ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্টো চালু হতে এখনও বছরখানেক দেরি। তার আগেই যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যের লক্ষ্যে ঢেলে সাজবে হাওড়া স্টেশন। পূর্ব রেলের হাওড়া শাখার উন্নতির জন্য সম্প্রতি ১৭৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন রেল কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে শুধু হাওড়া স্টেশনের জন্যেই বরাদ্দ ৭০ কোটি টাকা।
পূর্ব রেলের বক্তব্য, হাওড়া শাখায় পণ্য শুল্ক থেকে রেলের আয় এমনিতেই কম। এই শাখার ৭০ শতাংশ রাজস্ব আসে মূলত যাত্রী-ভাড়া থেকে। তাই সেই যাত্রীদের স্বাচ্ছন্দ্যের কথা মাথায় রেখে এ বার ওই শাখা-সহ প্রান্তিক স্টেশন হাওড়াকে আগামী দিনের উপযোগী করে তৈরি করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। হাওড়া যেহেতু কলকাতার ‘ল্যান্ড মার্ক’, তাই শহরের ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে স্টেশনের ভিতরে ও বাইরে সৌন্দর্যায়নের কাজও করা হবে। এ ব্যাপারে হাওড়া পুরসভার সাহায্যও নেওয়া হবে।
পূর্ব রেল সূত্রের খবর, হাওড়া স্টেশনে দিনে চলাচল করে ১৪০টি মেল এক্সপ্রেস, ৬৮টি প্যাসেঞ্জার ট্রেন এবং ৪৮০টি ইএমইউ লোকাল। রেল কর্তাদের দাবি, প্রতি দিন ৭০০টি ট্রেনের মাধ্যমে প্রায় ১০ লক্ষ যাত্রী হাওড়া স্টেশনে আসা-যাওয়া করেন। তাই দিনের ব্যস্ত সময়ে কোনও দূরপাল্লার ট্রেন স্টেশনে পৌঁছনোর পর প্ল্যাটফর্ম থেকে ট্যাক্সি স্ট্যান্ড পর্যন্ত যেতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় যাত্রীদের। সেই সমস্যা মেটাতেই এবার উদ্যোগী হচ্ছেন রেল কর্তৃপক্ষ। রেল কর্তাদের দাবি, হাওড়া স্টেশনকে এমন ভাবে ঢেলে সাজা হবে, যাতে যাত্রীদের আসা-যাওয়ায় কোনও অসুবিধায় না পড়তে হয়। হাওড়ার ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার (ডিআরএম) মনু গোয়েল জানিয়েছেন, হাওড়ার পুরনো কমপ্লেক্সের ১ থেকে ১৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মের সামনের জায়গায় তৈরি করা হবে একটি সাবওয়ে। প্রত্যেকটি প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে ওই সাবওয়ে যুক্ত থাকবে। ওই সাবওয়ে ব্যবহার করলে যাত্রীরা সহজেই একেবারে স্টেশনের বাইরে চলে যাবেন। ডিআরএম আরও বলেন, ‘‘ভিতরের একটি সাবওয়ে ছাড়া স্টেশনের বাইরে পুরনো কমপ্লেক্স ও নতুন কমপ্লেক্স পর্যন্ত যে ট্যাক্সি স্ট্যান্ড রয়েছে, সেখানে দিয়ে আরও একটা সাবওয়ে করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। ওই সাবওয়েটি সোজা হাওড়া বাসস্ট্যান্ড বা হাওড়া ব্রিজের কাছে বেরোবে। যাত্রীরা যাতে ট্রেন থেকে নেমে ভূগর্ভ পথে প্ল্যাটফর্ম থেকে সোজা ট্যাক্সি বা বাসস্ট্যান্ডে যেতে পারেন, সেই কারণেই এই ব্যবস্থা।’’
ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো চালু হলে হাওড়া স্টেশনে যাত্রীদের সংখ্যা আরও বাড়বে। সে কথা মাথায় রেখেই বাইরের সাবওয়েটিতে একটি ভূগর্ভস্থ মার্কেট কমপ্লেক্স তৈরির কথাও ভাবা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ডিআরএম। এ ছাড়াও স্টেশনের ভিতরে যাত্রীদের জন্য বসার জায়গা বাড়ানো হচ্ছে। ১৭-১৮ হাজার মানুষ যাতে একসঙ্গে স্টেশনে বসে ট্রেনের প্রতীক্ষা করতে পারেন, সে জন্য বাড়ানো হবে স্টিলের বেঞ্চ। স্টেশনের ভিতরে লন্ডন থেকে আনা যে বড় ব্লেডের পাখা রয়েছে, বাড়বে তার সংখ্যাও। বর্তমানে স্টেশন চত্বরে ওই পাখার সংখ্যা তিনটি। তবে পরে আরও আটটি পাখা লাগানো হবে বলে রেল সূত্রের খবর।
পাশাপাশি, হাওড়া স্টেশনের সৌন্দর্যায়নের জন্য স্টেশনের সামনে ব্যানার অথবা পোস্টার না রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। স্টেশন থেকে যাতে গঙ্গা এবং হাওড়া ব্রিজ ভাল ভাবে দেখা যায়, সে ব্যাপারে হাওড়া পুরসভার সঙ্গে একযোগে কাজ করবে রেল। ইতিমধ্যে পূর্ব রেলের ডিআরএমের সঙ্গে হাওড়ার মেয়র রথীন চক্রবর্তীর এক দফা কথাবার্তাও হয়ে গিয়েছে। এ প্রসঙ্গে মেয়রের প্রতিক্রিয়া, ‘‘ডিআরএমের সঙ্গে খুব শীঘ্রই এ নিয়ে বৈঠকে বসা হবে। রেলকে সব ব্যাপারে সহযোগিতার জন্য আমরা রাজি। হাওড়া বাসস্ট্যান্ড ও স্টেশন চত্বরটাকে না সাজালে হাওড়ার মানোন্নয়ন করা যাবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy