উত্তপ্ত: আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে মোটরবাইকে। বুধবার খানাকুলে। নিজস্ব চিত্র
প্রথম দু’দিন গিয়েছে বিরোধীদের আটকাতে। আরামবাগে এ বার শুরু ঘরের কোঁদল। বুধবার ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ভোটে মনোনয়ন পত্র তোলা ও জমা দেওয়ার তৃতীয় দিন সরগরম তৃণমূলের মূল সংগঠন ও যুব সংগঠনের সংঘর্ষে। সারাদিন কেটে গিয়েছে একে অপরকে তাড়া করে। চলেছে মারধর, মোটরবাইক পোড়ানো। খানাকুল, আরামবাগ, গোঘাট সামলাতে হিমসিম পুলিশ। বেশ কয়েকবার লাঠি উঁচিয়ে তেড়ে গিয়েছেন পুলিশ কর্মীরা। অবাঞ্ছিত ভিড় সে তাড়ায় ছত্রভঙ্গ হলেও খানিক বাদেই আবার জড়ো হয়েছে আগের জায়গায়। খানাকুলে একদফা লাঠি চার্জও করতে হয়েছে। আরামবাগে এসডিপিও কৃশানু রায় অবশ্য বলেন, “সর্বত্রই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে।’’
এ দিন সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ প্রথম অশান্তির খবর আসে খানাকুল ২ নম্বর ব্লকের ভীমতলা থেকে। মাড়োখানা এবং শাবলসিংহপুর থেকে মূল সংগঠনের কয়েকজন সদস্য পঞ্চায়েত প্রার্থী হিসাবে মনেনয়ন পত্র দাখিল করতে যাচ্ছিলেন ব্লক অফিসে। অভিযোগ, ভীমতলার কাছে দলেরই যুব সংগঠনের ছেলেরা তাঁদের পথ আটকায়। অভিযোগ দু’পক্ষই লাঠি, রড নিয়ে আক্রমণ করে। একটি মোটরবাইক পোড়ানো হয়। জখম হন দু’পক্ষের আট জন। তাঁদের নতিবপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং খানাকুল গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হয়। দু’পক্ষই থানায় মৌখিক অভিযোগ জানিয়েছে। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
তৃণমূলের মূল সংগঠনের ব্লক সভাপতি অসিত সাঁতরার অভিযোগ, “মাড়োখানা এবং শাবলসিংহপুর অঞ্চলের ১০ জন দলের টিকিট পেয়ে মনোনয়ন পত্র দাখিল করতে যাচ্ছিলেন। পথে দলেরই যুব সভাপতি নজিবুল করিমের নেতৃত্বে একদল যুবক হামলা করে।” নজিবুল অবশ্য অভিযোগ করেছেন হামলা হয়েছিল তাঁদেরই উপর। তাঁর দাবি, “মূল দলের কিছু দুষ্কৃতী আমাদের ছেলেদের উপর হামলা করেছিল। এলাকার মানুষই তাঁর প্রতিবাদ করেছেন।”
এ দিন সকাল থেকেই পুলিশ ছিল সক্রিয়। তবু আটকানো যায়নি সংঘর্ষ। মহকুমাশাসকের অফিস চত্বর এবং ৬টি ব্লক অফিস— খানাকুল ১ ও ২, গোঘাট ১ ও ২, আরামবাগ এবং পুরশুড়ায় যাতে কেউ ভিড় না করতে পারে সে জন্য তৎপরতা ছিল। তবে তাতে কিছু আটকায়নি। কারণ তৃণমূল কর্মীদের জমায়েত ছিল রাস্তার মোড়ে মো়ড়ে, যাতে বিরোধীরা কেউ ব্লক অফিস বা মহকুমাশাসকের অফিস পর্যন্ত পৌঁছতেই না পারেন। মঙ্গলবারের মারধরের পর এ দিন বিজেপির কোনও প্রার্থীকে দেখা যায়নি মহকুমাশাসকের অফিস চত্বরে। কোনও মনোনয়ন জমা পড়েনি বিজেপির তরফে। তবে পুরশুড়া থেকে সিপিএমের ২ জন জেলা পরিষদের প্রার্থী পদে মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন।
শাসকদলের সম্ভব্য প্রার্থীরা এখনও জানেনই না কে টিকিট পাবেন? তাই সেই আশঙ্কা থেকেই হরিপাল এবং সিঙ্গুরে দুই বিধায়কের অনুগামীরাই মনোনয়নপত্র তুলে জমা দেওয়ার কাজ শুরু করে দিলেন। তবে বুধবার আশঙ্কা থাকলেও বিরোধীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার প্রশ্নে কোনও অশান্তি হয়নি। এদিন সিঙ্গুর বিডিও অফিসে সিপিএম এবং বিজেপি-র প্রার্থীরা নির্বিঘ্নে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।
শাসকদলের দুই বিধায়ক সিঙ্গুরের রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য এবং হরিপালের বেচারাম মান্নার মধ্যে আকচা-আকচি দীর্ঘদিনের। তবে এ বার উপর মহল থেকে জানিয়েছে দেওয়া হয়েছিল— কোনও বিবাদ বরদাস্ত হবে না।
সিঙ্গুরে মোট ১৬ টি পঞ্চায়েত। ৪৭ টি পঞ্চায়েত সমিতির আসন। কিন্তু এখনও ঠিক হয়নি শাসকদলের কে বা কারা টিকিট পাবেন। তাই ঝুঁকি না নিয়ে সব পক্ষই মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়াও শুরু করে দিয়েছে। রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন,“আমরা মোট ৩৯ টা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছি। তবে পুরো বিষয়টি চূড়ান্ত করবেন পর্যবেক্ষক অরূপ বিশ্বাস।” বেচারাম মান্না বলেন, “বৃহস্পতি ও শুক্রবার পুরোদমে আমাদের অনুগামীরা মনোনয়নপত্র জমা দেবেন। তবে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করবেন রাজ্য নেতৃত্ব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy