Advertisement
১৮ মে ২০২৪

নাম পুলিশের খাতায়, তবুও পলাশ অধরাই

তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী তৈয়াব আলির বাড়ির চত্বর গত বুধবার রাতে বোমা, গুলিতে কেঁপে উঠেছিল। হুগলির জাঙ্গিপাড়ার জঙ্গলসুফি এলাকার ওই বাসিন্দা ঘটনার পর অভিযোগ দায়ের করেন পুলিশের কাছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
জাঙ্গিপাড়া শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৭ ০২:২৯
Share: Save:

তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী তৈয়াব আলির বাড়ির চত্বর গত বুধবার রাতে বোমা, গুলিতে কেঁপে উঠেছিল। হুগলির জাঙ্গিপাড়ার জঙ্গলসুফি এলাকার ওই বাসিন্দা ঘটনার পর অভিযোগ দায়ের করেন পুলিশের কাছে। তিনি অভিযোগের আঙুল তোলেন, দলেরই পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ পলাশ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে।

কিন্তু শুক্রবার রাত পর্যন্ত পুলিশ তাঁর টিকিও ছোঁয়নি। তিনি বহাল তবিয়াতেই এলাকায় রয়েছেন। ঠিক যেমনটি দিন কয়েক আগে তারকেশ্বরের ডাকাবুকো তৃণমূল নেতা মহারাজ নাগের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট অভিযোগ দায়ের করার সত্বেও পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। সেক্ষেত্রে সালিশি সভায় ‘তোলার টাকা’ দিতে না পারায় অশোক ভট্টাচার্য নামে এক ব্যক্তি আত্মঘাতী হন। তাঁর স্ত্রী পুলিশের কাছে ওই নেতার নামে নির্দিষ্ট অভিযোগ জানান। কিন্তু ফল হয়নি কিছুই।

জাঙ্গিপাড়ার ঘটনায় পুলিশ পলাশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হাত গুটিয়ে বসে থাকলেও কিন্তু শাসকদলের কর্মী সমর্থকদের পাশাপাশি মুখর হয়েছেন এলাকাবাসীরা। বছর কয়েক আগে ২১ জুলাইয়ের সভা থেকে ফেরার সময় ওই এলাকারই দিলাকাশ অঞ্চলে পলাশ বাহিনীর হাতে আক্রান্ত হন অসীম নন্দী-সহ আরও কয়েকজন সিপিএম কর্মী। সিপিএমের ওই প্রাক্তন পার্টি সদস্য এক সময় দলের তরফে সেখানে সংগঠনের মূল দায়িত্বে ছিলেন। সেদিন সন্ধ্যায় পলাশের দলবলের হাতে প্রহৃত হয়ে পরে হাসপাতালে অসীমবাবু মারা যান।

অসীমবাবুর ছেলে অর্ঘ নন্দী শুক্রবার বলেন, ‘‘২০১৫ সালে বাবাকে যখন মারা হয় বাবা সে সময় সক্রিয় রাজনীতি থেকে অনেকটাই সরে এসেছেন। তার আগে সিপিএম করার দায়ে বাবার চাকরি যায়। বাবা স্থানীয় একটি হিমঘরের সামান্য কর্মী ছিলেন। আমি তখন ছাত্র। বাবা চাকরি খোওয়ানোয় আমাদের আর্থিক অবস্থা সে সময় সঙ্গীন।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘বাবার মৃত্যুর পর পুলিশ চাপে পড়ে পলাশকে গ্রেফতার করে। কিন্তু পরে ওই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও প্রহৃতরা পলাশের দলবলের চাপে পড়েই কিন্তু অভিযোগ তুলে নিতে বাধ্য হন।’’ পলাশ বেকসুর জামিন পেয়ে যায়।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অসীম নন্দীর খুনের ঘটনায় অভিজিৎ দাস-সহ কয়েকজনকে সেই সময় মারধর করা হয়। অভিজিৎবাবুই ওই ঘটনায় অভিযোগ দায়ের করেন পুলিশের কাছে। এছাড়াও ওই ঘটনার কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীরা সেই সময় আদালতে সাক্ষ্য দেন। কিন্তু পরে তাঁরা অভিযোগ তুলে নিলে আইনত পুলিশের কিছু করার থাকে না।

জাঙ্গিপাড়ার সিপিএমের জোনাল সম্পাদক অলোক সিংহরায় বলেন, ‘‘সিপিএম-সহ অন্যান্য দলের বিরোধীরা এতদিন মার খাচ্ছিল। এ বার নিজের দলের কর্মীদেরও মারধর করছে পলাশের দলবল। আসলে শেখ মৈনুদ্দিনকে( বুধো) তৃণমূল ব্লক সভাপতি ঘোষণার পর তার সাগরেদদের দাপাদাপি বেড়ে গিয়েছে।’’

তৃণমূলের আক্রান্ত কর্মী তৈয়াব আলি অবশ্য ন বলেন, ‘‘আমি শেষ দেখে ছাড়ব। নিজে চোখে আমি পলাশকে দেখেছি। তাই পুলিশকে অভিযোগ জানিয়েছি।’’

কী বলছেন পলাশ স্বয়ং?

তিনি বলেন,‘‘কী সব উল্টোপাল্টা লিখছেন? আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে পারবে পুলিশ?’’

কিন্তু অভিযোগ থাকার সত্বেও তো পুলিশ আপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না? এ বার ডাকাবুকো নেতার উত্তর, ‘‘সেটা পুলিশ আর প্রশাসনের ব্যাপার। সেই কৈফিয়ত আমি আপনাকে দেব না কি?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Police Miscreant
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE