জড়িত। তাই সকলের সঙ্গে আলোচনা করেই এর সমাধান করা প্রয়োজন।
সমস্যা রয়েছে আমতায় সিটিসি বাসস্ট্যান্ডকে কেন্দ্র করেও। মার্টিন রেলের জমিতে ওই বাসস্ট্যান্ড তৈরির সময় মার্টিন রেল কর্তৃপক্ষকে শর্ত দেওয়া হয়েছিল শুধু সরকারি বাসই এখানে আসতে পারবে। কিন্তু পরবর্তীকালে বিভিন্ন রুটের বেসরকারি বাস, অটোরিকশা এবং ট্রেকার এই বাসস্ট্যান্ড ব্যবহার করতে শুরু করে। ফলে যানের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বাসস্ট্যান্ডের বাইরে রাস্তা দখল করেও বহু যানবাহন দাঁড়িয়ে থাকে। সেগুলি দাঁড়িয়ে থাকে, যা এলাকায় যানজটের অন্যতম প্রধান কারণ বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ।
রাস্তার সমস্যার সঙ্গে সঙ্গে নিকাশি নিয়েও শহরের মানুষের অভিযোগ বিস্তর। বেহাল নিকাশির কারণে সামান্য বৃষ্টিতেই দক্ষিণ আমতা, মেলাইপাড়া, আমতা বাজার, আমতা বিডিও অফিস চত্বর জলমগ্ন হয়ে পড়ে। আমতা বাজারের পাশ দিয়ে চড়কতলা, সিনেমাতলা হয়ে যে নিকাশি খাল রয়েছে গুজারপুর খাল পর্যন্ত, বসতি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার অস্তিত্ব প্রায় মুছে যাওয়ার জোগাড়। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। প্রতি বর্ষায় জলবন্দি হওয়া এ সব এলাকার মানুষের ভবিতব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
(চলবে)
ছবি: সুব্রত জানা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy