Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

গঙ্গা থেকে অবাধে বালি তোলায় ক্ষতি বাঁধের

নদীর পাড়ে কাছে বাঁধা আছে নৌকা। নৌকার গলুইয়ে ডাঁই হয়ে আছে সাদা বালি। কোদাল দিয়ে ঝপাঝপ সেই বালি তুলে ঝুড়িতে বোঝাই করছেন একজন।

গঙ্গা থেকে বালি তুলে এ ভাবেই পাচার করা হচ্ছে।—নিজস্ব চিত্র।

গঙ্গা থেকে বালি তুলে এ ভাবেই পাচার করা হচ্ছে।—নিজস্ব চিত্র।

নুরুল আবসার
বাউড়িয়া শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০১৬ ০১:২৭
Share: Save:

নদীর পাড়ে কাছে বাঁধা আছে নৌকা। নৌকার গলুইয়ে ডাঁই হয়ে আছে সাদা বালি। কোদাল দিয়ে ঝপাঝপ সেই বালি তুলে ঝুড়িতে বোঝাই করছেন একজন। বালি বোঝাই হয়ে গেলে হাঁটুজলে দাঁড়িয়ে থাকা অন্যজন সেই ঝুড়ি মাথায় তুলে নিচ্ছেন। তারপর তা এনে নদীর ধারে ডাঁই করে ফেলছেন।

ঝুড়িতে বালি বোঝাই করছিলেন নিরঞ্জন মণ্ডল। কোথায় যায় এই বালি? প্রশ্ন শুনে নিরঞ্জনের জবাব, ‘‘মূলত যাঁরা নতুন বাড়ি তৈরি করেন, তাঁরাই আসেন আমাদের কাছে। সদ্য গঙ্গা থেকে তোলা ঝরঝরে বালি দিয়ে জায়গা ভরাট করেন তাঁরা।’’

বাউড়িয়ায় গঙ্গার ধারে গেলেই দেখা যাবে সারা বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে পর পর নৌকা। প্রতিটি নৌকার গলুইয়ে ডাঁই করা সাদা বালি। একেকটি নৌকায় গড়ে ৩০০ ঘনফুট করে বালি থাকে। জানালেন একটি নৌকার মাঝি। সেই বালি নৌকা থেকে তুলে ফেলা হচ্ছে গঙ্গার পাড়েই। তারপর ছোট লরিতে করে তা চালান হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়। নদীর বুক থেকে বালি তুলতে হলে সেচ দফতরের অনুমতি লাগে। যদিও এ ক্ষেত্রে সে সবের কোনও তোয়াক্কা না করেই বালি তোলা হচ্ছে বলে অভিযোগ।

এক সময়ে নদী থেকে বালি তোলার অনুমতি দিত ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর। বছর দুই হল সেই অনুমতি দিচ্ছে সেচ দফতর। ওই দফতরে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা জমা দিয়ে অনুমতি নিতে হয় ব্যবসায়ীদের। শুধু তাই নয়, নদীর কোন অংশ থেকে বালি তোলা হবে তা-ও চিহ্নিত করে দেওয়া হয়। কিন্তু গঙ্গার বুক থেকে বালি তোলার সময় সেই নিয়ম য়থাযত মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। এর ফলে সরকার রাজস্বও হারাচ্ছে।

হাওড়া জেলায় বালি তোলার অনুমতি দেয় সেচ দফতরের অধীন নিম্ন দামোদর নির্মাণভুক্তি। এই বিভাগ সূত্রে খবর, বাউড়িয়ায় গঙ্গার বুক থেকে বালি তোলার কোনও অনুমতি তারা দেয়নি। উল্টে বেআইনিভাবে যাঁরা বালি তোলেন তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর জন্য পুলিশকে বলা হয়েছে। জেলার গ্রামীণ জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, বালি তোলার কাজ করেন গরিব মানুষেরা। তাই তাঁদের বিরুদ্ধে সরাসরি ব্যবস্থা নিতে গেলে আইন শৃঙ্খলার সমস্যা দেখা দিতে পারে। পুলিশের পাল্টা বক্তব্য, সেচ দফতরের আধিকারিকেরাই বরং এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন। পুলিশ তাঁদের সহযোগিতা করবে।

শুধু যে বালি তোলাতেই বেনিয়ম হচ্ছে তা নয়। নদীর পাড়ে তুলে রাখা ওই বালি নিতে আসা লরির যাতায়াতে বাঁধেরও ক্ষতি হচ্ছে। এলাকার মানুষের অভিযোগ, এমনিতেই গঙ্গার পাড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। তার উপর বালির লরি যাতায়াত করায় বাঁধের ক্ষতি তাঁদের আশঙ্কা বাড়িয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sand Trafficking dam damage
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE