পাঁচ বছর আগে ঘটা করে জেলা পুলিশ ভেঙে তৈরি হয়েছিল পুলিশ কমিশনারেট। কিন্তু এখনও সেখানে বিপর্যয়ের মোকাবিলা করার মতো কোনও প্রশিক্ষিত কর্মী এমনকী ডুবুরি পর্যন্ত নেই। আর প্রতি পদে পদে এই না থাকার ‘অভাব’ বুঝতে হচ্ছে হাওড়া সিটি পুলিশকে।
গঙ্গার পশ্চিম পারের শহর হাওড়া। মাঝেমধ্যেই গঙ্গা কিংবা এলাকার বিভিন্ন পুকুরে, ঝিলে ডুবে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জল থেকে উদ্ধারের জন্য হাওড়া পুলিশকে ভরসা করতে হয় কলকাতা পুলিশের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর উপরে। কলকাতা থেকে আসা ডুবুরি জলে না নামা পর্যন্ত ডুবন্ত মানুষ উদ্ধারের কোনও পরিকাঠামোই নেই। কিন্তু প্রশ্ন হল, পাঁচ বছর হয়ে গেলেও নদী কেন্দ্রিক শহর হাওড়ায় পুলিশের নিজস্ব ডুবুরি কিংবা বিপর্যয় মোকাবিলার দল নেই কেন?
হাওড়া সিটি পুলিশ সূত্রে খবর, কমিশনারেট তৈরির দু’বছর পর থেকেই এই সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছিল পুলিশকে। তখনই সিটি পুলিশের কর্তারা বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী ও ডুবুরির জন্য রাজ্য প্রশাসনের কাছে বেশ কয়েক বার আবেদন করেন। কিন্তু তিন বছর কেটে গেলেও এখনও পর্যন্ত কোনও উত্তরই আসেনি বলেই পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। আর এর ফলেই হাওড়ায় কোনও ঘটনা ঘটলে কলকাতা পুলিশের ডুবুরি আসতে আসতেই বেশ কিছুক্ষণ সময় কেটে যায়। ঠিক যেমনটা হয়েছিল গত শনিবার। হাওড়ার বেলিলিয়াস রোডের একটি কলেজে পুকুরে ডুবে যাওয়া এক ছাত্রকে তিন ঘণ্টা পরে উদ্ধার করেছিলেন দমকল কর্মীরা। হাওড়া সিটি পুলিশের প্রাক্তন এক কর্তা বলেন, ‘‘অনেক সময়েই বেসরকারি ভাড়াটে ডুবুরি এনে উদ্ধারকাজ চালাতে হয় হাওড়ায়। কারণ কলকাতা ও ব্যারাকপুর ছাড়া কোথাও পুলিশের প্রশিক্ষিত কোনও ডুবুরি নেই।’’
রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের মন্ত্রী জাভেদ খান বলেন, ‘‘কলকাতা পুলিশের যে দল রয়েছে সেখান থেকেই হাওড়া-সহ আশপাশে ডুবুরি যায়। কিন্তু আরও তাড়াতাড়ি পরিষেবা দেওয়ার জন্য প্রতিটি জেলার জেলাশাসকের অধীনে ডুবুরি দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। পুলিশও তাঁদের ব্যবহার করতে পারবে।’’ তিনি আরও জানান, হাওড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন জেলাতেই পুলিশ ও প্রশাসনের তরফে ডুবুরির আবেদন এসেছে। কয়েকটি জায়গায় তা দেওয়াও হয়েছে।
কিন্তু হাওড়া সিটি পুলিশ পূর্বের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে আর দেরি করতে চায় না। তাই শনিবারের ঘটনার পরেই তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ভাল সাঁতার জানা সিভিক ভলান্টিয়ারদেরই ডুবুরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। পাশাপাশি, পুলিশ যাতে দ্রুত উদ্ধারকাজ শুরু করতে পারে, তাই রাজ্য সরকারের কাছে হাওড়া সিটি পুলিশের তরফে আবার বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী তৈরির আবেদন জানানো হবে। পুলিশ কমিশনার দেবেন্দ্রপ্রকাশ সিংহ বলেন, ‘‘এটা ঠিকই যে আমাদের প্রশিক্ষিত ডুবুরি প্রয়োজন। এ জন্য আগে আবেদনও করা হয়েছিল। তবে আপাতত ঠিক হয়েছে আমাদের সিভিক ভলান্টিয়ারদের মধ্যে যে কয়েকজন দক্ষ সাঁতারু রয়েছেন, তাঁদেরই ডুবুরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।’’
পুলিশ কমিশনার জানান, মূলত বিভিন্ন পুজোর বিসর্জনের সময়ে ডুবুরি রাখার প্রয়োজন হয়। এত দিন তাই বিশেষ বিশেষ দিনে বিভিন্ন ঘাটে বেসরকারি ডুবুরিদের রাখা হত। যেমন, বালি থেকে কয়েকজনকে আনা হত ডুবুরির কাজের জন্য। এ ছাড়া, ওই সব বিশেষ দিনে সাঁতার জানা কয়েকজন সিভিক ভলান্টিয়ারকেও রাখা হয়। কিন্তু এঁরা কেউই তো প্রশিক্ষিত নন?
পুলিশ কমিশনারের দাবি, ‘‘বিশেষ কোনও দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে, বিশেষত হাওড়ার দিকে গঙ্গায় কেউ ডুবে গেলে কলকাতা পুলিশের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কাছে প্রশিক্ষিত ডুবুরি পাঠানোর আবেদন করা হয়। কিন্তু পুকুর বা নদীতে ডুবে যাওয়া মানুষকে উদ্ধারের ক্ষেত্রে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়ার মতো পরিকাঠামো আমাদের নেই।’’
হাওড়া সিটি পুলিশের এক কর্তার মতে, একটি বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর মধ্যে মূলত কয়েকজন প্রশিক্ষিত ডুবুরি রাখা হয়। সেই বাহিনী হাওড়া সিটি পুলিশের নেই। তা ছাড়া, বাহিনীতে পুলিশের সংখ্যাও কম রয়েছে। এত অর্থবলও নেই। ওই কর্তা আরও বলেন, ‘‘প্রশিক্ষিত ডুবুরির পাশাপাশি বাহিনীতে প্রয়োজন আধুনিক যন্ত্রপাতিও। যেগুলির দামও অনেক। অত টাকা হাওড়া সিটি পুলিশের নেই। তাই আমরা ফের বাহিনীর জন্য ডুবুরির আবেদন জানাচ্ছি রাজ্য সরকারের কাছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy