নিয়ম-ভেঙে: নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ট্রেকারের ছাদে যাত্রী পরিবহণ উলুবেড়িয়ায়। ছবি: সুব্রত জানা।
পথ দুর্ঘটনা রুখতে পুলিশের যাবতীয় নজরদারি যেন শুধু নিয়ম না-মানা মোটরবাইক আরোহীদের দিকে! অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে উলুবেড়িয়া মহকুমার নানা প্রান্তে ছুটছে অটো, ট্রেকার, ভ্যানো বা অন্য যাত্রিবাহী ছোট গাড়ি। চলছে রেষারেষি। দুর্ঘটনায় মানুষ হতাহতও হচ্ছেন। কিন্তু এ সব রুখতে পুলিশ এখনও উদাসীন বলে অভিযোগ তুলেছেন সাধারণ যাত্রীরা। একই সঙ্গে তাঁদের প্রশ্ন, ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইভ’ কর্মসূচি কি শুধু মোটরবাইকের জন্য?
পুলিশের পরিসংখ্যানই বলছে, গত ১০ দিনে শ্যামপুর, উলুবেড়িয়া এবং পাঁচলায় পাঁচটি পৃথক অটো দুর্ঘটনায় তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হন অন্তত ১৫ জন। ট্রেকার, ছোট গাড়ি বা ভ্যানো দুর্ঘটনাও কম নয়। এই তিন ধরনের যানে গত এক মাসে বিভিন্ন দুর্ঘটনায় জয়পুরে মারা গিয়েছেন চার জন, উদয়নারায়ণপুরে দু’জন এবং জগৎবল্লভপুরে পাঁচ জন। এত দুর্ঘটনার কারণ যে অতিরিক্ত যাত্রী বহন বা রেষারেষি, তা-ও উঠে এসেছে পুলিশি তদন্তে। ট্রেকার ছাড়া বেশির ভাগ গাড়িরই যে লাইসেন্স নেই তা-ও জানিয়েছে পুলিশ।
তা হলে পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন?
জেলা পুলিশকর্তাদের একাংশ দায় চাপিয়েছেন জেলা পরিবহণ দফতরের উপরে। ওই পুলিশকর্তাদের দাবি, বেআইনি অটো, ট্রেকার এবং ভ্যানো ধরার দায়িত্ব জেলা পরিবহণ দফতরেরও। পুলিশের পাশাপাশি জেলা পরিবহণ দফতরেরও এ বিষয়ে উদ্যোগী হওয়া দরকার। সেই কারণে ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ পুরোপুরি সফল হচ্ছে না। একই সঙ্গে জেলা পুলিশকর্তারা স্বীকার করেছেন, তাঁরা বেআইনি ভাবে মোটরবাইক চলাচল রুখতেই গুরুত্ব দিয়েছেন। তার ফলে বাইক দুর্ঘটনা এবং সেই কারণে মৃত্যুর হার কমেছে।
জেলা পরিবহণ দফতরের কর্তাদের অবশ্য দাবি, তাঁরা বেআইনি যান চলাচল রুখতে নিয়মিত অভিযান চালান। জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ অধিকর্তা পার্থ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘লোকাভাবের জন্য আমরা সর্বত্র অভিযান চালাতে পারি না। অনেক সময় আমাদের অভিযান চালানোর খবর আগেভাগে পেয়ে চালকেরা গাড়ি নিয়ে
পালিয়ে যান।’’
জেলা পুলিশ সূত্রে খবর, পাঁচলা, ডোমজুড়, জগৎবল্লভপুর, আমতা, বাগনান, শ্যামপুর প্রভৃতি এলাকায় বিভিন্ন রুটে অটো চলে। সিংহভাগেরই লাইসেন্স নেই। বহন ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী নেয় অটোগুলি। পরস্পরের সঙ্গে রেষারেষি করতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটায়। গত শুক্রবার রাতে উলুবেড়িয়া-পানপুর মোড় রুটের একটি অটোতে উঠেছিলেন সন্দীপ দেয়াশী নামে এক যুবক। মল্লিকপোলের কাছে একটি বালি বোঝাই লরিতে ধাক্কা মারে অটোটি। গুরুতর আহত হন সন্দীপ। তিনি বলেন, ‘‘চালককে বারণ করা সত্ত্বেও তিনি খুব জোরে অটো চালাচ্ছিলেন। আর একটি অটোকে ওভারটেক করে সেটি লরির মুখে পড়ে যায়।’’
অনেকটা একই অভিজ্ঞতা দুর্ঘটনাগ্রস্ত অন্য অটো বা ভ্যানো-ট্রেকারের যাত্রীদেরও। এক যাত্রীর কথায়, ‘‘পুলিশ উদাসীন। তাই আইনকে বুড়ো আঙুল দেখানো সহজ ওই সব গাড়ির চালকদের। এ ভাবে নিয়ম না-মেনে গাড়ি চালানো বন্ধ হোক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy