Advertisement
০৫ মে ২০২৪

খাদ্যসাথী শিবিরেও এনআরসি আতঙ্ক

বৃহস্পতিবার সকাল ৭টাতেই রেশন কার্ড নিয়ে লাইন দিয়েছিলেন ব্লক অফিসে। দু’ঘণ্টা লাইনে দাঁড়ানোর পরে তাঁর কার্ড ঠিক আছে জানতে পেরে স্বস্তি পেলেন।

আশঙ্কা: রেশন কার্ড সংশোধনের লাইন পান্ডুয়া ব্লক অফিসে। ছবি: সুশান্ত সরকার

আশঙ্কা: রেশন কার্ড সংশোধনের লাইন পান্ডুয়া ব্লক অফিসে। ছবি: সুশান্ত সরকার

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়, সুশান্ত সরকার
পান্ডুয়া শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০০:০৮
Share: Save:

আতঙ্কের নাম জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি)। হুগলিতে খাদ্যসাথী প্রকল্পের বিশেষ শিবিরেও তার গাঢ় ছায়া পড়েছে। রেশন কার্ডের ভুলভ্রান্তি সংশোধনের লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে গ্রাহকের সংশয়, শেষ পর্যন্ত এখানে থাকতে পারবেন তো!

পান্ডুয়ার খতিব মহল্লার বৃদ্ধ শেখ আনোয়ার মোল্লার কথাই ধরা যাক। বৃহস্পতিবার সকাল ৭টাতেই রেশন কার্ড নিয়ে লাইন দিয়েছিলেন ব্লক অফিসে। দু’ঘণ্টা লাইনে দাঁড়ানোর পরে তাঁর কার্ড ঠিক আছে জানতে পেরে স্বস্তি পেলেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমি দেশ ছাড়ার ভয়ে এসেছি।’’ স্বস্তি পেয়েছেন ওই ব্লকের থৈপাড়ার বৃদ্ধ মহম্মদ ইসলামও। পাঁচ ঘণ্টা ব্লক অফিসের লাইনে দাঁড়িয়ে তিনিও জানতে পারেন, রেশন কার্ড ঠিক আছে। তাঁর কথায়, ‘‘মনে হয় এ দেশে থাকতে পারব।’’

রাজ্য সরকারের নির্দেশে চলতি মাসের ৯ তারিখ থেকে হুগলির সব ব্লকে খাদ্যসাথী প্রকল্পে রেশন কার্ড তৈরির জন্য বিশেষ শিবির চলছে। শিবিরে রেশন কার্ডের ভুলভ্রান্তি সংশোধনেরও সুযোগ রয়েছে ব্লক আধিকারিকেরা জানান। শিবির চলবে ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু এতে বিভ্রান্ত হয়েছেন অনেকেই। তাঁরা মনে করছেন, এর সঙ্গে এনআরসি-র যোগ রয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ইতিমধ্যে একাধিকবার জানিয়েছেন, অসমের মতোই দেশের সর্বত্র এনআরসি চালু হবে। এতেই যেন মানুষের আতঙ্ক আরও চেপে বসেছে।

পান্ডুয়ার ক্ষেত্রে রেশন কার্ডের লাইনে সেই আতঙ্কের পিছনে প্রচারে ঘাটতির কথা মানছেন পান্ডুয়া পঞ্চায়ত সমিতির সহ-সভাপতি সঞ্জয় ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘রেশন কার্ডে সংশোধনের ১৮ দিনের একটি কর্মসূচি চলছে। তবে আরও প্রচার করলে ভাল হতো। সাধারন মানুষ সচেতন হতেন।’’ বিডিও স্বাতী চক্রবর্তী বলেন, ‘‘মাইকে প্রচার করা হয়েছে। খাদ্যসাথীর শিবিরের সঙ্গে এনআরসি মিশে যে জল্পনা চলছে, তা ভিত্তিহীন।’’

বিভ্রান্তি যে একটা ছড়িয়েছে তা মানছেন হুগলির জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও-ও। তিনি জানিয়েছেন, এই বিভ্রান্তি কাটাতে আজ, শুক্রবার সব রাজনৈতিক দলগুলিকে বৈঠকে ডাকা হয়েছে। যাতে তাদের নেতাকর্মীরা ব্লক স্তরে গিয়ে সাধারণ মানুষকে বোঝাতে পারেন যে রেশন কার্ড তৈরির সঙ্গে এনআরসি-র সম্পর্ক নেই। জেলাশাসক বলেন, ‘‘অ্যাপের মাধ্যমে অনলাইনে ভোটার তথ্য যাচাইয়ের কাজ কী ভাবে হবে, তা সরকারি কর্মীরা সাধারণ মানুষকে বুঝিয়ে দেবেন। এ ব্যাপারে শীঘ্রই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।’’

পান্ডুয়ার মতো না হলেও আতঙ্কের পরিবেশ জাঙ্গিপাড়াতেও। বিশেষ করে এই ব্লকের সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এবং আদিবাসী প্রধান গ্রামগুলিতে। ব্লক তৃণমূল সভাপতি তমাল চন্দ বলেন, ‘‘বেশিরভাগ মানুষ রেশন কার্ডের ভুল সংশোধনের জন্য আসছেন। নানা প্রশ্ন করছেন আমাদের। আমরা বোঝাচ্ছি, সংশোধনটাই জরুরি। কাউকে গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে হবে না। কিন্তু গ্রামবাসীদের প্রশ্ন থেকেই আমরা টের পাচ্ছি, তাঁরা ভয়ে রয়েছেন।’’

আরামবাগ ব্লকের চিত্রটা কিছুটা ভিন্ন। নাগরিক পঞ্জি নিয়ে চর্চা আর গুজবে প্রশাসনে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। জমির দলিল ঠিক করতে ব্লক ভূমি দফতরেও ভিড় হচ্ছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে ব্লক ভূমি দফতরে ঘুরঘুর করছিলেন প্রৌঢ় শেখ হসমত। তিনি বলেন, “জমির যাবতীয় কাগজপত্র তুলে রাখতে এসেছি। অসমের মতো এখানেও না একই অবস্থা হয়! এনআরসি ঠিক কী, ভাল বুঝিনি। তবে লোকমুখে শুনে খুব ভয়ে আছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

NRC Ration Card Khadya Sathi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE