মাথায় ইট বয়ে বেড়াচ্ছেন জিয়াদুল ইসলাম। ছবি: দীপঙ্কর দে।
অলিম্পিক চলছে। কিন্তু সে দিকে নজর দেওয়ার সময় নেই জিহাদুলের। সাত সকালে চা-বিস্কুট খেয়ে প্রায় এক ঘণ্টা সাইকেল চালিয়ে অনুশীলনে যাওয়া। সেখানে ঘণ্টা তিনেক অনুশীলনের পরে বাড়ি ফিরেই দু’টো মুড়ি চিবিয়ে চাষের খেতে। আর দুপুরে রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করতে যাওয়া। এটাই রোজনামচা ট্রিপল জাম্পে রাজ্যের রেকর্ডধারী শেখ জিহাদুল ইসলামের।
ডানকুনির মোল্লাবেড়ের বাসিন্দা জিয়াদুলের বিঘা দেড়েক পারিবারিক চাষ জমি ছিল। নিজেদের এবং পরের জমিতে কাজ করে সংসার চালাতেন বাবা শেখ সাইয়াদুল ইসলাম। বয়সের কারণে এখন তিনি আর কাজ করতে পারেন না। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পড়ুয়া ভাইয়ের পড়াশোনার খরচ জোগানোর জন্য পরিবারিক জমি বিক্রি করে দিতে হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে পরের জমিতে খেতমজুরি আর রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করেন জিহাদুল। কখনও আবার কারও বাড়ির আবর্জনা বা জঙ্গল পরিষ্কার করতেও ডাক পড়ে তাঁর। জিহাদুলের দাদাও রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করেন।
এই আর্থিক অনটনে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করেও অ্যাথলিট হিসেবে আরও উঁচুতে পৌঁছনোর চেষ্টার কসুর করেন না উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ জিহাদুল। তবে অনুশীলন থেমে থাকেনি। নিয়ম মাফিক অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। সুযোগ পেলেই প্রতিযোগিতায় যোগও দেন। গত তিন বছর ধরে রাজ্য মিটে ট্রিপল জাম্পে তিনিই চ্যাম্পিয়ন। এর মধ্যে ২০১৪ সালের রাজ্য মিটে ১৫.৩৫ মিটার লাফিয়ে রেকর্ড করেন। ভেঙে দেন অলিম্পিয়ান সঞ্জয় রাইয়ের বারো বছরের পুরনো রেকর্ড (১৫.২৪ মিটার)। জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায়, বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে বা ফেডারেশন কাপেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন তিনি। সিনিয়র ন্যাশনালে, ফেডারেশন কাপে ফাইনালিস্ট ছিলেন। অল ইন্ডিয়া ইউনিভার্সিটি প্রতিযোগিতায় প্রথম আটে পৌঁছেছেন। চলতি বছরে রাজ্য মিটে ট্রিপল জাম্পে সেরা হয়েছেন ১৪.৮৫ মিটার লাফিয়ে। ট্রিপল জাম্পের পাশাপাশি বিভিন্ন মিটে লং জাম্পেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তবে, প্রিয় ইভেন্ট অবশ্যই ট্রিপল জাম্প।
জিহাদুল জানান, ছোট থেকেই তাঁর স্বপ্ন বড় অ্যাথলিট হওয়ার। কিন্তু কলকাতার মাঠে অনুশীলন করেও কাঙ্খিত সাফল্য আসছিল না। ২০০৯ সালে শ্রীরামপুর অ্যাথলেটিক ফোরামে আসেন। কোচ শুভময় দাসের পরামর্শে ট্রিপল জাম্পার হিসেবে দৌড় শুরু করেন। শুভময়বাবুর কথায়, ‘‘গত তিন বছর ধরে ওর পারফর্ম্যান্স খুবই ভাল। অনেক দূর যাওয়ার প্রতিভা রয়েছে। কিন্তু ওর পরিবারের যা অবস্থা, তাতে খেলা চালিয়ে যাওয়াই দুষ্কর।’’ অ্যাথলিটদের ব্যাপারে জেলা সংস্থা বা প্রশাসন কারওরই নজর নেই বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে অ্যাথলেটিক ফোরাম। হুগলি জেলা ক্রীড়া সংস্থার পরামর্শদাতা তপন মজুমদার বলেন, ‘‘ছেলেটি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে ওর জন্য কী করা যায় সেটা নিশ্চয়ই ভেবে দেখা হবে। আমরাও ওর ব্যাপারে খোঁজখবর নেব।’’
মাথায় ইট নিয়ে রাজমিস্ত্রির কাছে যেতে যেতে জিহাদুল বললেন, ‘‘আরও উঁচুতে যেতে চাই। কিন্তু আর চালাতে পারছি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy