প্রতীকী ছবি।
আলোর উৎসব দীপাবলি। তার সঙ্গে চলে আতসবাজি পোড়ানো আর শব্দবাজি ফাটানো। এ সবের জেরে অগ্নিদগ্ধ হওয়ার ঘটনা কম ঘটে না। কিন্তু অগ্নিদগ্ধের চিকিৎসায় কতটা তৈরি দুই জেলার সরকারি হাসপাতালগুলি?
হাওড়া ও হুগলি— দুই জেলার মাত্র চারটি সরকারি হাসপাতালে রয়েছে ‘বার্ন ওয়ার্ড’। যেখানে অগ্নিদগ্ধদের চিকিৎসা হয়। হুগলির ক্ষেত্রে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতাল ও আরামবাগ মহকুমা হাসপাতাল। হাওড়ায় জেলা হাসপাতাল এবং উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতাল। বাদবাকি সরকারি হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অগ্নিদগ্ধদের মূলত প্রাথমিক চিকিৎসা মেলে। ফলে, ওই চার হাসপাতালই ভরসা দুই জেলার গ্রামাঞ্চলের অগ্নিদগ্ধের চিকিৎসার জন্যেও। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই অবস্থা গুরুতর হলে অগ্নিদগ্ধদের কলকাতার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া ছাড়া গত্যন্তর থাকে না।
তবে, দীপাবলির আগে দুই জেলার স্বাস্থ্যকর্তাদেরই আশ্বাস, বাজির আগুনে কেউ আহত হলে তাঁর চিকিৎসার যাবতীয় ব্যবস্থা রয়েছে জেলার হাসপাতালগুলিতে। চিকিৎসকদের একাংশের বক্তব্য, বাজির আগুনে পুড়লে সাধারণত খুব বেশি ক্ষত হয় না। সে ক্ষেত্রে মহকুমা হাসপাতালের পরিকাঠামোয় ক্ষত সেরে যায়। তবে বাড়াবাড়ি হলে রোগীকে নিয়ে ছুটতে হয়। সেই কারণে অন্তত সবক’টি মহকুমা হাসপাতালে পৃথক ‘বার্ন ওয়ার্ড’ থাকা এবং গ্রামীণ হাসপাতালে এই সংক্রান্ত পরিকাঠামোর উন্নতি করা অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করেন তাঁরা।
চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে ১৬ শয্যার ‘বার্ন ওয়ার্ড’ রয়েছে। চার জন প্লাস্টিক সার্জন আছেন। চিকিৎসকদের বক্তব্য, আগুনে বেশি ক্ষত হলে সারতে সময় লাগে। সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। সেই কারণেই অগ্নিদগ্ধদের আলাদা রাখা জরুরি। হাসপাতালের সুপারিন্টেন্ডেন্ট উজ্জ্বলেন্দুবিকাশ মণ্ডল বলেন, ‘‘কেউ পুড়ে গেলে ৪৮ ঘণ্টা পরে সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। চিকিৎসার ক্ষেত্রে এই সময়টা জরুরি। আমাদের বার্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে।’’
কয়েক মাস আগে আরামবাগ সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের উদ্বোধন হয়েছে। যদিও মহকুমা হাসপাতাল থেকে দু’টি বহির্বিভাগ স্থানান্তর ছাড়া সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল সে ভাবে চালুই হয়নি। অগ্নিদগ্ধদের মহকুমা হাসপাতালের পরিকাঠামোই ভরসা। তবে আগের মতো অন্তর্বিভাগে অন্যান্য রোগীদের পাশে মশারি টাঙিয়ে এখানে চিকিৎসা করা হয় না। মহিলা এবং পুরুষদের জন্য ৬টি করে মোট ১২ শয্যার শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত দু’টি ‘বার্ন ইউনিট’ রয়েছে। এক জন প্লাস্টিক সার্জেন রয়েছেন। হাসপাতাল সুপার শিশিরকুমার নস্কর বলেন, “দীপাবলির উৎসবে আগুন সংক্রান্ত দুর্ঘটনা মোকাবিলা করতে আমরা বিশেষ প্রস্তুতি নিয়েছি। বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে রোগীকে রেফার করতে হলেও অধিকাংশ রোগীর চিকিৎসা এখানেই হয়।’’
জেলার গ্রামীণ এলাকায় অবশ্য আগুনে জখম মানুষের জন্য উন্নত মানের চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। জেলার স্বাস্থ্যকর্তাদের দাবি, সব গ্রামীণ হাসপাতালেই অগ্নিদগ্ধের প্রাথমিক চিকিৎসা হয়। পরে অবস্থা বুঝে কাছের উন্নত পরিষেবাযুক্ত হাসপাতালে পাঠানো হয়। তারকেশ্বর গ্রামীণ হাসপাতালে এক শয্যার একটি কেবিন রয়েছে অগ্নিদগ্ধের চিকিৎসার জন্য। জাঙ্গিপাড়া, চণ্ডীতলা, সিঙ্গুর-সহ বিস্তীর্ণ এলাকার লোক শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে আসেন। কিন্তু এখানেও পৃথক কোনও ‘বার্ন ইউনিট’ নেই। অন্তর্বিভাগেই সার্জিক্যাল ওয়ার্ডের শয্যায় আর পাঁচ জন রোগীর সঙ্গেই অগ্নিদগ্ধের চিকিৎসা চলে। সংক্রমণ রুখতে মশারি টাঙানো হয়। পরিস্থিতি একটু জটিল হলেই রোগীকে অন্যত্র পাঠিয়ে দেওয়া হয়। একই অবস্থা উত্তরপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালেরও।
হাওড়া জেলার ১৪টি ব্লকের গ্রামীণ হাসপাতাল, ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে এ দিন আগুনে পুড়ে গেলে কী ভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা করা হবে তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা হয়। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভবানী দাস জানান, বেশি পুড়ে গেলে উলুবেড়িয়া এবং হাওড়া জেলা হাসপাতালে কাউকে ভর্তি করানোর সব ব্যবস্থাই আছে। তবে তার আগে প্রাথমিক চিকিৎসা করানোর মতো উপকরণ নিয়ে প্রত্যন্ত গ্রামের উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতেও চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রস্তুত রয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy