E-Paper

দৃষ্টির বাধা পেরিয়ে আলোয় পাঁচ কৃতী পড়ুয়া

স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, টাউন হাইস্কুল থেকে ওই পাঁচ দৃষ্টিহীন-সহ এ বার মোট ২২ জন মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেছে। তাদের মধ্যে পাশ করেছে ১৪ জন।

অরিন্দম সাহা

শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০২৪ ০৮:৩৬
কোচবিহার টাউন হাইস্কুলে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে  শঙ্কর দেবসিংহ।

কোচবিহার টাউন হাইস্কুলে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে  শঙ্কর দেবসিংহ। নিজস্ব চিত্র।

দু’চোখে আঁধার। তাতে কী! অদম্য ইচ্ছে আর পড়াশোনার প্রতি টান— এই দুইয়ের জেরে এ বারের মাধ্যমিক পরীক্ষায় সাফল্যের আলো মাখল ওরা পাঁচ জন। কোচবিহার শহরের টাউন হাইস্কুলের দৃষ্টিহীন পাঁচ পরীক্ষার্থীর সকলেই এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। স্কুলের সামগ্রিক ফলাফলেও সর্ব্বোচ নম্বর পেয়েছে তাদেরই এক জন, শঙ্কর দেবসিংহ। দৃষ্টিহীন বাকি চার সফল পরীক্ষার্থীর মধ্যে রয়েছে বিমল বর্মণ, ঋতুরাজ খালকো, মনোজ বর্মণ, পরভিন এক্কা। যাদের প্রত্যেকেরই ওঠা-বসা দারিদ্রের সঙ্গে। পাঁচ দৃষ্টিহীন পরীক্ষার্থীর সাফল্যে খুশি স্কুলের শিক্ষকেরা।

কোচবিহার টাউন হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক লিটন দাস বলেন, ‘‘স্কুলের পাঁচ দৃষ্টিহীন পরীক্ষার্থীর প্রত্যেকেই উত্তীর্ণ হয়েছে। ওদের এমন সাফল্যে আমরা খুশি। প্রত্যেকেই পড়াশোনার ব্যাপারে ভীষণ উৎসাহী, নিজেদের মতো করে পরিশ্রম করেছে।’’

স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, টাউন হাইস্কুল থেকে ওই পাঁচ দৃষ্টিহীন-সহ এ বার মোট ২২ জন মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেছে। তাদের মধ্যে পাশ করেছে ১৪ জন। স্কুলে সর্ব্বোচ নম্বর পেয়েছে শঙ্কর (৪১০)। বাকি দৃষ্টিহীন সফল পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ঋতুরাজ খালকো ৩৭৯, মনোজ বর্মণ ৩৪৫ বিমল বর্মণ ২৯৬, পরভিন এক্কা ২৮৯ পেয়েছে। এক সময়ে সকলেই কোচবিহারের দৃষ্টিহীন বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছে। নবম শ্রেণি থেকেই তারা টাউন হাইস্কুলে ভর্তি হয়। ‘রাইটার’ নিয়ে এ বারের মাধ্যমিকে বসেছিল এই ছাত্রেরা।

স্কুলে সর্ব্বোচ নম্বর প্রাপক শঙ্কর দেবসিংহের বাড়ি মাথাভাঙা মহকুমার নিশিগঞ্জে। বাবা পরেশ দেবসিংহ পেশায় কাঠমিস্ত্রি। মা মিলনদেবী গৃহবধূ। আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য তেমন নেই। পরেশ বলেন, ‘‘আর্থিক সমস্যা তো আছেই, তার মধ্যেও ছেলের পড়াশোনার জন্য যতটা পারছি, করার চেষ্টা করছি। জানি না কত দিন সে ভাবে পারব!’’ শঙ্করের কথায়, ‘‘গৃহশিক্ষক বলে কিছু ছিল না। চেষ্টা করেছি নিজের মতো করে। আর একটু বেশি নম্বর আশা করেছিলাম। ভবিষ্যতে শিক্ষক হতে চাই। পরিবারের পাশে দাঁড়ানোই লক্ষ্য।’’ পড়াশোনার পাশাপাশি, সঙ্গীতের চর্চা করে সে।

মাধ্যমিকে সফল আর এক দৃষ্টিহীন ছাত্র বিমল বর্মণের বাড়ি দিনহাটার নয়ারহাট এলাকায়। কোচবিহার শহরে দৃষ্টিহীন বিদ্যালয়ের হস্টেলে থেকে ছোটবেলা থেকে পড়াশোনা করছে। সে-ও ভবিষ্যতে শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখে। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, মনোজের বাড়ি মেখলিগঞ্জের ভোটবাড়ি এলাকায়, পরভিন আলিপুরদুয়ার জেলার কুমারগ্রাম ও ঋতুরাজ জলপাইগুড়ির বীরপাড়া এলাকার বাসিন্দা। স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘প্রত্যেকের পরিবারেই কম-বেশি আর্থিক সমস্যা রয়েছে। তবে মনের জোর, ইচ্ছেশক্তি থাকলে কোনও বাধাই সাফল্যের লক্ষ্যপূরণে প্রতিবন্ধকতা হতে পারে না।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

madhyamik exam

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy