E-Paper

‘বহিরাগত’ জিপ নিয়ে ভোটের প্রচারে নিয়মভঙ্গই কি নিয়ম

ভোটের বাজারে ভিন্‌ রাজ্য থেকে আনানো এমন হুডখোলা জিপেরই এখন চাহিদা প্রবল। পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, গত দেড় মাসে এই রাজ্যে প্রায় ৪০০টিরও বেশি এমন জিপ এসেছে।

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২০ মে ২০২৪ ০৬:৩৬
চওড়া চাকাওয়ালা হুড খোলা জিপে চেপে প্রচার যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়ের। রবিবার, বারুইপুরে।

চওড়া চাকাওয়ালা হুড খোলা জিপে চেপে প্রচার যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়ের। রবিবার, বারুইপুরে। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল।

হেডলাইটের আলো এতটাই রঙিন আর জোরাল যে সামনে থেকে দেখলে চোখ ঝলসে যায়। অথচ, চোখ টানতেই নাকি জোরাল আলোর হেডলাইট আছে তেমন গাড়িই বেছে নেওয়া হয়েছে। চাকাও নির্ধারিত মাপের চেয়ে এতটাই চওড়া যে পাকা হাতের চালক না হলে বিপদ ঘটে যেতে পারে যে কোনও মুহূর্তে। রাস্তার ধারে ভিড় করা উৎসাহী জনতার পায়ের উপর দিয়েই চাকা চলে যাওয়ার আশঙ্কা প্রবল! অভিযোগ, ওই সব গাড়ির বেশির ভাগেরই আবার নম্বরপ্লেট নেই। যেগুলির আছে, সেগুলির নম্বর দেখে বোঝারও উপায় নেই আদতে সেটি কোথাকার! বেশির ভাগেরই নেই যথাযথ কাগজপত্রও।

ভোটের বাজারে ভিন্‌ রাজ্য থেকে আনানো এমন হুডখোলা জিপেরই এখন চাহিদা প্রবল। পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, গত দেড় মাসে এই রাজ্যে প্রায় ৪০০টিরও বেশি এমন জিপ এসেছে। পঞ্চম দফা ভোটের ঠিক আগে এমন আরও ১০০টি জিপ খাস কলকাতায় ঢোকার তথ্য রয়েছে পুলিশের কাছেও। কিন্তু বছরের পর বছর এমন গাড়িতে প্রচার চললেও কোনও পক্ষই ভাবতে চান না এগুলির আইনভঙ্গের দিকটি নিয়ে।

উল্টে উত্তর কলকাতার তৃণমূল প্রার্থী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘এত বছর রাজনীতি করছি, ভোটের প্রচার হুড খোলা জিপ ছাড়া ভাবতে পারি না। দিন কয়েকের অনিয়ম হলেই বা কী যায় আসে!’’ কলকাতা দক্ষিণের তৃণমূল প্রার্থী মালা রায়ের মন্তব্য, ‘‘জিপের একটা আলাদা আকর্ষণ তো আছেই। দারুণ ভাবে সাজানো গাড়ি দেখতেও অনেক লোক ভিড় করেন। তাই বিধিভঙ্গ হলেও জিপের মোহ কাটানো যায় না।’’ দমদমের বাম প্রার্থী সুজন চক্রবর্তী বললেন, ‘‘যে হারে জ্বালানির দাম বেড়েছে, তাতে বাইরে থেকে গাড়ি আনিয়ে প্রচার করার কথা সব দল ভাবতে পারছে না। তবে আগে এমন গাড়ির বিধিভঙ্গের দিকটা নিয়ে ভাবিনি।’’

পরিবহণ দফতর জানাচ্ছে, ভিন্‌ রাজ্যের নম্বর প্লেট লাগানো কোনও গাড়িরই ছ’মাসের বেশি সময় এই রাজ্যের রাস্তায় ঘোরার কথা নয়। নিয়ম অনুযায়ী, যে রাজ্যে গাড়িটি নথিভুক্ত রয়েছে, সেখান থেকে এনওসি (নো অবজেকশন সার্টিফিকেট) নিয়ে তবে এই রাজ্যে ঢোকার আবেদন জানাতে হবে। এর পরে রিজিয়োনাল ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (আরটিও) সমস্ত নথিপত্র খতিয়ে দেখে নতুন ঠিকানা এবং নতুন নম্বরপ্লেট সহযোগে গাড়িটি নথিভুক্ত করাবে। নতুন রাজ্যে নথিভুক্তির জন্য সময় পাওয়া যাবে তিন মাস। কিন্তু কোনও গাড়ি যদি ছ’মাসের মধ্যে আগের রাজ্যে ফিরে যায়, তা হলে নম্বরপ্লেট বদল না করলেও চলে।

এক আরটিও অফিসার বললেন, ‘‘রোড ট্যাক্সের বিষয় যে হেতু রাজ্যের অধীন, তাই এক রাজ্যের গাড়ি অন্য রাজ্যে গিয়ে রোড ট্যাক্স না দিয়ে চলতে পারে না। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে এই রাজ্যে ঢুকতে গেলে বর্ডার চেকপোস্টে ট্যাক্স মিটিয়ে তবে ঢুকতে হয়। কলকাতার দিকে আসার জন্য আসানসোল এবং ঝাড়গ্রামে এমন চেকপোস্ট রয়েছে। তবে বাণিজ্যিক কোনও গাড়ির সারা দেশ ঘোরার পারমিট করা থাকলে আলাদা ব্যাপার। তবে সে ক্ষেত্রেও ১৫ বছরের পুরোনো জিপের রাস্তায় ঘোরার কথা নয়।’’

কিন্তু ভোট প্রচারের জন্য আনানো গাড়ি কি এই সমস্ত নিয়ম মেনে চলছে? মল্লিকবাজারের একটি ভ্রমণ সংস্থার মালিক বললেন, ‘‘ভোট এলেই জিপের চাহিদা বেড়ে যায়। এ বার তাই আগেই রাজস্থান থেকে ১০টা এমন জিপ আনিয়ে রেখেছিলাম। এর মধ্যে সাতটা বিভিন্ন জেলায় ঘুরছে। কিন্তু কোনও বারই এত নিয়ম মানতে হয় বলে শুনিনি।’’ লেক টাউনের আর একটি পুরনো গাড়ি সংস্থার মালিকের মন্তব্য, ‘‘পঞ্জাবের মোগা থেকে এমন ১৩টা পুরনো হুড খোলা জিপ আনিয়েছি। নেতাদের প্রচারে এই সব জিপ যায়। ফলে পরিবহণ দফতর কেন, পুলিশও ছুঁয়ে দেখে না।’’ যদিও পরিবহণ দফতরের এক পদস্থ কর্তার দাবি, ‘‘এমন কোনও গাড়ি নিয়েই প্রচারের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। পুলিশকে এ বার কড়া হতে বলব।’’

লালবাজারের ট্র্যাফিক পুলিশ বিভাগের কর্তারা জানাচ্ছেন, সামনে বা পিছনে রঙিন আলো ব্যবহার করলে কেন্দ্রীয় মোটর ভেহিক‌্লস রুলের ১০৮ ধারায় পদক্ষেপ করা যেতে পারে। চোখ ঝলসানো হেডলাইট ব্যবহারের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ মোটর ভেহিক‌্লস রুলের ২৯৯ (১) ধারায় পদক্ষেপ করা যায়। অবৈধ নম্বরপ্লেট ও বিপজ্জনক টায়ার ব্যবহারের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় মোটর ভেহিকল‌্স রুলের ৫০(২)(ডি)(বি) এবং ৯৪ (২) ধারায় ব্যবস্থা নেওয়া যায়। ফিটনেস সার্টিফিকেট ছাড়া গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে আরও কড়া ধারায় ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা যায়।

কিন্তু সে সব আদৌ করা হচ্ছে কি? লালবাজারের ট্র্যাফিক পুলিশকর্তার মন্তব্য, ‘‘এমন সব ক্ষেত্রে বুঝিয়ে কার্যোদ্ধারেরই চেষ্টা করা হয়।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Lok Sabha Election 2024 Election Campaigns Road Safety Rules

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy