Advertisement
E-Paper

পুলিশ ও ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে প্রশ্ন

এই লুঠের ঘটনায় প্রশ্ন উঠছে এলাকার নিরাপত্তা নিয়ে। উঠছে আরও নানা প্রশ্ন। পান্ডুয়ার তিন্না বাজারের কাছেই ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় একজন বন্দুকধারী নিরাপত্তারক্ষী আছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৮ ০২:০০
ঘটনাস্থল: ব্যাঙ্কে তদন্তে পুলিশ । ছবি: সুশান্ত সরকার

ঘটনাস্থল: ব্যাঙ্কে তদন্তে পুলিশ । ছবি: সুশান্ত সরকার

ব্যস্ত জিটি রোডের উপর একটি দোতলা বাড়ি। একতলায় দোকানপাট। দোতলায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখা। মঙ্গলবার দুপুরে সেখানেই বিনা বাধায় হামলা চালালো দুষ্কৃতীরা। লুঠ হল লাখ চারেক টাকা। আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে ক্যাশবাক্স এবং লকার ভেঙে টাকা নিয়ে বাইকে চেপেই পালায় তারা। ভয়ে না কি বিপদ ঘণ্টিও বাজানোর সুযোগ পাননি ব্যাঙ্ক ম্যানেজার।

এই লুঠের ঘটনায় প্রশ্ন উঠছে এলাকার নিরাপত্তা নিয়ে। উঠছে আরও নানা প্রশ্ন। পান্ডুয়ার তিন্না বাজারের কাছেই ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় একজন বন্দুকধারী নিরাপত্তারক্ষী আছেন। কিন্তু ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের দাবি, এ দিন তিনি অফিসের কাজেই বর্ধমান গিয়েছিলেন। অরক্ষিতই ছিল ব্যাঙ্ক।

কেন এমন হল?

নিয়ম অনুয়ায়ী নিরাপত্তারক্ষী না থাকলে সে কথা স্থানীয় থানায় জানানোর দায়িত্ব ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা করা হয়নি। বরং ব্যাঙ্কের দরজায় সে দিন ছিলেন ব্যাঙ্কের এক চতুর্থ শ্রেণির কর্মী। পুলিশ সূত্রে খবর, সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গিয়েছে মুখে রুমাল বাঁধা অবস্থায় তিন যুবক ব্যাঙ্কে ঢুকলেও তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন। পনেরো মিনিটের মধ্যে লুঠ সেরে দুষ্কৃতীরা পালিয়ে গেলে লোকমুখে খবর পান তিন্না বাজারে থাকা এক ভিলেজ পুলিশকর্মী।

স্থানীয় বাসিন্দারা অবশ্য পুলিশ ও ব্যাঙ্কের সমন্বয় নিয়ই প্রশ্ন তুলছেন। ব্যাঙ্ক ম্যানেজার ঋত্বিক প্রধান গত জানুয়ারি মাসে দায়িত্ব নিয়েছেন। তাঁর মন্তব্য, ‘‘এমন ঘটনা ঘটবে, বুঝতে পারিনি। তাই পুলিশকে বলিনি।’’

এ দিন ঘটনার কথা জানাজানি হতেই স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ব্যাঙ্কের সামনে জড়ো হন। এক ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘দিনেদুপুরে ব্যাঙ্কে এমন ঘটলে আমাদের নিরাপত্তা কোথায়? পুলিশ নিরাপত্তা জোরদার করুক।’’

২০১৩ সালের অগস্টে পান্ডুয়ারই খন্যানে একটি রাষ্টায়ত্ত ব্যাঙ্কে দিনে দুপুরে ডাকাতি হয়। ব্যাঙ্কে আসা এক গ্রাহকের গাড়ি রাখা ছিল ব্যাঙ্কের সামনে। ডাকাতি করে পালাবার সময় ডাকাতরা গাড়িটি লক্ষ্য করে গুলি চা‌লায়। তবু চালক ডাকাতদের ধাওয়া করে। ফলে পোলবার কাছাকাছি একটি মোড়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে দুই ডাকাত। বাকিরা চম্পট দেয়। ২০১৫ সালের এপ্রিলেও ব্যান্ডেল মোড়ে জিটি রোডের ধারে এক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে গ্রাহক সেজে ডাকাতি করে দুষ্কৃতীরা। এমনকী ব্যাঙ্কের নিরাপত্তারক্ষীর বন্দুক কেড়ে তার জামা পড়ে দরজায় নজরদারীও চালিয়েছিল তাদের একজন। চলতি বছরের গোড়ায় চুঁচুড়ার ধরমপুরের কাছে একটি ব্যাঙ্কের পিছনের জানালা ভেঙে ভিতরে ঢুকে দুষ্কৃতীরা সিসি ক্যামেরাগুলির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে সবকিছু ভাঙার চেষ্টা চালালেও কার্যত ব্যর্থ হয়।

তবে শুধু পুলিশি নিক্রিয়তা নয়, এর নেপথ্যে পরিকাঠামোগত এবং ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাও অনেক ক্ষেত্রেই দায়ী বলে ওয়াকিবহাল মহলের অভিমত।

এক সময় হুগলির প্রতিটি থানার ফাঁড়ি থেকে পুলিশ কর্মীরা যেতেন ব্যাঙ্কে। সকালে ব্যাঙ্ক খোলা ও দুপুরে ক্যাশ কাউন্টার বন্ধের সময় তাঁরা থাকতেন। কিন্তু পুলিশকর্মীদের একাংশের দাবি, চন্দননগর কমিশনারেট গঠনের পর গ্রামীণ পুলিশ ও কমিশনারেটে ভাগ হওয়ায় পুলিশ কর্মী সংখ্যা কমে গিয়েছে। প্রতিটি থানাতেই এখন হাতে গোনা পুলিশ কর্মী। তার উপর প্রতিটি থানা এলাকায় ব্যাঙ্কের সংখ্যা প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।

জেলার প্রতিটি থানা এলাকায় ব্যাঙ্কের সংখ্যা কমপক্ষে ২০। সিঙ্গুর এবং আরামবাগের মতো এলাকায় সেটা ৩৫ থেকে ৪০টি। গ্রামীণ জেলা পুলিশের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘আমরা প্রতিটি এলাকায় ক্লাস্টার করে ব্যাঙ্কগুলিকে ভাগ করে নিয়েছি। মোটর বাইকে পুলিশ কর্মীরা নজরদারি চালান। পাশাপাশি সিভিক ভলান্টিয়ারদের ব্যাঙ্কগুলির উপর দায়িত্ব দেওয়া হয়।’’

এরপরও অবশ্য মঙ্গলবার পাণ্ডুয়ায় ব্যাঙ্ক ডাকাতির ঘটনা ঘটে গিয়েছে। পুলিশ কর্তাদের অভিমত, ‘‘ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের তরফেও নানা খামতি আছে। ডাকাতির ক্ষেত্রে সেই সব খামতি অনেক ক্ষেত্রেই সহায়ক হয়।’’ পুলিশের অভিযোগ, নিরাপত্তা নিয়ে বৈঠকেও ব্যাঙ্কের তরফে হাজিরা কেউ হাজির থাকেন না।

bank authorities Police Bank Loot
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy