মেরামত হয়নি লকুচক বাঁধ। — নিজস্ব চিত্র
শালবল্লা পোঁতা হয়েছে। তারজালি বিছিয়ে ফেলা হয়েছে কিছু বোল্ডার। বছর দুই আগে কাজ শুরু হলেও এরকমই বুড়িছোঁয়া করে রেখে দেওয়া হয়েছে আরামবাগ মহকুমার ভাঙ্গনপ্রবণ এলাকাগুলির মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আরান্ডি ২ পঞ্চায়েত এলাকায় মুণ্ডেশ্বরী নদীর লকুচক পটি সংলগ্ন বাঁধটি। একটা বর্ষা কোনওভাবে কেটে গিয়েছে। সামনে ফের আর একটা বর্ষা। বন্যা হলে বাঁধের যা হাল হবে তা ভেবেই আশঙ্কায় কাঁটা হয়ে আছেন সেখানকার প্রায় ছ’শোর উপর বাসিন্দা। পাশাপাশি প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কায় সমগ্র আরান্ডি ২ পঞ্চায়েত এলাকার চন্দ্রবান মৌজা-হিয়াতপুর মৌজা সহ বিস্তৃর্ণ এলাকা।
বাঁধের রক্ষণাবেক্ষণে পঞ্চায়েত এবং ব্লক প্রশাসনের বিরুদ্ধে উদাসীনতার অভিযোগ তুলে স্থানীয় গ্রামবাসী শেহনাজ হোসেন, রতন পণ্ডিত, শান্তি দাসেরা চাইছিলেন সেচ দফতর বাঁধের কাজ করুক। তাঁরা জানান, কিন্তু পঞ্চায়েত ২০১৪ সালে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে বাঁধ মেরামত শুরু করে। কিছু শালবল্লা এবং বোল্ডার ফেলে খালি প্রকল্পের সরঞ্জাম খাতের টাকাই খরচ করল, মাটি বা বালি ভর্তির কাজ কিছুই হল না। এখন পঞ্চায়েত থেকে বলা হচ্ছে কাজটা তাদের সাধ্যের বাইরে। সেচ দফতর ওই কাজ করবে। আরান্ডি ২ পঞ্চায়েতের প্রধান বাসুদেব মালিক বলেন, “কাজটা জটিল, পঞ্চায়েত করতে পারছে না। সেচ দফতর যাতে ওই কাজ করে তা ব্লক প্রশাসন দেখবে।”
আরামবাগের বিডিও বদরুজ্জামান বলেন, “বিষয়টা সেচ দফতরকে জানানো হয়েছে।” জেলা সেচ দফতর সূত্রে খবর, “সেচ দফতর ওই কাজের দায়িত্ব নিয়েছে। ইতিমধ্যেই ‘রুরাল ইনফ্রাস্টাকচার ডেভলেপমেন্ট ফান্ড’ (আরআইএফ)-এর আওতায় তালিকাভুক্ত করে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে।”
আরামবাগ ব্লক এবং সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, লকুচক পট্টির বাঁধটি ২০১১ সাল থেকে ভাঙা। তারপর তিন বছর ধরে অপেক্ষার পর অবশেষে সেচ দফতর থেকে কারিগরী অনুমোদন মেলে ২০১৪ সালের ২ জুন। প্রায় ৫০০ মিটার ভাঙনপ্রবণ এলাকার মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক অংশ ১৯৫ মিটার মেরামতির জন্য অনুমোদিত হয় ৩৬ লক্ষ ২১ হাজার টাকা। তার মধ্যে মালমশলা খাতে খরচ ধরা হয়েছিল ১১ লক্ষ ৮৫ হাজার। সেই টাকার প্রায় সবটাই খরচ হয়ে গিয়েছে বলে পঞ্চায়েত সূত্রে খবর। কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়ক ঋত্বিক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “যে টুকু কাজ হয়েছিল তা গত দু বছরের বন্যায় বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কাজটি সম্পূর্ণ করার ক্ষেত্রে আমাদের মূল সমস্যা ছিল মাটি এবং বালি। নদীর ওই জায়গায় বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে গ্রীষ্মেও জল না কমায় শ্রমিকরা বালি বা মাটি তুলে ভরাট করতে পারেননি। ওই কাজ করা গেলেও এলাকাটি বিপদমুক্ত করা যেত। এখন সেচ দফতর যাতে ওই কাজ করে সে জন্য ব্লক প্রশাসনের কাছে তদ্বির করা হয়েছে।”
মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সেচ দফতরের হাতে ছেড়ে না দেওয়ায় অন্তত ২০টি ক্ষেত্রে নদীবাঁধের ভাঙ্গন ২০০৯ সাল থেকে মজবুত করে মেরামত হয়নি। আপৎকালীন ব্যবস্থা হিসাবে পঞ্চায়েত সমিতি থেকে বা জেলা পরিষদ থেকে কারিগরী অনুমোদন নিয়ে ১০০ দিন প্রকল্পে সেগুলি জোড়াতালি দিয়ে প্লাবন সামলানোর চেষ্টা করছে পঞ্চায়েতগুলি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy