ফেলে দেওয়া মাছের কাঁটা, পচে যাওয়া ফল-শাকসব্জি বা খোসা কাজে লাগানো হয়েছিল আগেই। এ বার তালিকায় যোগ হচ্ছে সূর্যের আলো এবং বাতাস।
আর উদ্দেশ্য? এক দিকে পরিবেশ রক্ষা, অন্য দিকে খরচে রাশ টানা।
নিজেদের প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ নিজেরাই উৎপাদনের পথে হেঁটে এমনই উদ্যোগে সামিল হচ্ছে শিবপুরের ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’ (আইআইইএসটি)। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, শিক্ষক, গবেষক, পড়ুয়ারা মিলে হস্টেলের বর্জ্য, বায়ু আর সূর্যের আলো থেকে ক্যাম্পাসেই তৈরি হবে বিদ্যুৎ। শুধু পরিবেশ বাঁচানোই নয়, এতে বিদ্যুতের বিল থেকেও রেহাই মিলবে অনেকটা। আইআইইএসটি-র অধিকর্তা অজয় দাস বলেন, ‘‘বিদ্যুতের বিল বাবদ বহু অর্থ ব্যয় হয়। আমাদের উদ্দেশ্য প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করা।’’
বিদ্যুৎ ব্যবহারের ক্ষেত্রে রাজ্যে প্রথম স্বাবলম্বী প্রকল্পের নজির গড়েছিল সল্টলেকের বিকল্প শক্তি ভবন। ভবনের ছাদে থাকা সৌর শক্তির প্যানেল থেকে যে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়, তা দিয়ে ওই বহুতলের বিদ্যুতের পুরো চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিদ্যুতের গ্রিডেও বাড়তি বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। আইআইইএসটি প্রাথমিক ভাবে নিজেদের তৈরি বিদ্যুৎ ব্যবহার করবে তাদের ক্যাম্পাসেই।
পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ তৈরির ক্ষেত্রে আইআইইএসটি হাত পাকিয়েছে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। গত বছরের শেষের দিকে ছাত্রাবাসগুলি থেকে ফেলে দেওয়া মাছের কাঁটা, সব্জির খোসা, পচে যাওয়া শাকসব্জি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করে এই প্রতিষ্ঠান। কিন্তু হস্টেলগুলি থেকে যে পরিমাণ খোসা, কাঁটা পাওয়া যায়, তাতে খুব সামান্য বিদ্যুৎই উৎপন্ন করা যাচ্ছিল। তাই এর পাশাপাশি সৌর বিদ্যুৎ এবং বায়ু থেকে উৎপন্ন বিদ্যুৎ যোগ করে এখন বিদ্যুৎ উৎপাদনে ধীরে ধীরে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছে প্রতিষ্ঠান। আইআইইএসটি-র গবেষক হিরন্ময় সাহা বলেন, ‘‘বর্জ্য পচিয়ে বায়ো গ্যাস উৎপাদন করার পর থেকেই আমাদের লক্ষ্য ছিল, যে ভাবেই হোক এর শক্তি বাড়াতে হবে। আর তা করতে হবে পরিবেশের কথা মাথায় রেখেই।’’
আইআইইএসটি সূত্রের দাবি, এখনও পর্যন্ত পরীক্ষামূলক ভাবে মাসে ১৫০০ ইউনিট পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ তৈরি করা হচ্ছে। গোটা প্রতিষ্ঠানের জন্য দরকার হয় মাসে সাড়ে তিন লক্ষ ইউনিট। উৎপাদন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত শিক্ষক, গবেষক এবং পড়ুয়ারা বলছেন, ধীরে ধীরে ওই তিন পদ্ধতিতে মাসে সাড়ে তিন লক্ষ ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন করাই তাঁদের লক্ষ্য। এর থেকেও বেশি পরিমাণে বিদ্যুৎ তৈরি করা গেলে বাকিটা তাঁরা রাজ্যের বিদ্যুৎ গ্রিডে দিয়ে দেবেন। এর ফলে প্রতি মাসে গড়ে ৩০ লক্ষ টাকার বিদ্যুৎ-বিলের ধাক্কা থেকে প্রতিষ্ঠানকে বাঁচানো যাবে বলেও দাবি আইআইইএসটি কর্তৃপক্ষের।
প্রতিষ্ঠানের এক কর্তা বলেন, ‘‘আমরা জানতাম যে, শুধু সৌর শক্তি বা শুধু বায়ো গ্যাস থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ব্যবহার করে গোটা প্রতিষ্ঠানের চাহিদা পূরণ করতে পারব না। তাই তিন ধরনের পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সৌর বিদ্যুৎ, বর্জ্য থেকে তৈরি বিদ্যুৎ এবং বায়ু থেকে তৈরি বিদ্যুতের জন্য তিনটি পৃথক ইউনিট থাকবে। প্রতিটি ইউনিট থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ প্রতিষ্ঠানের বিকল্প বিদ্যুৎ লাইনের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy