Advertisement
০৬ মে ২০২৪

শিলান্যাস তিন বার, সেতুর প্রকল্প রচনা সেই তিমিরেই

শুধু শিলান্যাসই হয়েছে বার তিনেক। প্রকল্প রচনা (ডিপিআর) হয়েছে বার দুয়েক। কিন্তু তা কাজে আসেনি। এত দিনে গ্রামবাসীদের প্রাপ্তি, ঘাটমাঝির উদ্যোগে তৈরি বাঁশের সাঁকো। সরকারি ভাবে ঘোষণার ন’বছর পরেও হাওড়ার ‘দ্বীপাঞ্চল’ হিসেবে পরিচিত আমতা-২ ব্লকের ভাটোরা এবং ঘোড়াবেড়িয়া-চিৎনান এলাকায় মুণ্ডেশ্বরীর উপরে কুলিয়া সেতু নির্মাণ এখনও সেই তিমিরেই।

এই বিপজ্জনক সাঁকো দিয়েই নিত্য পারাপার। ছবি: সুব্রত জানা।

এই বিপজ্জনক সাঁকো দিয়েই নিত্য পারাপার। ছবি: সুব্রত জানা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
জয়পুর শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৫ ০১:৩৩
Share: Save:

শুধু শিলান্যাসই হয়েছে বার তিনেক।

প্রকল্প রচনা (ডিপিআর) হয়েছে বার দুয়েক। কিন্তু তা কাজে আসেনি।

এত দিনে গ্রামবাসীদের প্রাপ্তি, ঘাটমাঝির উদ্যোগে তৈরি বাঁশের সাঁকো।

সরকারি ভাবে ঘোষণার ন’বছর পরেও হাওড়ার ‘দ্বীপাঞ্চল’ হিসেবে পরিচিত আমতা-২ ব্লকের ভাটোরা এবং ঘোড়াবেড়িয়া-চিৎনান এলাকায় মুণ্ডেশ্বরীর উপরে কুলিয়া সেতু নির্মাণ এখনও সেই তিমিরেই। এখনও কার্যকর কোনও প্রকল্প (ডিপিআর) তৈরিই করতে পারেনি জেলা পরিষদ। ফলে, বিপদের ঝুঁকি নিয়েই সাঁকো পারাপার করতে হচ্ছে গ্রামবাসীদের।

জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, আগে বার দুয়েক ডিপিআর তৈরি হলেও সেতুর জন্য বরাদ্দ যথাযথ না-হওয়ায় এগিয়ে আসেনি কোনও ঠিকাদার। শেষে তৃতীয় বারের জন্য ডিপিআর তৈরির পরিকল্পনা হয়। কিন্তু এখনও সেই কাজ শুরু হয়নি। ডিপিআর তৈরির জন্য একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ওই সংস্থা ১০ লক্ষ টাকা দাবি করেছে। কিন্তু কী ভাবে সেই টাকা মেটানো হবে তা নিয়েই সমস্যা দেখা দিয়েছে। ওই সংস্থা পুরো টাকা একবারে দাবি করছে। কিন্তু জেলা পরিষদ তা ধাপে ধাপে দিতে চাইছে। এর জেরেই থমকে রয়েছে ডিপিআর তৈরির কাজ।

জেলা পরিষদের কর্তাদের দাবি, সব টাকা দিয়ে দেওয়ার পর যদি সেই নকশা অনুমোদন না হয়, তা হলে পুরো টাকাই জলে যাবে। তাই পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের থেকে সেতুর নকশা অনুমোদনের পরেই সব টাকা ওই সংস্থাকে দেওয়া হবে। জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি অজয় ভট্টাচার্যের আশ্বাস, ‘‘দ্রুত আমরা সমস্যা মিটিয়ে সেতুর ডিপিআর তৈরি করব এবং তা পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরে পাঠাব। তারা তা অনুমোদন করলেই টেন্ডার করে অবিলম্বে কুলিয়া সেতু তৈরির কাজ শুরু হবে।’’

২০০৬ সালে রাজ্যের তৎকালীন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত কুলিয়া সেতু তৈরির জন্য ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এর পর ২০০৭ সালে ফের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তদানীন্তন খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রী মোহান্ত চট্টোপাধ্যায়। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগেও ফের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হয়। রাজ্যে পালাবদলের পরে ক্ষমতায় এসে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সেতুর ব্যাপারে উদ্যোগী হন। কিন্তু তাঁর সরকারের পাঁচ বছরের মেয়াদ প্রায় শেষ হতে চললেও সেতু এখনও হল না।

মুণ্ডেশ্বরী ও রূপনারায়ণ নদীবেষ্টিত ঘোড়াবেড়িয়া-চিৎনান এবং ভাটোরা— এই দু’টি পঞ্চায়েতের অবস্থান কলকাতা থেকে মাত্র ৭০ কিলোমিটার দূরে। বসবাস করেন অন্তত ৫০ হাজার মানুষ। দুই পঞ্চায়েতের পশ্চিম দিকে পশ্চিম মেদিনীপুর, উত্তর দিকে হুগলি জেলা। কিন্তু দ্বীপাঞ্চল হওয়ায় এলাকার লোকেরা কার্যত বিচ্ছিন্ন থাকেন হাওড়ার মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে। সেতুর অভাবে উন্নতি হয়নি রাস্তাঘাটের। বেহাল অবস্থা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের। কেউ অসুস্থ হলে ভাগ্যের উপর নির্ভর করা ছাড়া তাঁদের উপায় থাকে না। ঙোড়াবেড়িয়া-চিৎনানের কুলিয়ায় প্রস্তাবিত সেতুটি হলে হাওড়ার পাশাপাশি পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুর এবং হুগলির খানাকুলের বহু মানুষ উপকৃত হবেন।

জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৬ সালে এই সেতুর জন্য বরাদ্দ হয়েছিল ৫ কোটি টাকা। কিন্তু বরাদ্দ কম হওয়ায় ঠিকাদাররা কাজ করতে চাননি। ফের জেলা পরিষদ ৯ কোটি ৭০ লক্ষ টাকার পরিকল্পনা জমা দেয় পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরে। কিন্তু ওই দফতর সাড়ে ৮ কোটি টাকা বরাদ্দ করে। সেই টাকায় জেলা পরিষদ কাজ করতে উদ্যোগী হয়। কিন্তু ঠিকাদার মেলেনি। ২০১৩ জেলা পরিষদে ক্ষমতা দখল করে তৃণমূল। তারা পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরকে বিষয়টি জানায়। ওই দফতর জেলা পরিষদকে ফের ডিপিআর জমা দিতে বলে। সেই কাজটাই এখনও শুরু হয়নি।

আমতার বিধায়ক কংগ্রেসের অসিত মিত্র বলেন, ‘‘বহু বার কুলিয়া সেতুর কথা বিধানসভায় তুলেছি। জেলা প্রশাসনের কাছেও গিয়েছি। কোনও কাজ হয়নি। আমরা চাই জেলা প্রশাসন উদ্যোগী হয়ে দ্রুত সেতুটি তৈরি করুক।’’

ঘোড়াবেড়িয়ার বাসিন্দা হারুন আল রসিদ বলেন, ‘‘অনেক অপেক্ষা করেছি। শুধু প্রতিশ্রুতিই পেয়েছি।’’ জেলা প্রশাসনের কাছেও গিয়েছি। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি। আমরা চাই সরকার, জেলা প্রশাসন, জেলা পরিষদ উদ্যোগী হয়ে দ্রুত সেতুটি তৈরি করুক।’’ ঘোড়াবেড়িয়ার বাসিন্দা হারুন আল রসিদ বলেন, ‘‘অনেক অপেক্ষা করেছি শুধু প্রতিশ্রুতিই পেয়েছি। দ্রুত কাজ না হলে নবান্নে ধর্নায় বসব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Foundation stone Kulia Bridge DPR
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE