Advertisement
০৫ মে ২০২৪
পুকুর ভরাট রুখল পুলিশ, গ্রেফতার তিন

দিনদুপুরে পুকুর চুরি বৈদ্যবাটিতে

স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের বক্তব্য, ঘটনার পিছনে কোনও বড় মাথা রয়েছে। তদন্তকারী পুলিশ অফিসারদের বক্তব্য, পুকুর ভরাটের নেপথ্যে আরও যারা রয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

অনিয়ম: আবর্জনা, পাথর, ইট ফেলে বোজানো হয়েছে পুকুরের অনেকটাই। নিজস্ব চিত্র

অনিয়ম: আবর্জনা, পাথর, ইট ফেলে বোজানো হয়েছে পুকুরের অনেকটাই। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বৈদ্যবাটি শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৭ ০১:৩১
Share: Save:

চোরাগোপ্তা নয়, দিনেদুপুরেই চলছিল কাজ। আবর্জনা ফেলে আস্তে আস্তে বুজিয়ে ফেলা হচ্ছিল পুকুর। বিষয়টা নজর এড়ায়নি বৈদ্যবাটি পুরসভার ২০ নম্বর ওয়ার্ডের সানপুকুরের বাসিন্দাদের। অভিযোগ পেয়ে পুলিশ মঙ্গলবার সকালে কাজ বন্ধ করে দেয়। পুকুর ভরাটের অভিযোগে গ্রেফতার করা হল তিন জনকে। হুগলির পুলিশ সুপার সুকেশ জৈন বলেন, ‘‘পুলিশের উদ্যোগে ওই পুকুর বোজানো বন্ধ হয়েছে। মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জলাশয়টির আয়তন প্রায় এক বিঘা। সেটির মালিক বৃদ্ধ দুই বোন। অভিযোগ, বাড়ি ভাঙার কংক্রিট থেকে অন্যান্য আবর্জনা ফেলে পুকুরের বেশির ভাগ অংশই বোজানো হয়ে গিয়েছে। বিষয়টি কানে পৌঁছতেই মঙ্গলবার শ্রীরামপুরের এসডিপিও কামনাশিস সেন বাহিনী নিয়ে সেখানে‌‌‌‌‌ হানা দেন।

পুলিশ সূত্রের খবর, তখনও ভরাটের কাজ চলছিল। ঘটনাস্থল থেকে কয়েক জন শ্রমিককে আটক করা হয়। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়। ধৃতদের নাম বিমল মণ্ডল, বাবলু দত্ত এবং শক্তিপদ পাঁজা। তাঁরা ওই এলাকারই বাসিন্দা। ঘটনাস্থল থেকে বেশ কয়েকটি সিমেন্টের বস্তা, একটি বেলচা এবং দু’টি কোদাল আটক করা হয়। শ্রমিকদের মজুরি দেওয়ার জন্য মজুদ রাখা নগদ আট হাজার টাকাও উদ্ধার করা হয়।

স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের বক্তব্য, ঘটনার পিছনে কোনও বড় মাথা রয়েছে। তদন্তকারী পুলিশ অফিসারদের বক্তব্য, পুকুর ভরাটের নেপথ্যে আরও যারা রয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পুরপ্রধান, তৃণমূলের অরিন্দম গুইন ব‌লেন, ‘‘পুকুরটি ভরাটের ব্যাপারে পুরসভায় কোনও অভিযোগ আসেনি। বিষয়টি আমাদের গোচরে ছিল না। তবে পুকুর বোজানোর আমরা ঘোরতর বিরোধী। এ ব্যাপারে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।’’ স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর তথা চেয়ারম্যান-ইন-কাউন্সিল প্রভাস ঘোষেরও দাবি, পুকুরটি যে ভরাট হচ্ছে, তার বিন্দুবিসর্গ তিনি জানতেন না। তাঁর বক্তব্য, ‘‘পুরপ্রধানের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।’’

বৈদ্যবাটি, শ্রীরামপুর, রিষড়া, উত্তরপাড়াতেও পুকুর ভরাটের অভিযোগ নতুন নয়। বরং বাম আমল থেকেই পুকুর বোজানোর যে রীতি শুরু হয়েছিল, তৃণমূলের জমানাতেও তা একই ভাবে চলছে। অনেক ক্ষেত্রেই শাসক দলের নেতা বা দুষ্কৃতীদের যোগসাজস থাকায় সাধারণ মানুষ অভিযোগ জানাতে সাহস পান না। পুলিশও ঘাঁটায় না।

বৈদ্যবাটিতেই বছর কয়েক আগে একটি পুকুর বুজিয়ে ফেলার বিরোধিতা করেন স্থানীয়রা। মৎস্য দফতর ওই জলাশয় ফের খুঁড়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। সেই প্রক্রিয়াও চলছে বলে দফতর সূত্রের খবর। কিন্তু তা সত্ত্বেও পুকুর বোজানো থেমে নেই। পাশের পুরসভা শ্রীরামপুরে অল্প কিছু পুকুর বাকি রয়েছে। পুরবাসীর ক্ষোভ, তার কয়েকটি ধীরে ধীরে বুজে যাচ্ছে। পুর-কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, অনেক পুকুরই ব্যক্তি মালিকানার। তাঁরা পুকুর সংস্কার করেন না, পুরসভাকেও সহযোগিতা করেন না। উত্তরপাড়া পুরসভা অবশ্য সম্প্রতি পুকুর সংস্কারে উদ্যোগী হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Illegal Pond Police Arrest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE