Advertisement
১১ জুন ২০২৪

ডেঙ্গির এলাইজা পরীক্ষার যন্ত্রই নেই রেল হাসপাতালে

রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশিকায় বলা রয়েছে এলাইজা পদ্ধতিতেই নির্ধারণ করতে হবে ডেঙ্গি। সেই মতো রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে ওই পদ্ধতিতেই চলছে চিকিৎসা।

মশার লার্ভার খোঁজে পুর-কর্তা ও কর্মীরা। মঙ্গলবার। — নিজস্ব চিত্র

মশার লার্ভার খোঁজে পুর-কর্তা ও কর্মীরা। মঙ্গলবার। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৬ ০৩:২২
Share: Save:

রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশিকায় বলা রয়েছে এলাইজা পদ্ধতিতেই নির্ধারণ করতে হবে ডেঙ্গি। সেই মতো রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে ওই পদ্ধতিতেই চলছে চিকিৎসা। কিন্তু পূর্ব রেলের এক হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে পুরসভার স্বাস্থ্য-কর্তারা জানতে পারলেন, সেখানে এলাইজা পদ্ধতিতে ডেঙ্গি পরীক্ষার কোনও যন্ত্রই নেই!
মঙ্গলবার হাওড়া পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) ভাস্কর ভট্টাচার্য, স্থানীয় কাউন্সিলর-সহ চিকিৎসক ও পুরকর্মীদের একটি দল লিলুয়ার রেল হাসপাতালে যান। হাসপাতালের তরফে জানানো হয়, ডেঙ্গিতে আক্রান্ত দু’জন সেখানে ভর্তি রয়েছেন। মেয়র পারিষদ হাসপাতালের সুপার তাপস মজুমদারের কাছে জানতে চান, কি পদ্ধতিতে ডেঙ্গি পরীক্ষা করা হচ্ছে। র‌্যাপিড পরীক্ষার মাধ্যমে ডেঙ্গি নির্ধারণ হওয়ার কথা শুনে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ভাস্করবাবু। তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্রের নির্দেশিকাতেও স্পষ্ট বলা রয়েছে এলাইজা পদ্ধতিতেই ডেঙ্গি নির্ধারণ করতে হবে। তার পরেও কী ভাবে রেলের হাসপাতালে সেই নিয়ম মানা হচ্ছে না? ব্যবস্থা না থাকলে রোগীদের হাওড়া জেলা হাসপাতালে পাঠাতে হবে।’’ পাশাপাশি, অন্য হাসপাতালের মতো প্রতিদিন ডেঙ্গি রোগীর চিকিৎসা সংক্রান্ত তথ্য রেলের তরফে পুরসভাকে পাঠানোর জন্য বলেন পুর-কর্তারা। তাপসবাবু অবশ্য বলেন, ‘‘আমাদের অন্য হাসপাতালে এলাইজা পদ্ধতিতে ডেঙ্গি পরীক্ষার যন্ত্র রয়েছে। প্রয়োজনে রোগীদের সেখানে পাঠানো হচ্ছে। তবে হাওড়া জেলা হাসপাতালে মেশিন খারাপ ছিল বলেই জানতাম। তাই সেখানে রোগী পাঠাতে পারিনি।’’ যদিও পুর-কর্তারা দাবি করেন, হাওড়া জেলা হাসপাতালের একটি মেশিন খারাপ থাকলেও দিন কুড়ি আগেই তা ঠিক হয়ে গিয়েছে। তাপসবাবু বলেন, ‘‘হাওড়া জেলা হাসপাতাল থেকে জানানো হয়েছে, সেখানে রোগী পাঠানোর জন্য স্বাস্থ্য দফতরের অনুমতি নিতে হবে। সেটাই এখন দেখা হচ্ছে।’’
ওই রেল হাসপাতালের পিছনের দিকে বিভিন্ন জায়গায় জমা জলে এডিস মশার লার্ভা মিলেছে বলে জানান ভাস্করবাবু। পাশাপাশি, গোটা রেল কলোনি এলাকা পুরসভার ৬০ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে হলেও সেখানে যাবতীয় পরিষেবা দেয় রেল। তাতেও বিভিন্ন ঘাটতি রয়েছে বলেই অভিযোগ পুর-কর্তাদের। স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর কৈলাস মিশ্র বলেন, ‘‘রেল কলোনিতে অনেকের ডেঙ্গি হয়েছে বলে শুনেছি। রেলের তরফে আমাদের পরিস্থিতি জানানো হলে নিকাশি-সহ অন্যান্য পরিষেবা দেওয়া যায়। কিন্তু রেলের হাসপাতাল বা ওয়ার্কশপে ঢোকার জন্য অনুমতি নিতে হয়। তাই পুরসভার তরফে কাজে অসুবিধা হয়।’’ যদিও তাপসবাবু দাবি করেছেন, গোটা রেল কলোনিতেই ব্লিচিং, মশার তেল ছড়ানো হচ্ছে।
এ দিন ওই রেল কলোনির মধ্যে থাকা বেলুড় থানাতেও অভিযান চালান পুর-স্বাস্থ্যকর্মীরা। সেখানেও পরিত্যক্ত গাড়ি, টব, মাঠে জমে থাকা জল থেকে মশার লার্ভা উদ্ধার হয়। ভাস্করবাবু বলেন, ‘‘এর আগেও এই থানায় অভিযান চালানো হয়েছিল। আবার এসে লার্ভা পাওয়া গেল। প্রতিটি থানায় পড়ে থাকা গাড়ির বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশ কমিশনারকে বলেছি।’’ অন্য দিকে, ঘুসুড়ির টি এল জায়সবাল হাসপাতালে গিয়ে ডেঙ্গি ও ম্যালেরিয়া দুই রোগেরই মশার লার্ভা উদ্ধার করেন পুরকর্মীরা। নিকাশির সমস্যার জন্য গোটা হাসপাতাল চত্বরেই জল জমে রয়েছে, তা ডিঙিয়েই চলেফেরা করতে হচ্ছে সকলকে।
এ দিন হাসপাতাল চত্বরে অভিযান চালানোর সময়ে পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মীরা দেখেন ন্যায্যমূল্যের ওষুধের দোকানের সামনে রোগীদের বসার জায়গা, ছোট বাগান-সহ বেশ কিছু জায়গায় জল জমে রয়েছে। সেখানে পরিত্যক্ত বোতল, চায়ের ভাঁড়, গাছের কোটরে জমে থাকা জলে গিজগিজ করছে দু’ধরনের মশার লার্ভা। সমস্ত জায়গায় মশা মারার তেল ছড়ানো হয়। কৈলাসবাবু বলেন, ‘‘হাসপাতাল পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব আমাদের নয়। তা-ও মাঝেমধ্যেই এখানে তেল, ধোঁয়া ছড়ানো হয়। তবে হাসপাতালের তরফে যদি আরও কিছু পরিষেবা দরকার হয়, তা জানালে নিশ্চয় সহযোগিতা করব।’’ জায়সবাল হাসপাতালের সুপার সুখেন্দু বিশ্বাস অবশ্য বলেন, ‘‘নিয়মিত হাসপাতাল সাফাই করা হয়। লাগাতার বৃষ্টিতে জল জমেই সমস্যা হয়েছে। পুরসভা বিষয়টি জানিয়েছে। আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

dengue
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE