কলকাতা ছাড়ালেই হাওড়ায় দামোদরের পূর্ব তীরে ছবির মতো জনপদ আমতা। কলকাতার মতো এ শহরের পত্তনের কোনও ইতিহাস নেই। তবে নানা ঐতিহ্যে পুষ্ট এবং একইসঙ্গে জর্জরিত সমস্যার যাঁতাকলে। তাই ঐতিহ্যের সুখস্বপ্নে ডুব দিয়ে শুধু বিভোর হয়ে থাকা নয়, নানা সমস্যা থেকেও মুক্তির আশায় এই শহরের মানুষ।
হাওড়া জেলা জুড়ে যে বিশাল গ্রামীণ এলাকা রয়েছে, তার মধ্যে ইংরেজদের সময় থেকে আমতাকেই একমাত্র শহর বলে গণ্য করা হত। এই শহরে ১৯৫৬ সালে প্রতিষ্ঠিত রামসদয় কলেজ জেলার অন্যতম প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। পীতাম্বর হাইস্কুল গড়ে ওঠে ১৮৫৭ সালে। শহরের প্রাচীন মেলাইচণ্ডী মন্দির অনেক কিংবদন্তির সাক্ষ্য দেয়। বেতাইয়ে ঘরে ঘরে গড়ে উঠেছে ইঞ্জিনিয়ারিং কারখানা। অবশ্য শুধু এ সবই নয়, শহর গড়ে ওঠার যে দু’টি প্রধান শর্ত থাকা প্রয়োজন সেই রেল ও জলপথ যোগাযোগের যুগলবন্দি একমাত্র আমতাতেই ছিল। যে রেলপথ চালু হয়েছিল স্যার বীরেন মুখোপাধ্যায়ের মতো শিল্পদ্যোগীর হাত ধরে। হাওড়া থেকে আমতার মধ্যে ছোট লাইনের সেই ট্রেন পরিচিত ছিল মার্টিন রেল নামে। শুধু আমতা নয়, হাওড়াবাসীর কাছে এই ট্রেন ছিল আপনজনের মতো। কারও বাড়ির উঠোন, কারও বাগানের ভিতর দিয়ে ইঞ্জিনের কালো ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে এগিয়ে যেত সেই রেলগাড়ি। মজার এই রেলগাড়ি নিয়ে অনেক গল্পও চালু রয়েছে। যার একটি হল, আত্মঘাতী হওয়ার জন্য কেউ এই রেলপথে শুয়ে পড়লে চালক ট্রেন থামিয়ে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে তাঁকে বাড়ি পাঠিয়ে দিতেন। কিন্তু ১৯৭০ সালে পাকাপাকিভাবে বন্ধ হয়ে যায় মার্টিন রেল। তিরিশ বছর পরে ২০০০ সালের গোড়ায় সেই আমতায় চালু হল হাওড়া-আমতা ইএমইউ লোকাল ট্রেন। ঝাঁ চকচকে আমতা স্টেশন চত্বর আধুনিক জীবনের পরিচয় দিলেও, আজও এলাকার প্রবীণদের স্মৃতিমেদুর করে তোলে আমতা বাসস্ট্যান্ডের কাছে মার্টিন রেলের সেই পুরনো স্টেশন। মনে উঁকি মারে সেই ট্রেনকে ঘিরে নানা ঘটনার স্মৃতি।