Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
দামোদরে সাফাই

ফেসবুক-এ সাড়া দিয়ে সকলে সামিল সকালে

বুধবার সকাল অন্য রকম ভাবে শুরু হয়েছিল উলুবেড়িয়ার মহিষরেখায় দামোদরের পাড়ে।জানুয়ারি মাস জুড়েই উলুবেড়িয়ার মহিষরেখা এলাকায় দামোদরের চরে পিকনিকের ধুম পড়ে। বিভিন্ন জায়গা থেকে দলে দলে মানুষ আসেন। এ দিনও ব্যতিক্রম ছিল না। পাশাপাশি অন্য রকম ছবিও দেখা গেল।

ছবিটি তুলেছেন সুব্রত জানা।

ছবিটি তুলেছেন সুব্রত জানা।

নুরুল আবসার
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:২৩
Share: Save:

বুধবার সকাল অন্য রকম ভাবে শুরু হয়েছিল উলুবেড়িয়ার মহিষরেখায় দামোদরের পাড়ে।

জানুয়ারি মাস জুড়েই উলুবেড়িয়ার মহিষরেখা এলাকায় দামোদরের চরে পিকনিকের ধুম পড়ে। বিভিন্ন জায়গা থেকে দলে দলে মানুষ আসেন। এ দিনও ব্যতিক্রম ছিল না। পাশাপাশি অন্য রকম ছবিও দেখা গেল। এক দিকে যখন চড়ুইভাতি চলছে, অন্য দিকে গ্রামবাসীদের উদ্যোগে শুরু হয়ে গিয়েছে দামোদরে দূষণ রোধের কাজ। গত কয়েকদিন ধরে চড়ুইভাতি করতে আসা মানুষ জলে যথেচ্ছ থার্মোকলের থালা-বাটি-গ্লাস ফেলেছেন। এ দিন সেগুলি তুলে নষ্ট করে ফেলেন তাঁরা। উৎসাহিত হলেন চড়ুইভাতি করতে আসা লোকজনও। তাঁরাও নদী থেকে বর্জ্য তোলার উদ্যোগে সামিল হলেন।

পিকনিক করতে আসা দলগুলির কাছে মহিষরেখা এক পরিচিত নাম।

শীতের মরসুমে মানুষ জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে চড়ুইভাতি করতে এখানে আসেন। চরে উনুন জ্বালিয়ে করা রান্না খাওয়া হয় থার্মোকলের থালা, বাটি এবং গ্লাসে। পরে ফেলে দেওয়া জলে। থার্মোকলের সাদা রং ঢেকে যায় জল। এ অবস্থার অবসানে তাই উদ্যোগী হন গ্রামবাসীরা। দূষণ রুখতে তাঁরা তৈরি করেন ‘মাধবপুর পরিবেশ চেতনা সমিতি’। সমিতির উদ্যোগেই দামোদরকে দূষণ-মুক্ত করতে ও পুরনো বট গাছ সংরক্ষণের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। এ দিন সকাল থেকেই হাতে গ্লাভস পরে গ্রামবাসীরা জলে নেমে পড়েন। দু’হাতে তুলে আনেন থার্মোকলের থালা। চর থেকে তাঁরা সরিয়ে নেন বহুদিন ধরে পড়ে থাকা থালা-বাটি-গ্লাস। এক জায়গায় জমা করে সেগুলি নষ্ট করে ফেলেন।

এ দিন সকালে পাড় ধরে প্রায় ১ কিলোমিটার জুড়ে সাফাই অভিযান চলে। সমিতি এই কাজে সামিল হতে ফেসবুকে আহ্বান জানিয়েছিল। তাতে সাড়া দিয়েই অভিযানে সামিল হন কালিকাপুরের অমিত পাল, দীপঙ্কর মান্নার মতো স্নাতক স্তরের ছাত্রেরা। চরে ফুটবল খেলার অনুশীলন করতে এসে অভিযানে সামিল বীরশিবপুরের গৌরাঙ্গ মাখাল, প্রদীপকুমার মণ্ডল, সোমনাথ বাগেরা। বাঁশবেড়িয়া থেকে সামিল হয়েছে একাদশ শ্রেণীর ছাত্র শৌমিক কর, সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র সৌমিত্র মণ্ডল। মাধবপুর থেকে এসে গৃহবধূ শোভা দাস, পঞ্চম শ্রেণীর সৃজিতা কুন্তিরা দামোদর সাফ করে।

রঘুদেবপুরের একটি দল পিকনিক করতে এসেছিল। সেই দলে ছিলেন রঘুদেবপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য তনয়া গঙ্গোপাধ্যায়। তনয়াদেবী লেগে গেলেন থার্মোকল সাফ করতে। তাঁর কথায়, ‘‘এমন উদ্যোগ দেখে বসে থাকতে পারলাম না।’’ পাশাপাশি খাওয়ার পর এঁটো থালা-বাটি-গ্লাস তাঁরা ফিরিয়ে নিয়ে যাবেন বলেও তিনি জানান। চেতনা সমিতির পক্ষে তপন কর ও জয়িতা কুণ্ডু এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘দূষণ ব্যাধির আকার নিয়েছে। আমাদের প্রচেষ্টায় এক দিনের জন্য হলেও দামোদর দূষণের হাত থেকে বাঁচল। এই ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হলে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।’’

উলুবেড়িয়া ১-এর বিডিও কার্তিক রায় বলেন, ‘‘মহিষরেখায় দামোদরের পাড় দূষণের হাত থেকে বাঁচাতে নানা পরিকল্পনা করা হচ্ছে।’’ এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে উলুবেড়িয়া দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক পুলক রায় বলেন, ‘‘প্রশাসনের সঙ্গে বসে এই ব্যাপারে আলোচনা করে করণীয় স্থির করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Damodar River
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE