Advertisement
১৬ জুন ২০২৪

রথের রশি ছুঁতে পড়িমরি দৌড় বৃদ্ধার

অনুরোধে কাজ হচ্ছিল না। পুলিশের নিরাপত্তা বেষ্টনী বেশ শক্তপোক্ত। মাহেশের রথ বলে কথা! সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধাও অনড়। এসেছেন যখন রশের রশি ছোঁবেনই।

এই প্রথম ইস্কনের সিঙ্গুর শাখার উদ্যোগে রথযাত্রা শুরু হল সিঙ্গুরে। ব্লক অফিস সংলগ্ন মাঠে মেলা বসেছে। হরিপালের বিধায়ক বেচারাম মান্না রথযাত্রার সূচনা করেন। ছবি: দীপঙ্কর দে

এই প্রথম ইস্কনের সিঙ্গুর শাখার উদ্যোগে রথযাত্রা শুরু হল সিঙ্গুরে। ব্লক অফিস সংলগ্ন মাঠে মেলা বসেছে। হরিপালের বিধায়ক বেচারাম মান্না রথযাত্রার সূচনা করেন। ছবি: দীপঙ্কর দে

প্রকাশ পাল
মাহেশ শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৬ ০২:০৩
Share: Save:

অনুরোধে কাজ হচ্ছিল না।

পুলিশের নিরাপত্তা বেষ্টনী বেশ শক্তপোক্ত। মাহেশের রথ বলে কথা!

সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধাও অনড়। এসেছেন যখন রশের রশি ছোঁবেনই। শেষমেশ পুলিশের নিরাপত্তা বেষ্টনীর ফাঁক গলেই প়ড়িমরি ছুটলেন রথের রশি ধরতে। প্রবল ভিড়ে অনেক চেষ্টার পরে সফলও হলেন। মহিলা পুলিশকর্মীরা তাঁকে সঙ্গে সঙ্গেই বের করে আনেন। বৃদ্ধার মুখে তখন বিজয়িনীর হাসি।

ভক্তদের বিশ্বাস, মাহেশের রথের রশি ছুঁলে বা রথ টানতে পারলে পুণ্য অর্জন হয়। তাই শুধু কলকাতা থেকে আসা ওই বৃদ্ধাই নন, বুধবার সামান্য সুযোগেই রথের রশি ছোঁয়ার চেষ্টা করেছেন আট থেকে আশি। তাঁদের সামলাতে কালঘাম ছুটেছে পুলিশের। পুলিশের হিসেবে, এ বার ১ লক্ষ ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ মাহেশের রথযাত্রায় সামিল হন।

বৃষ্টি নিয়ে প্রথম থেকেই চিন্তায় ছিল পুলিশ প্রশাসন। কিন্তু আকাশ মেঘলা থাকলেও শ্রীরামপুরে রথযাত্রার সময় বৃষ্টি হয়নি। তাই পুণ্যার্থীদের মতো স্বস্তি পায় পুলিশও। রথের টান শুরু হয় বিকেল ৪টে নাগাদ। ভিড় অবশ্য জমছিল সকাল থেকেই। সময় যত গড়িয়েছে, তত পাল্লা দিয়ে বেড়েছে তা। বেলা ১২টা বাজার আগেই বটতলা থেকে জিটি রোডে গাড়ি আটকে দিতে হয় পুলিশকে। দুপুর থেকে গোটা জিটি রোডের দখল চলে যায় পুণ্যার্থীদের হাতে। রাস্তার ধারে জলসত্র বা প্রাথমিক চিকিৎসার আয়োজন করা হয়েছিল বিভিন্ন সংগঠনের তরফে। হুগলি জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের তরফে ‘আইনি স্বাক্ষরতা শিবির’ করা হয়। অনেকে আবার ছোট রথ বের করেছিলেন। যাঁরা বড় রথের রশি ছুঁতে পারেননি, তাঁরা ছোট রথের দড়ি স্পর্শ করেই দুধের স্বাদ ঘোলে মেটালেন।

প্রথমবার মাহেশের রথ দেখতে কাঁচরাপাড়া থেকে এসেছিলেন বাপি বসু। ভিড় দেখে তিনি তাজ্জব! তাঁর কথায়, ‘‘এত মানুষ হয়, ধারণাই ছিল না। রথের মেলা থেকে জিলিপি আর পাঁপড়ভাজা অবশ্যই নিয়ে যাব।’’ একই ভাবে অবাক হয়েছেন হাতিবাগান থেকে আসা অংশুমান রায়ও। তিনি বলেন, ‘‘ভেবেছিলাম এ বার পুরীর পথ দেখতে যাব। কাজ থাকায় পারিনি। কিন্তু এখানে এসেও দারুণ অভিজ্ঞতা হল।’’

নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজতে পুলিশ এ বার অতিমাত্রায় সতর্ক ছিল। পর্যাপ্ত পুলিশ এবং সিভিক ভলান্টিয়ার মোতায়েন করা হয়। জেলার পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠি নিজেও ছিলেন। আগাগোড়া রথের সামনে ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শিল্পাঞ্চল) জয়িতা বসু, এসডিপিও (শ্রীরামপুর) সুবিমল পাল-সহ পদস্থ পুলিশ আধিকারিকরা। পুলিশের দাবি, সিসিটিভি-র ফুটেজ দেখে ছিনতাইবাজ সন্দেহে তিন জনকে আটক করা হয়। ছ’টার আগেই মাসির বাড়িতে পৌঁছে যায় রথ। তবে, জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রার বিগ্রহ ‘মাসির বাড়ি’র মন্দিরে নিয়ে যেতে আরও কিছুটা সময় গড়িয়ে যায়।

রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে তিলধারণের জায়গা ছিল না গুপ্তিপাড়া রথ-সড়কেও। হুগলির ব্যান্ডেল, জিরাট, বলাগড়ের পাশাপাশি বর্ধমানের কালনা, মেমারি, বাগনাপাড়া, কাটোয়া থেকেও বহু মানুষ এসেছিলেন। আবার গঙ্গা পেরিয়ে নদিয়ার শান্তিপুর, নবদ্বীপ-সহ নানা জায়গা থেকেও পুণ্যার্থীরা আসেন। বেলা ১২টা নাগাদ রথের টান শুরু হয় এখানে। পুলিশ সুপার নিজে নিরাপত্তা ব্যবস্থা তদারকি করেন। ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) কোটেশ্বর রাও-সহ পদস্থ পুলিশকর্তারা।

নবদ্বীপ থেকে গোবিন্দ হালদার এসেছিলেন গুপ্তিপাড়ার রথ দেখতে। জানালেন, প্রতিবারেই আসেন। নিজে রথ টানেন। এ বারেও রথ টেনেছেন। কালনার বাসিন্দা জয়ন্ত দে বলেন, ‘‘এই রথের খুব নামডাক। অনেক বছর ধরেই এখানে আসি। উল্টোরথের আগের দিন ভাণ্ডার লুঠ দেখতেও আসি।’’

ভিড় হয়েছিল ২০০ বছরের প্রাচীন চন্দননগরের রথযাত্রাকে ঘিরেও। ৪০ ফুট উঁচু রথের যাত্রার সূচনা করেন কৃষি বিপণনমন্ত্রী তপন দাশগুপ্ত, তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের প্রতিমন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন, হুগলির সাংসদ রত্না দে নাগ এবং চন্দননগরের মেয়র রাম চক্রবর্তী। অন্য দিকে, প্রায় ৮০ হাজার মানুষের টানে এ দিন বিকেলে এগোয় আরামবাগের প্রাচীন রথ। সদরঘাট থেকে রথ গেল ‘মাসির বাড়ি’ ব্যানার্জিপাড়ায়। প্রতি বছরের মতো এ বারও রথ উপলক্ষে ওই রাস্তার দু’ধারে সাত দিনের মেলা বসেছে। জমে ওঠে পুড়শুড়ার রথযাত্রাও। এখানে রথের বিগ্রহ লক্ষ্মী। সেই রথের রশি টানলেন নানা ধর্মের মানুষ।

সহ প্রতিবেদন: তাপস ঘোষ, পীযূষ নন্দী ও সুশান্ত সরকার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rath-Yatra
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE