Advertisement
E-Paper

‘ঝাঁপ’ দেওয়া ছাত্রী বসবে মাধ্যমিকে, নির্দেশ হাইকোর্টের

তিন শিক্ষিকার ‘অপমান’ সহ্য করতে না পেরে স্কুলের চারতলা থেকে ঝাঁপ দিয়েছিল দশম শ্রেণির এক ছাত্রী। এর পরে তার বাবা বালি থানায় ওই শিক্ষিকাদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা 

শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:৫২

তিন শিক্ষিকার ‘অপমান’ সহ্য করতে না পেরে স্কুলের চারতলা থেকে ঝাঁপ দিয়েছিল দশম শ্রেণির এক ছাত্রী। এর পরে তার বাবা বালি থানায় ওই শিক্ষিকাদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন। এর জেরেই স্কুল কর্তৃপক্ষ তাঁর মেয়েকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসতে দিচ্ছেন না বলে সম্প্রতি

কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন ওই ব্যক্তি।

বুধবার সেই মামলায় বিচারপতি মৌসুমী ভট্টাচার্য সেই স্কুলের কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন, ছাত্রীর অ্যাডমিট কার্ড সংক্রান্ত যাবতীয় নথি এ দিনই মধ্যশিক্ষা পর্ষদের হাতে তুলে দিতে হবে। পর্ষদ কর্তৃপক্ষকে বিচারপতির নির্দেশ, ছাত্রীর কাছে অ্যাডমিট কার্ড পৌঁছে দিতে হবে আজ, বৃহস্পতিবারের মধ্যেই।

ওই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর বাড়ি বালির শান্তিনগরে। স্কুল সূত্রের খবর, বঙ্গশিশু বালিকা বিদ্যালয়ের ওই পড়ুয়া গত ১২ এপ্রিল স্কুলের চারতলা থেকে ঝাঁপ দেয়। পুলিশকে সে জানিয়েছিল, পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রী তার নামে মিথ্যা অভিযোগ করেছিল। তাতে পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস টিচার মৌসুমী নন্দী দশম শ্রেণির ওই পড়ুয়াকে ডেকে পাঠান প্রধান শিক্ষিকা বর্ণালী বসুর ঘরে। তদন্তকারীদের কাছে সে অভিযোগ করে, সেই সময়ে দশম শ্রেণির ক্লাস টিচার নবালী ভট্টাচার্যও সেখানে হাজির ছিলেন। ওই তিন শিক্ষিকা মিলে কোনও কথা না শুনে দশম শ্রেণির ওই ছাত্রীকে তীব্র অপমান করেন বলে অভিযোগ। সে কান্নাকাটি করলে তাকে স্কুলের স্টোর রুমে বসিয়ে রাখা হয় বলেও জানানো

হয়েছিল পুলিশকে।

পুলিশ সূত্রের খবর, এর পরেই ওই ছাত্রী সকলের চোখ এড়িয়ে চারতলায় গিয়ে বারান্দা থেকে ঝাঁপ দেয়। ঘটনার পরে স্কুলের ভূমিকা নিয়ে অভিযোগ ওঠে। রক্তাক্ত

অবস্থায় পড়ে থাকলেও ওই ছাত্রীকে তৎক্ষণাৎ হাসপাতালে না নিয়ে গিয়ে স্থানীয় চিকিৎসককে ডেকে এনেছিলেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। পরে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো অ্যাম্বুল্যান্স ডাকা হয়। স্কুলে তিন শিক্ষিকার গাড়ি থাকা সত্ত্বেও তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুল্যান্স আসার অপেক্ষা কেন করা হল, প্রশ্ন উঠেছিল তাতে। কারণ, চিকিৎসক-অ্যাম্বুল্যান্স আসার সময় মিলিয়ে প্রায় এক ঘণ্টা রক্তাক্ত অবস্থায় স্কুলেই পড়ে ছিল ওই ছাত্রী। তার দু’টি পা-ই ভেঙে যায়। কোমর ও মাথাতেও গুরুতর চোট লাগে। কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দীর্ঘ দিন ধরে তার চিকিৎসা চলে বলে জানায় পুলিশ।

আইনজীবী দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ১৯ এপ্রিল আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ দায়ের করেন ছাত্রীর বাবা। পুলিশ জুভেনাইল জাস্টিস আইনে মামলা রুজু করে। এ দিন ওই ছাত্রীর মা বলেন, ‘‘হাসপাতালে গিয়ে প্রধান শিক্ষিকা জানিয়েছিলেন, আমার মেয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে পারবে। কিন্তু পরে আর তাঁরা কোনও সহযোগিতা করেননি।’’ তিন শিক্ষিকা আদালত থেকে আগাম জামিনও নেন।

পুলিশ সূত্রের খবর, ছাত্রী মে মাসে হাসপাতাল থেকে বাড়ি আসে। এখন ভর দিয়ে অল্প হাঁটতে শুরু করেছে ছাত্রী। তার শারীরিক অবস্থার কথা সব সময়েই স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানাতেন বলে দাবি ওই ছাত্রীর বাবার।

কিছু দিন আগে মেয়ে পরীক্ষায় বসতে মানসিক ভাবে প্রস্তুত বলে স্কুলে গিয়ে জানান ওই ব্যক্তি। তাঁর দাবি, স্কুলে যোগাযোগ করলে কর্তৃপক্ষ জানান, টেস্টে না বসায় ওই ছাত্রী মাধ্যমিক দিতে পারবে না। আরও অভিযোগ, শিক্ষিকাদের বিরুদ্ধে মামলা তুলে না নিলে কখনওই তার মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়া হবে না বলেও জানানো হয়। এর পরেই আদালতের দ্বারস্থ হন ছাত্রীর বাবা।

এ দিন পর্ষদের আইনজীবী সঞ্জীব দাস আদালতে জানান, অ্যাডমিট কার্ড দিতে হলে স্কুল থেকে কিছু নথি পাওয়া দরকার। তার ভিত্তিতেই কার্ড দেওয়া হবে। স্কুল কর্তৃপক্ষের

আইনজীবী জানান, ছাত্রীকে পরীক্ষায় বসতে দিতে তাঁদের আপত্তি নেই। এর পরেই স্কুলের তরফে এ দিন ওই ছাত্রীর বাড়িতে অশিক্ষক কর্মী পাঠিয়ে কাগজপত্রে সই করানো হয় বলে স্কুল সূত্রের খবর। পরে বর্ণালীদেবী বলেন, ‘‘ওই ছাত্রীর বাবাকে বলা হয়েছিল, টেস্টের সময়ে অন্তত দু’দিন ওকে কিছু ক্ষণের জন্য নিয়ে আসতে। কিন্তু ছাত্রী স্কুলে ঢুকতে চায় না

বলেই জানান তার বাবা। টেস্ট দিয়ে তবেই চূড়ান্ত পরীক্ষায় যেতে হয়, এটাই নিয়ম। কিন্তু এখন হাইকোর্ট যখন নির্দেশ দিয়েছে, তা মানতেই হবে।’’

High Court Education Academics Calcutta High Court
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy