অবৈধ: চলছে চোলাই তৈরি। ছবি: দীপঙ্কর দে
কোথাও যেতে হবে না। শুধু একটা মিসড কল। ব্যস! হাতে চলে আসবে চোলাইয়ের পাউচ।
ঠেকে বসে চোলাই খাওয়ার ঝক্কি অনেক। লোকজন দেখে ফেলার ভয় থেকে পুলিশের ঝামেলা। তাই হোম ডেলিভারি। শুধু প্রয়োজনীয় ফোন নম্বরটি থাকলেই হল।
পুলিশ ও আবগারি দফতরের নজরদারিই বহাল। কিন্তু তারপরেও চোলাইয়ের রমরমা দিন দিন বাড়ছে হুগলি জেলা জুড়ে। দিন কয়েক আগে গোঘাটের ভাদুরের বহরমপুর এলাকার মহিলারা একজোট হয়ে স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক মানস মজুমদারের কাছে গিয়ে তাঁদের নিরাপত্তা চান। ওই মহিলাদের অভিযোগ, তাঁদের স্বামীরা চোলাই খেয়ে বাড়িতে এসে অশান্তি করে। রোজগারের টাকা চোলাই খেতে চলে যাওয়ায় সংসারে অভাব বাড়ছে। টাকার অভাবে ছেলেমেয়ের লেখাপড়া বন্ধ। দু’বেলা খাবার জুটছে না। ওই মহিলারা দলবেঁধে চোলাইয়ের কারবারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলেও লাভ তেমন হয়নি। উল্টে চোলাই কারবারিরাই প্রতিবাদী মহিলাদের মারধর করেন বলে অভিযোগ।
শাসক দলের বিধায়ক মানসবাবু কিন্তু চোলাই কারবারের পিছনে পুলিশ এবং আবগারি দফতরের একাংশের যোগ থাকার অভিযোগ তুলেছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি সপ্তগ্রামের নামাজগড় এলাকায় থাকি। ছোটবেলা থেকেই দেখছি সেখানে প্রকাশ্যই চোলাইয়ের রমরমা ব্যবসা চলছে।’’ তাঁর অভিযোগ, মাঝে মাঝে গ্রামে আবগারি কর্তা এবং পুলিশের তল্লাশি চলে। চোলাই বাজেয়াপ্ত করা হয়। তারপর দিন কয়েক চোলাইয়ের ব্যবসা বন্ধ থাকার পরে ফের শুরু হয়ে যায়। হুগলি জেলা আবগারি দফতরের কর্তা রূপক ঘোষ অবশ্য বলছেন, ‘‘চোলাইয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি গোপনীয়। তবে অভিযোগ থাকলে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিই।’’
চোলাই কারবারের সঙ্গে যুক্ত একাংশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, হাওড়া-বর্ধমান কর্ড এবং মেন লাইন ও হাওড়া-তারকেশ্বর শাখার প্রায় প্রতিটি স্টেশন চত্বরেই কমবেশি চোলাইয়ের ব্যবসা চলে। চণ্ডীতলা, বেগমপুর, জনাই, মির্জাপুর, বাঁকিপুর, কাপাসহাড়িয়া, নসিবপুর, বড়া, বারুইপাড়া এবং পান্ডুয়ার বহু এলাকায় সারা বছর ধরেই চোলাই বিক্রি হয়।
চোলাই নিয়ে যাওয়ার জন্য ট্রেনও নির্দিষ্ট। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নিত্যযাত্রীর দাবি, ‘‘হাওড়া-বর্ধমান ডাউন লাইনে সকাল সাড়ে ছ’টার ট্রেনে বেগমপুর, বারুইপাড়া, মির্জাপুর -বাকিপুর স্টেশন থেকে মূলত চোলাই ওঠে। দুপুরে ৩টে ১৭ মিনিটের আপ হাওড়া-বর্ধমান লোকাল, ৩ টে ৫০ মিনিটের ডাউন হাওড়া-বর্ধমান লোকালেও চোলাই পরিবহণ চলে। নজর এড়াতে এখন চলে এসেছে ফোনের ব্যবস্থা। তবে এক্ষেত্রে খরচ একটু বেশি। নিত্যযাত্রীদের একাংশের অভিযোগ, রেল পুলিশের একাংশের মদতেই স্টেশন চত্বরে চোলাই ব্যবসায়ীদের বাড়বাড়ন্ত।
রেল অবশ্য অভিযোগ মানেনি। রেল পুলিশের এক কর্তার দাবি, ‘‘স্টেশন চত্বর ও রেললাইন সংলগ্ন রেলের জমিতে জেলা পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় রেখেই নজরদারি চলে। তারপরেও চোলাই সংক্রান্ত অভিযোগ এলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’’
(সহ প্রতিবেদন: দীপঙ্কর দে ও পীযূষ নন্দী)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy