Advertisement
০২ মে ২০২৪

জীর্ণ বাড়ি দেখাল দুই কাউন্সিলরের দু’রকম চেহারা

এ দিন সকাল সওয়া ৯টা নাগাদ বেলুড়ের ৮/১ কে পি কুমার স্ট্রিটের বহু পুরনো একটি মন্দিরের দালান হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে। ওই পরিত্যক্ত মন্দির লাগোয়াই রয়েছে একটি স্কুল, বাড়ি ও এলাকার গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। খবর পেয়েই ৫৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সেখানে চলে আসেন

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শান্তনু ঘোষ
শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৭ ০৩:১৬
Share: Save:

রাত থেকে শুরু হওয়া অঝোর বৃষ্টিতে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়েছিল পাশাপাশি দুই ওয়ার্ডের পরিত্যক্ত দু’টি বাড়ি। আর সেই ঘটনাই দেখিয়ে দিল দুই ওয়ার্ডের দু’জন পুর-প্রতিনিধির কাজে সদিচ্ছা আর অনিচ্ছার ফারাক। পরে অবশ্য পুরসভার বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর কর্মীরা এসে দু’টি বাড়িরই বিপজ্জনক অংশ ভেঙে ফেলেন।

এলাকাবাসী জানান, এক কাউন্সিলর ঘটনার পরে নিজে উদ্যোগী হয়ে পুরো কাজের তদারকি করেছেন। অন্য জন কাউন্সিলরকে ঘটনার খবর জানাতে গিয়ে বাসিন্দাদের কপালেই দুর্ব্যবহার জুটেছে বলে অভিযোগ। ওই বাসিন্দাদের দাবি, কাউন্সিলর তাঁদের বলেন, তিনি মিস্ত্রি নন। তাই হাতুড়ি নিয়ে বাড়ি ভাঙতে যেতে পারবেন না। রাতে কাউন্সিলর অফিসে দেখা করতে বলে দায় সারেন তিনি।

এঁরা দু’জনেই হাওড়া পুরসভার তৃণমূল কাউন্সিলর। কাজের তদারকি করতে দেখা গিয়েছে বেলুড়ের ৫৫ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাণকৃষ্ণ মজুমদারকে। আর নিজের দায় এড়ানোর অভিযোগ উঠেছে বালির ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের সুমনা মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে।

এ দিন সকাল সওয়া ৯টা নাগাদ বেলুড়ের ৮/১ কে পি কুমার স্ট্রিটের বহু পুরনো একটি মন্দিরের দালান হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে। ওই পরিত্যক্ত মন্দির লাগোয়াই রয়েছে একটি স্কুল, বাড়ি ও এলাকার গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। খবর পেয়েই ৫৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সেখানে চলে আসেন। আসে বালি থানার পুলিশ ও দমকলও। কাউন্সিলর পুরসভার সঙ্গে যোগাযোগ করে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীদের এনে মন্দিরটির বাকি বিপজ্জনক অংশও ভাঙতে বলেন। তিনি বলেন, ‘‘মন্দিরটি নিয়ে শরিকি বিবাদ রয়েছে। সেটা আমার বিষয় নয়। কিন্তু বিপজ্জনক অংশ ভেঙে দিয়ে বাসিন্দাদের নিরাপত্তা দেওয়াটা কর্তব্য বলেই দাঁড়িয়ে থেকে গোটা কাজটা করালাম।’’

এর উল্টো চিত্র বালির কৈলাস ব্যানার্জি লেনে। ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের ওই এলাকায় দীর্ঘ দিন ধরেই একটি পরিত্যক্ত বাড়ি রয়েছে। এ দিন সকালে ১৩/বি কৈলাস ব্যানার্জি লেনের দোতলা ওই বাড়ির কিছুটা অংশ ভেঙে পাশের বাড়িতে পড়ে। তার পরেই সেই বাড়ির বাসিন্দা অনুপ বসু স্থানীয় কাউন্সিলর সুমনাদেবীর বাড়িতে বিষয়টি জানাতে যান। তাঁর বক্তব্য, ‘‘থানা থেকেই কাউন্সিলরকে জানাতে বলেছিল। তাই গিয়েছিলাম। কিন্তু উনি তো বাড়িতে ঢুকতেই দিলেন না!’’

সুমনাদেবী বলেন, ‘‘ব্যক্তিগত বাড়ির ক্ষেত্রে কোনও ব্যবস্থা নেওয়ার এক্তিয়ার আমার নেই। কোথাও বিপজ্জনক অংশ ভাঙতে গেলে মালিক তো আমার বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন।’’ যদিও এ দিন ওই বাড়িটির ভাঙা অংশ দেখতে প্রাণকৃষ্ণবাবু ও ৫৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বলরাম ভট্টাচার্য এলেও স্থানীয় কাউন্সিলর এক বারও আসেননি। বা়ড়িটি ভাঙতে গিয়ে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের এক কর্মীও জখম হন।

সুমনাদেবীর সাফাই, ‘‘আমি অন্য ওয়ার্ডের বাসিন্দা। তাই সম্পত্তি সংক্রান্ত বিষয়-সহ ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের অনেক কিছুই এখনও অজানা। প্রাণকৃষ্ণবাবুই আমার ওয়ার্ডের ওই বিষয়গুলি দেখেন।’’ তিনি আরও দাবি করেন, ওয়ার্ডের একটি পুরনো গ্রন্থাগারকে জায়গা পাইয়ে দেওয়ার জন্য তিনি সমস্ত পুরনো বাড়িগুলি সম্পর্কে খোঁজ নিয়েছেন। তাতে এই বাড়িটির মালিকানা সংক্রান্ত সমস্যাটিও উনি জানেন। তাই এগোতে সাহস পাননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rain Building Collapse হাওড়া
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE