Advertisement
০১ মে ২০২৪
শ্যামপুরে যুবকের অস্বাভাবিক মৃত্যু

নাতির বয়ানে বৌমার নামে খুনের অভিযোগ শাশুড়ির

অভিযোগ, বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের কাঁটা স্বামীকে সুকৌশলে পৃথিবী থেকে ‘সরিয়ে’ দিয়েছিলেন স্ত্রী। বাবাকে মেরে ফেলার জন্য মায়ের ছক জেনে গিয়ে সেকথা ঠাকুমাকে জানিয়ে দিয়েছিল নাতি। ঠাকুমা সুনীতা মণ্ডলের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ স্বামীকে খুনের অভিযোগে বৌমা অনিতা মণ্ডলকে গ্রেফতার করেছে।

ধৃত অনিতা মণ্ডল। —নিজস্ব চিত্র।

ধৃত অনিতা মণ্ডল। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শ্যামপুর শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৬ ০২:২৫
Share: Save:

অভিযোগ, বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের কাঁটা স্বামীকে সুকৌশলে পৃথিবী থেকে ‘সরিয়ে’ দিয়েছিলেন স্ত্রী। বাবাকে মেরে ফেলার জন্য মায়ের ছক জেনে গিয়ে সেকথা ঠাকুমাকে জানিয়ে দিয়েছিল নাতি। ঠাকুমা সুনীতা মণ্ডলের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ স্বামীকে খুনের অভিযোগে বৌমা অনিতা মণ্ডলকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতার হয়েছে অনিতাদেবীর প্রেমিক প্রতিবেশী বিশ্বনাথ মণ্ডলও। ঘটনাটি হাওড়ার শ্যামপুরের খুড়িগাছি এলাকার।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, গত ২৭ অক্টোবর অনিতার স্বামী সীতারাম মণ্ডলের (৩০) অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। মৃত্যুর তদন্তে নেমে প্রাথমিক ভাবে পুলিশের ধারণা হয় তিনি বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছেন। একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। পরে পরিবার সূত্রে পুলিশ জানতে পারে ২৬ অক্টোবর সীতারাম মদ্যপ অবস্থায় রাতে বাড়ি ফেরেন। বাড়ি ফেরার পর তিনি জল খেয়ে শুয়ে পড়ার কিছুক্ষণ পরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। বমি করতে শুরু করেন। দম্পতির বছর দশেকের ছেলে সুশান্ত মাকে বাবার অসুস্থতার কথা জানায়। এরপর সীতারামবাবুকে উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। পর দিন তিনি মারা যান।

কিন্তু ঘটনার মোড় ঘুরে যায় গত শনিবার। সীতারামের মা সুনীতাদেবী শ্যামপুর থানায় লিখিত অভিযোগে জানান, বৌমা জলের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে খাইয়ে তাঁর ছেলেকে খুন করেছে।

পুলিশ ও সীতারামের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, একই পাড়ায় হলেও সীতারাম স্ত্রীকে নিয়ে আলাদা থাকতেন। ছেলের মৃত্যুর পর সুনীতাদেবী ভেঙে পড়েছিলেন। ফলে নাতি সুশান্ত তাঁর কাছে এসে থাকতে শুরু করে। পুলিশ জানিয়েছে, ঠাকুমার সঙ্গে থাকার সময়েই সুশান্ত তাঁকে বলে যে ‘মা, বাবাকে বিষ খাইয়ে মেরেছে। কারণ, একদিন রাতে মায়ের কাছে শুয়েছিল সে। তখন সে মাকে ফোনে কারও সঙ্গে কথা বলতে শোনে। ফোনের ওপারে একজনকে মা কী ভাবে বাবাকে সরিয়ে ফেলা যায় তা নিয়ে কথা বলছিল। বিষ খাইয়ে মেরে ফেলার কথাও বলে।’ নাতির কাছে সব শুনে সুনিতা দেবী পুলিশকে সব জানিয়ে অভিযোগ করেন, সীতারামকে জলের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে খাইয়ে মেরে ফেলেছে তাঁর বৌমা। শুধু তাই নয়, তিনি পুলিশকে আরও জানিয়েছেন, নাতি তাকে এও বলেছে যে বৌমা মাঝেমধ্যেই তাঁর ছেলেকে লাঠি দিয়ে মারত। অভিযোগ পেয়ে পুলিশ অনিতাকে গ্রেফতার করে। তাকে জেরা করার পরে বিশ্বনাথ মণ্ডল নামে একজনকে গ্রেফতার করে।

রবিবার আদালতে সুশান্তর গোপন জবানবন্দিও নেওয়া হয়। অনিতা ও বিশ্বনাথকে উলুবেড়িয়া মহকুমা আদালতে তোলা হলে অনিতার তিন দিনের পুলিশি হেফাজত এবং বিশ্বজিতের ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, অনিতার বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রির্পোট পেলে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে।

সুনীতাদেবী জানান, বছর বারো আগে অনিতা ও সীতারামের বিয়ে হয়। বছর দুয়েক পরে সুশান্ত জন্মায়। তাঁর ছেলে দিনমজুরের কাজ করত। তা ছাড়া বর্ষার সময় সমুদ্রে মাছ ধরতে যেত। প্রতিবেশী বিশ্বনাথ প্রায়ই সীতারামের বাড়িতে যেত। তাঁর অভিযোগ, সেই সূত্রে অনিতার সঙ্গে বিশ্বনাথের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। এ নিয়ে প্রতিবেশীরাও তাঁকে বলত। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিশ্বনাথ। তিনি বলেন, ‘‘আমি স্থানীয় ডিওয়াইএফ-এর নেতা। তাই আমাকে তৃণমূল ফাঁসিয়েছে।’’ যদিও তৃণমূলের তরফে অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Shyampur District
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE