বর্ষা গিয়েছে। দোরগোড়ায় কড়া নাড়ছে শীত। তবুও বিদায় নেওয়ার কোনও লক্ষণই নেই ডেঙ্গির। রাজ্যের আর সব জায়গার মতো হুগলিতেও বহাল তবিয়তে ডেঙ্গি। ডেঙ্গি মোকাবিলায় যে শ্রীরামপুর শহরে কোমর বেঁধে নেমেছিল প্রশাসন থেকে স্বাস্থ্য দফতর, সেখান থেকেও পুরোপুরি নির্মূল করা যায়নি ডেঙ্গিকে। ফলে ডেঙ্গির মোকাবিলায় নেওয়া ব্যবস্থায় কোনও গলদ ছিল কি না সেই প্রশ্ন উঠেছে।
জেলাশাসক সঞ্জয় বনশল বলেন, ‘‘শ্রীরামপুর, চাঁপদানি, রিষড়া-সহ কয়েকটি জায়গা থেকে ডেঙ্গির খবর আসছে। তবে আতঙ্কের কারণ নেই। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের তরফে পরিস্থিতির উপর কড়া নজর রাখা হয়েছে।’’ এর পরেই তিনি যোগ করেন, ‘‘এলাকায় আবর্জনা বা জল যাতে না জমে, সে ব্যাপারে পুরসভাগুলিকে আরও সতর্ক থাকতে হবে।’’ আর সেখানেই মানুষের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে ডেঙ্গির মোকাবিলায় জেলার বিভিন্ন পুরসভার পদক্ষেপ নিয়ে।
বেশ কিছু দিন ধরে শ্রীরামপুরের পাশের শহর রিষড়ায় ডেঙ্গি মাথাচাড়া দিয়েছে। দিন কয়েক আগে শহরে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে এক কিশোরের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটেছে। পুরসভা সূত্রে খবর, শহরের বিভিন্ন জায়গায় ডেঙ্গি ছড়িয়েছে। রিষড়া সেবাসদন, শ্রীরামপুর ওয়ালশ বা শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যাচ্ছেন জ্বরে আক্রান্তেরা। সোমবার শ্রমজীবী হাসপাতালে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে রিষড়ার ন’জন ভর্তি ছিলেন।
চাঁপদানি পুরসভার বিভিন্ন জায়গাতেও কিছু দিন ধরে ডেঙ্গির প্রকোপ দেখা দিয়েছে। গত কয়েক দিনে অন্তত পনেরো জন চটকল শ্রমিক জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভদ্রেশ্বরের গৌরহাটি ইএসআই হাসপাতালে ভর্তি হন। তাঁদের রক্তের নমুনায় ডেঙ্গির ভাইরাসের উপস্থিতিও মিলিছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে। এঁদের মধ্যে চার জন এখনও ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অবস্থার অবনতি হওয়ায় সোমবার দুপুরে দু’জনকে কলকাতার মানিকতলা ইএসআই হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। শীত পড়তে চললেও এখনও ডেঙ্গির দাপাদাপিতে চিকিৎসকদের একাংশ চিন্তিত।
সোমবার জেলাশাসক, শ্রীরামপুরের মহকুমাশাসক রজত নন্দা, মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) শুভ্রাংশু চক্রবর্তী ওই পুরসভার যান। সিএমওএইচ জানান, ডেঙ্গি মোকাবিলায় রিষড়ার বাড়ি বাড়ি নিবিড় অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাড়ি পিছু কত জনের জ্বর হয়েছে, তা নিয়ে সমীক্ষা করা হবে। পাশাপাশি, মশার লার্ভা নিধনের কাজও চলবে। কাউন্সিলাররা জানান, ডেঙ্গি মোকাবিলায় সব রকম চেষ্টাই করা হচ্ছে। এ দিন জেলাশাসক, মহকুমাশাসক এবং সিএমওএইচ শ্রীরামপুর পুরসভাতেও কাউন্সিলারদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
প্রশাসন সূত্রের খবর, শহরের প্রভাসনগর, মল্লিকপাড়া-সহ বেশ কয়েকটি জায়গায় ডেঙ্গির খবর মিলছে। ডেঙ্গি পুরোপুরি কব্জায় না আসায় শহরের আবর্জনা সাফাই নিয়ে জেলাশাসক অসন্তোষ প্রকাশ করেন। যদিুও পুর-কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, ডেঙ্গি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। আপাতত আরও ছয় সপ্তাহ মশার লার্ভা মারার অভিযান চলবে বলে বৈঠকে ঠিক হয়েছে। শ্রীরামপুর পুরসভার চেয়ারম্যান-ইন-কাউন্সিল উত্তম রায় বলেন, ‘‘ডেঙ্গি মোকাবিলায় কোনও শিথিলতা দেখানো হয়নি। পুরপ্রধানের নেতৃত্বে সর্বতোভাবে ডেঙ্গিকে ঠেকানোর চেষ্টা চলছে এবং চলবেও।’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy