Advertisement
২০ মে ২০২৪

বাবা জানল না, আক্ষেপ পম্পার ছোটা ভীম প্রিয় কার্টুন অনিতেশের

পরীক্ষা ভাল হওয়ায় ফল ভাল হবে তা জানতই চুঁচুড়ার দেবদত্তা, সায়রী, ডানকুনির সোহম কিংবা শ্যামপুরের সায়নদীপ। তাই বলে একেবারে মেধা তালিকায় তাদের নাম উঠে পড়বে, এটা ভাবতে পারেনি।

সাফল্যের হাসি। মা-বাবার সঙ্গে দেবদত্তা।

সাফল্যের হাসি। মা-বাবার সঙ্গে দেবদত্তা।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৬ ০২:২৭
Share: Save:

এক থেকে দশের মধ্যে ৬৬ জন। তার মধ্যে হুগলিরই দশ। দু’জন হাওড়ার।

পরীক্ষা ভাল হওয়ায় ফল ভাল হবে তা জানতই চুঁচুড়ার দেবদত্তা, সায়রী, ডানকুনির সোহম কিংবা শ্যামপুরের সায়নদীপ। তাই বলে একেবারে মেধা তালিকায় তাদের নাম উঠে পড়বে, এটা ভাবতে পারেনি। তাই ফল ঘোষণা হতেই নিজেদের উচ্ছ্বাস আর চেপে রাখতে পারেনি তারা।

চুঁচুড়ার বিনোদিনী বালিকা বিদ্যালয়ের দেবদত্তা পালের বাড়ি ঘুঁটিয়াবাজারে রামকৃষ্ণ লেনে। ৬৮২ পেয়ে মাধ্যমিকে সে রাজ্যে দ্বিতীয়। বাবা ব্যাঙ্ককর্মী। মা জেলা সদর হাসপাতালের নার্স। দাদা ডাক্তার। পড়াশোনার পাশপাশি নাচ-গানেও সমান পারদর্শী দেবদত্তার কথায়, ‘‘ভাল ফলের পিছনে বাবা-মায়ের পাশাপাশি স্কুলের শিক্ষিকাদের ভূমিকাও অপরিসীম। ইচ্ছা, ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করার।’’ সব সময় পড়তে? প্রশ্নের উত্তরে দেবদত্তা বলে, ‘‘পড়াশোনার কোনও নির্দিষ্ট সময় ছিল না আমার। যখন ভাল লাগত তখনই বই নিয়ে বসে পড়তাম।’’

মঙ্গলবার জন্মদিন ছিল চুঁচুড়া বালিকা বাণীমন্দিরের ছাত্রী সায়রী ভট্টাচার্যের। মেয়ের জন্মদিনে টিভিতে মেধা তালিকায় তার পঞ্চম স্থানে থাকার খবর পেয়ে উচ্ছ্বসিত সায়রীর পরিবার। ৬৭৯ নম্বর পেয়েছে সে। ছবি আঁকতে ভালবাসে সায়রী, ভালবাসে খেলাধূলাও। তার সঙ্গেই যুগ্মভাবে পঞ্চম হয়েছে ডানকুনির শ্রীরামকৃষ্ণ শিশুতীর্থ উচ্চ বিদ্যালয়ের সোহম চৌধুরী। বাড়ি ডানকুনিরই রামকৃষ্ণবাটি কদমতলায়। বাবা মোহনলালবাবু হাওড়ার বলুহাটি উচ্চ বিদ্যালয়ে বাংলার শিক্ষক। মা সঞ্চিতাদেবী গৃহবধূ। দু’জনেই জানালেন, ‘‘পরীক্ষার বেশ কিছু দিন আগে থেকেই কোলাইটিসে ভুগছিল সোহম। পেটে অসম্ভব যন্ত্রণা হত। পরীক্ষার আগে প্রায় দেড় মাস বিছানায় কাটায়। পরীক্ষা দিয়েছে অসুস্থতা নিয়েই।’’ তার পরেও ছেলের এমন ফলে নিজেদের আনন্দ চেরে রাখতে পারছিলেন না চৌধুরী দম্পতি। মোহনবাবুর কথায়, ‘‘নিজের মনের জোরেই এতটা ভাল ফল করেছে ছেলে।’’ দিনে ঘণ্টাপাঁচেক পড়েছে সোহম। পড়ার পাশপাশি যোগাসন, গান করা, গান শোনা, সিনেমা কিছুই বাদ যায়নি। যোগাসনে জাতীয় পর্যায়েও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে সে। বিজ্ঞা‌ন নিয়ে পড়তে চায় সোহম।

সায়রীর সহপাঠী পম্পা সিংহ মহাপাত্র ৬৭৭ নম্বর পেয়ে মেধা তালিকায় সপ্তম স্থানে। ইচ্ছা চিকিৎসক হওয়ার। পরীক্ষার আগে দিনে তিন থেকে চার ঘণ্টা পড়ছে সে। তবে মেধা তালিকায় স্থান পেলেও আনন্দ করতে পারছে না সে। কেন? পরিবার সূত্রে জানা গেল, কঠিন রোগে ভুগছিলেন পম্পার বাবা। মেয়ের পরীক্ষার মধ্যেই মারা যান। ভাল ফল করেও তাই আক্ষেপ পম্পার, ‘‘বাবা জানতে পারল না।’’

রাজ্যে সপ্তম হয়েছে উত্তরপাড়া মডেল স্কুলের সৌরদীপ নাথও। বেলুড়ের হাজরাপাড়ার বাসিন্দা সৌরদীপের তিন জন গৃহশিক্ষক ছিল। ক্লাস ওয়ান থেকেই বরাবর প্রথম হলেও মাধ্যমিকে ছেলে যে মেধা তালিকায় জায়গা করে নেবে, ভাবতে পারেননি বাবা নিলয়বাবু। বললেন, ‘‘ওর মা ও আমি ভীষণ আনন্দিত।’’ শুধু পড়াশোনা নয়, নাটকেও আগ্রহ রয়েছে সৌরদীপের। জানা গেল পাড়ার গ্রুপে নিয়মিত নাটক, আবৃত্তি করে সে। উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান নিয়েই পড়তে চায় সৌরদীপ।

মগরার নতুনগ্রামের বাসিন্দা অনিতেশ রায়চৌধুরী মেধা তালিকায় অষ্টম স্থানে জায়গা করে নিয়েছে। মগরা উত্তমচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রটির নম্বর ৬৭৬। পড়াশোনার পাশাপাশি ছড়া লিখতে ভালবাসে অনিতেশ। ছোটা ভীম তার প্রিয় কার্টুন চরিত্র। আর ক্রিকেটে হিরো বিরাট কোহলি।

৬৭৫ পেয়ে রাজ্যে নবম স্থান পেয়েছে সায়নদ্বীপ অধিকারী। হাওড়ার শ্যামপুরের নারায়ণপুরের বাসিন্দা সায়নদীপ জয়নগর নস্করপুর এফসি হাইস্কুলের ছাত্র। বাবা সুব্রত অধিকারীর ছোট মুদিখানার দোকান। মা ছাপোষা গৃহবধূ। পঞ্চম শ্রেণি থেকে স্কুলে বরাবরই প্রথম স্থান অধিকার করত সায়নদীপ। তার সঙ্গেই নবম স্থানে রয়েছে শ্রীরামপুর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের সৌমিলি বসাক। টিভি-মোবাইলে একেবারেই ঝোঁক না থাকলেও এ দিন সকালে টিভিতে তার নাম দেখার পর থেকেই বাড়িতে ঘন ঘন মোবাইল বেজে গিয়েছে। অভিনন্দনের বন্যায় ভেসেছে গোটা পরিবার।

আরামবাগের কাপসিট উচ্চ বিদ্যালয়ের সাগ্নিক ঘোষ এবং খানাকুলের কেদারপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সৌরভ মাজি ৬৭৫ নম্বর পেয়ে যুগ্মভাবে মেধা তালিকায় নবম স্থানে। বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে ইচ্ছুক সাগ্নিক নিজের সাফল্যের রহস্য জানাতে গিয়ে বলে, “নিয়মিত ক্লাস করেছি। টেক্সট বই ভাল করে পড়েছি। দিনে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা পড়তাম।” ক্রিকেটের দারুণ ভক্ত সাগ্নিক। নিয়মিত ক্লাস ও টেক্সট বই খুঁটিয়ে পড়া তারও সাফল্যের মূলে বলে জানিয়েছে সৌরভ। ভবিষ্যতে ডাক্তার হতে চায় সে।

জিরাট কলোনি উচ্চ বিদ্যালয়ের অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায় মেধা তালিকায় দশম স্থানে রয়েছে। জিরাটেরই পাটুলি গ্রামের বাসিন্দা অনির্বাণ শাহরুখ খানের ভক্ত। ডাক্তার হতে চায় অনির্বাণ। আর তাই বিজ্ঞান নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হতে চায় সে।

ছবি: তাপস ঘোষ, মোহন দাস, দীপঙ্কর দে, সুশান্ত সরকার, প্রকাশ পাল ও সুব্রত জানা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Madhyamik Students
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE