Advertisement
E-Paper

সাহায্যে এগিয়ে এলেন  তৈবুররা

ভোরের আলো তখনও ভাল করে ফোটেনি। রাস্তা থেকে হঠাৎ ভেসে এল বিকট আওয়াজ। তারপরেই বহু মানুষের আর্তনাদ, মহিলাদের কান্না।

সুব্রত জানা

শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০১৯ ০৫:২৯
দুর্ঘটনাগ্রস্তদের খাবার দিচ্ছেন স্থানীয়রা। নিজস্ব চিত্র

দুর্ঘটনাগ্রস্তদের খাবার দিচ্ছেন স্থানীয়রা। নিজস্ব চিত্র

ভোরের আলো তখনও ভাল করে ফোটেনি। রাস্তা থেকে হঠাৎ ভেসে এল বিকট আওয়াজ। তারপরেই বহু মানুষের আর্তনাদ, মহিলাদের কান্না।

আর ঘরে থাকতে পারেননি তৈবুর, সাহারাত, জালালউদ্দিনরা। বেরিয়ে দেখেন, রাস্তায় রক্তাক্ত অবস্থায় ছটফট করছেন গঙ্গাসাগরগামী একটি বাসের কয়েকজন যাত্রী। দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে বাসটি। আর দেরি করেননি তৈবুররা। পাড়া-পড়শিদের ডেকে জখম ছ’জনকে হাসপাতালে পাঠিয়েছেন। বাসযাত্রীদের জল, খাবারের ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু বাঁচাতে পারেননি এক যাত্রীকে।

শনিবার হাওড়ার বাগনানের চন্দ্রপুরে ৬ নম্বর জাতীয় সড়কে উত্তরপ্রদেশ থেকে আসা ওই বাসটি একটি ডাম্পারের পিছনে ধাক্কা মারে। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম ত্রিভুবনলাল বর্মা (৫৫)। তাঁর বাড়ি উত্তরপ্রদেশের ভৈসহাতে। তিনি দলটির ‘গাইড’ ছিলেন। আহত তিন মহিলা-সহ পাঁচ জনকে উলুবেড়িয়া হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। ত্রিভুবন ছাড়া বাসটির বাকি যাত্রীরা উত্তরপ্রদেশেরই লখিমপুরের একটি গ্রামের বাসিন্দা।

ভিন্ রাজ্যে এসে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে এ ভাবে অচেনা কিছু মানুষের সাহায্যে অভিভূত ওই সাগরযাত্রীরা। তাঁদের মধ্যে কামনাথ বলেন, ‘‘দুর্ঘটনায় খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু যে সাহায্য পেলাম, তা ভোলার নয়। ওই ভাইদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।’’ রাকিন্দর প্রসাদ নামে আর এক যাত্রীও বলেন, ‘‘ওই যুবকেরা সঙ্গে সঙ্গে না-এলে সমস্যা বাড়ত।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ৬০ জন গ্রামবাসীকে নিয়ে ওই বাসটি ৩০ ডিসেম্বর রওনা হয়। পুরী হয়ে বাসটি আসছিল। দক্ষিণেশ্বর, বাবুঘাট হয়ে বাসটির গঙ্গাসাগর যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চন্দ্রপুরে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। চন্দ্রপুর এলাকাটি সংখ্যালঘু অধ্যুষিত। দুর্ঘটনার আওয়াজ পেতেই শেখ তৈবুর রহমান, শেখ সাহারাত আলি, শেখ জালালউদ্দিনরা বেরিয়ে এসে আর সময় নষ্ট করেননি। পুলিশের সঙ্গে উদ্ধারকাজে নেমে পড়েন। যাত্রীদের জন্য ভাত-ডাল-তরকারি এবং বিশ্রামেরও ব্যবস্থা করেন

ওই যুবকেরা।

তৈবুর বলেন, ‘‘রাস্তার পাশেই আমার বাড়ি। তখনও ঘুম ভাঙেনি। ওই আওয়াজ আর কান্না শুনে মনে হয়েছিল বড় কোনও দুর্ঘটনা ঘটেছে। গিয়ে দেখি, সকলেই সাগরযাত্রী। ওঁদের সাহায্য করা আমাদের কর্তব্য ছিল।’’ সাহারাত বলেন, ‘‘মানুষ বিপদে পড়েছেন। সাহায্য করব না!’’

দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আসেন বাগনানের বিধায়ক অরুণাভ সেনও। তিনি তৈবুরদের উদ্যোগের প্রশংসা করেন। বিকেলের দিকে পুলিশ প্রশাসনের কর্তারা অন্য বাসের ব্যবস্থা করে ওই যাত্রীদের গঙ্গাসাগর পাঠান। হাওড়া (গ্রামীণ) জেলা পুলিশ সুপার গৌরব শর্মা জানান, মৃতের দেহ তাঁর বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

Death Accident Injury Bus Gangasagar Mela
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy