একটি স্কুলবাড়ি সংলগ্ন পুকুরের পাড় ধসে যাচ্ছে। স্কুল বাঁচাতে পাড় বাঁধানোর জন্য আবেদন গেল পঞ্চায়েত সমিতির কাছে। সামান্য কয়েক লক্ষ টাকার কাজ। বছর দুই আগেও আবেদন পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাড় বাঁধিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা ছিল পঞ্চায়েত সমিতির। কিন্তু এখন সমিতির হাত পা বাঁধা। হাওড়ার জগৎবল্লভপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হাফিজুল রহমান বলেন, ‘‘হাতে একটি পয়সাও নেই। ফলে গ্রাম পঞ্চায়েতকে বলেছি স্কুলের পাড় বাঁধিয়ে দেওয়ার জন্য।’’
পঞ্চায়েত সমিতির বেহাল তহবিলের এই ছবি শুধু জগৎবল্লভপুর নয়, রাজ্যের ৩৪৮টি পঞ্চায়েত সমিতিরই এমন অবস্থা। টাকার অভাবে উন্নয়নমূলক কাজ করতে পারছে না তারা। এমন চলতে থাকলে পঞ্চায়েত সমিতিগুলির ঝাঁপ বন্ধ করে দিতে হবে বলে জানিয়েছেন রাজ্য পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের কর্তাদের একাংশ।
গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি বাড়ি তৈরির অনুমতি দিয়ে, ব্যবসার লাইসেন্স দিয়ে নিজস্ব আয় বাড়াতে পারে। পঞ্চায়েত এলাকায় বসবাস করার জন্য গ্রামবাসীদের প্রতি বছর কর দিতে হয়। সেখান থেকে আয় বাড়ে পঞ্চায়েতের। কিন্তু পঞ্চায়েত সমিতির নিজস্ব আয় বাড়ানোর এমন কোনও আইনি সংস্থান নেই। একমাত্র বিপজ্জনক কোনও শিল্প তৈরি হলে তার জন্য বাধ্যতামূলক অনুমতি নিতে হয় পঞ্চায়েত সমিতির কাছ থেকে। অনুমতি দেওয়ার বিনিময়ে ফি বাবদ একটা টাকা পায় পঞ্চায়েত সমিতি। এ ছাড়া সমিতির হাতে থাকা কিছু ফেরিঘাট লিজ দিয়ে আয় করতে পারে তারা।
কিন্তু বিপজ্জনক শিল্পের সংখ্যা সব পঞ্চায়েত সমিতিতে সমান নয়। ফেরিঘাটও সব পঞ্চায়েতে নেই। দোকান বা বাজার চত্বর তৈরি করে ভাড়া বাবদ আদায় করতে পারে পঞ্চায়েত সমিতি। কিন্তু এর জন্য প্রয়োজনীয় জমি বা বিনিয়োগ করার মতো অর্থ সব পঞ্চায়েত সমিতির থাকে না। সব মিলিয়ে নিজস্ব আয়ের ক্ষেত্রে পঞ্চায়েতের থেকে পিছিয়েই পঞ্চায়েত সমিতিগুলি।
এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে আরও বিপাকে পড়েছে সমিতিগুলি। রাজ্য ও কেন্দ্রীয় অর্থ কমিশন আলাদা করে পাঁচ বছর অন্তর পঞ্চায়েত দফতরকে টাকা দেয়। এতদিন সেই টাকা পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদের মধ্যে ভাগ করে দিত পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার সাফ জানিয়েছে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় অর্থ কমিশনের টাকা আর পাবে না জেলা পরিষদ এবং পঞ্চায়েত সমিতিগুলি। সব টাকা পাবে পঞ্চায়েত।
বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘টাকার অভাবে পঞ্চায়েত সমিতিগুলি মুখ থুবড়ে পড়েছে। অবিলম্বে কেন্দ্র ও রাজ্য অর্থ কমিশনের টাকা যাতে পঞ্চায়েত সমিতিকে দেওয়া হয় সেজন্য আমি কেন্দ্রের কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছি।’’
রাজ্য পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের কর্তাদের মন্তব্য, একদিকে পঞ্চায়েত সমিতিগুলির নিজস্ব রোজগার সীমিত। তার উপরে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের টাকাও বন্ধ। সব টাকা সরাসরি দিয়ে দেওয়া হচ্ছে গ্রাম পঞ্চায়েতকে। অথচ অধিকাংশ পঞ্চায়েতে কর্মীসংখ্যা কম। তাঁদের আশঙ্কা, এতে সময়মত টাকা খরচ করা যাবে না, উল্টে দুর্নীতিও বাড়বে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy