Advertisement
০৭ মে ২০২৪
সচেতনতায় সাড়া মিলল দুই জেলাতেই

শব্দদৈত্যের দাপট কমায় স্বস্তি

আশঙ্কা ছিল। কিন্তু শব্দ-দানবের তাণ্ডব এ বার বাগে এল অনেকটাই! হাওড়া ও হুগলি— দুই জেলার বেশির ভাগ জায়গাতেই অন্যান্য বারের তুলনায় কালীপুজোর রাতে চকোলেট বোমা, কালীপটকা বা দোদোমার কানফাটানো আওয়াজ পাওয়া গেল কম।

নুরুল আবসার ও প্রকাশ পাল
উলুবেড়িয়া ও চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৬ ০১:২৮
Share: Save:

আশঙ্কা ছিল। কিন্তু শব্দ-দানবের তাণ্ডব এ বার বাগে এল অনেকটাই!

হাওড়া ও হুগলি— দুই জেলার বেশির ভাগ জায়গাতেই অন্যান্য বারের তুলনায় কালীপুজোর রাতে চকোলেট বোমা, কালীপটকা বা দোদোমার কানফাটানো আওয়াজ পাওয়া গেল কম। আলোর উৎসবে মানুষ মাতলেন আতসবাজিতে।

এ যেন অনেকটা বিধাননগর পুলিশ কমিনারেট এলাকার ছবি। এ ওই কমিশনারেট থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, নিয়ম ভেঙে শব্দবাজি ফাটালে তিন মাস থেকে দশ বছর পর্যন্ত সাজার মুখে পড়তে হতে পারে। কিন্তু হাওড়া বা হুগলি জেলা পুলিশ তেমন কোনও ঘোষণা করেনি। তা হলে কী ভাবে বাগে এল শব্দদৈত্য? এই সাফল্যের চাবিকাঠি নানা মাধ্যমে সচেতনতার প্রচার— দাবি করছে পুলিশ ও পরিবেশপ্রেমীরা।

চুঁচুড়া, চন্দননগর, ভদ্রেশ্বর, শ্রীরামপুর, উত্তরপাড়ার মতো শহরাঞ্চলে শব্দবাজির পরিবর্তে মানুষের বেশি ঝোঁক ছিল তুবড়ি, রংমশাল, রকেট বা হাউইয়ের মতো আতসবাজিতে। আরামবাগে কানফাটানো বাজির শব্দ এ বার কার্যত উধাও। কালীপুজোর সন্ধ্যায় আরামবাগ শহরের যে সব রাস্তায় আগে কানে হাত চাপা দিয়ে চলাফেরা করতে হতো, সেই গৌরহাটি মোড়, পি সি সেন রোড সংলগ্ন পুরনো বাজার, ব্লক পাড়া, লিঙ্ক রোডের বসন্তপুর মোড় সর্বত্রই তুবড়ি বা রংমশালের আলোয় কালীপুজোর রাত কেটেছে।

প্রতি বছর শ’পাঁচেক টাকার শব্দবাজি ফাটানো অভ্যেস করে ফেলেছিলেন আরামবাগ ব্লকপাড়ার যুবক শঙ্কর চক্রবর্তী। এ বছর তিনি কোনও শব্দবাজি কেনেননি। তাঁর কথায়, “প্রতিদিন খবরের কাগজ, টিভিতে শব্দদূষণ নিয়ে সচেতনতার খবর দেখেই ঠিক করি, শব্দবাজি আর ‌নয়। তুবড়ি, রংমশাল, হাউই, ফানুস দিয়েই উৎসব পালন করেছি।’’ একই ভাবে শব্দদূষণ নিয়ে সচেতনতার কথা জানিয়েছেন গৌরহাটি মোড় সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা দেবাংশু কুণ্ডু, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের চিন্ময় ঘোষেরা। বিভিন্ন পুজো কমিটির সদস্যেরাও শব্দবাজি নিয়ে সচেতন ছিলেন।

হুগলির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শিল্পাঞ্চল) গৌরব লাল বলেন, ‘‘শব্দবাজিতে লাগাম পরাতে অভিযান চালানো হয়েছে। হরিপাল, চণ্ডীতলা, হরিপাল-সহ নানা জায়গায় ধরপাকড় হয়েছে। মানুষও অনেকটা সচেতন হয়েছেন। তারই ফল মিলেছে।’’ চন্দননগরের বাসিন্দা, পরিবেশবিদ বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়ও বলেন, ‘‘শব্দবাজি অনেক কম ফেটেছে। মানুষের মনে যে চেতনা এসেছে, তাতে আগামী দিনে এর দাপট থেকে পুরোপুরি নিস্তার মিলতে পারে।’’

দিন কয়েক আগে শ্রীরামপুরে শব্দবাজির দাপট রোখার দাবিতে পথে নামেন বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যরা। উদ্যোক্তাদের অন্যতম গৌতম সরকার মনে করেন, ‘‘সচেতনতার হাত ধরেই শব্দদান‌বকে কিছুটা জব্দ করা গিয়েছে। কালীপুজোর বেশ কিছু দিন আগে থেকে লাগাতার প্রচার এবং পুলিশের কড়া পদক্ষেপে শব্দবাজি পুরোপুরি বন্ধ হতে পারে।’’

তবে, জেলার গ্রামাঞ্চলে এতটা সচেতনতা দেখা যায়নি। ধনেখালি, পোল‌বা, দাদপুর, গুপ্তিপাড়া, জিরাট, হরিপাল, জাঙ্গিপাড়ার, চণ্ডীতলার মতো গ্রামীণ এলাকায় শনিবার সন্ধ্যা থেকে প্রচুর শব্দবাজি ফাটে বলে অভিযোগ সাধারণ মানুষের। পরিবেশপ্রেমীদের বক্তব্য, সচেতনতা কর্মসূচি মূলত শহর কেন্দ্রিক হওয়ায় গ্রা্মে শব্দবাজির দাপট সে ভাবে রোখা যায়নি। পুলিশকর্তাদের আশ্বাস, আগামী বছর গ্রামীণ এলাকায় আরও আগে থেকে অভিযান চালানো হবে।

তবে, গ্রামীণ হাওড়ায় কিন্তু সচেতনতার প্রচার কাজে এসেছে। শব্দবাজির আওয়াজ যে একেবারেই কানে আসেনি, তা নয়। তবে প্রকোপ ছিল বেশ কম। সাধারণ মানুষই বলছেন, পুলিশের বিশেষ টহলদারি বা দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের টিকি দেখা না গেলেও কালীপুজোর রাতে বাগনান, উলুবেড়িয়া, আমতা, ডোমজুড়, শ্যামপুর সর্বত্রই রমরমা ছিল আতসবাজিরই। রাত ৮টা পর্যন্ত শব্দবাজি সংক্রান্ত কোনও অভিযোগ কোনও থানায় জমা পড়েনি বলে হাওড়া গ্রামীণ জেলা পুলিশ সূত্রের খবর। পুলিশের দাবি, তাদের কড়া নজরদারির ফলে শব্দবাজি তৈরি বন্ধ হয়েছে। তার সুফল মিলেছে কালীপুজোয়।

এ বার শব্দবাজির দাপট না দেখে অবাক হয়েছেন শ্যামপুরের বাসিন্দা দিবাকর বেরা। তাঁর কথায়, ‘‘এখানে সর্বত্র শুধু আলো। বাজির শব্দ তেমন কানে আসেনি। খুব আনন্দ হয়েছে।’’ আমতার বাসিন্দা দেবাশিস মজুমদার মনে করেন, ‘‘শব্দবাজি যে ক্ষতিকর এ বার তা মানুষ বুঝতে শিখছেন। তারই প্রতিফলন দেখা গিয়েছে।’’

শব্দবাজি বর্জনের জন্য সম্প্রতি মাধবপুরে জনাষাটেক কচিকাঁচা নিজেদের হাতে পোস্টার লিখে বিভিন্ন এলাকায় সাঁটিয়ে দেয়। এই উদ্যোগের পিছনে ছিল ‘মাধবপুর পরিবেশ চেতনা সমিতি’। সমিতির পক্ষে তপন কর এবং জয়িতা কুণ্ডু বলেন, ‘‘মানুষ শব্দবাজির খারাপ দিক বুঝতে শিখছেন।’’ যারা পোস্টার লিখেছিল তাদের মধ্যে সপ্তম শ্রেণির শম্ভূনাথ দাস বা অষ্টম শ্রেণির মানসী দাস বলে, ‘‘আমরা কেউ শব্দবাজি ফাটাইনি।’’

আলোর উৎসবে আলোই চাইছেন মানুষ। কান ফাটানো শব্দ নয়।

(তথ্য সহায়তা: তাপস ঘোষ ও পী়যূষ নন্দী)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sound crackers ramapage reduced
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE