Advertisement
E-Paper

উন্নতিতেও পা যেন মাটিতে থাকে, পড়ুয়াদের প্রণব

শিক্ষকতা থেকে পা দিয়েছিলেন রাজনীতির অলিন্দে। উত্থানটাও দেখার মতো। কখনও তিনি প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি, কখনও সাংসদ, কখনও বিদেশমন্ত্রী, কখনও প্রতিরক্ষামন্ত্রী বা অর্থমন্ত্রী।

নুরুল আবসার

শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:৩৩

বর্ণময় তাঁর কর্মজীবন।

শিক্ষকতা থেকে পা দিয়েছিলেন রাজনীতির অলিন্দে। উত্থানটাও দেখার মতো। কখনও তিনি প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি, কখনও সাংসদ, কখনও বিদেশমন্ত্রী, কখনও প্রতিরক্ষামন্ত্রী বা অর্থমন্ত্রী। সামলেছেন যোজনা কমিশনের ভাইস-চেয়ারম্যানের গুরুদায়িত্বও। সবশেষে দেশবাসী তাঁকে দেখেছেন রাষ্ট্রপতি হিসেবে।

তিনি— বাঙালির ‘কাছের মানুষ’ প্রণব মুখোপাধ্যায়। সোমবার নিজের প্রথম কর্মস্থল আমতার তাজপুরে এম এন রায় ইনস্টিটিউশনের অনুষ্ঠানে এসে ছাত্রছাত্রীদের তাঁর পরামর্শ, ‘‘মনে রাখবে উন্নতির কোনও সীমা নেই। স্কাই ইজ দ্য লিমিট। একই সঙ্গে দেখবে, যতই উন্নতি করো না কেন, পা যেন মাটিতে থাকে।’’

এই স্কুলেই শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন প্রণববাবু। স্কুলের শতবার্ষিকী গেটের দ্বারোদ্ঘাটন এবং প্রতিষ্ঠাতা গণিতজ্ঞ মানবেন্দ্রনাথ রায়ের আবক্ষ মূর্তির আবরণ উন্মোচন করতেই এ দিন প্রণববাবুর আসা। প্রাক্তন মাস্টারমশাইকে দেখতে ভরে গিয়েছিল স্কুল চত্বর। ছাত্রছাত্রী, অভিভাবকেরা তো ছিলেনই, সাধারণ গ্রামবাসীও চলে আসেন। খুব বেশিদিন এখানে তিনি শিক্ষকতা করেননি। নিজেই জানালেন, মাস তিন-চার। তবু এই স্বল্পমেয়াদি শিক্ষক-জীবনের স্মৃতি তাঁর আজও টাটকা।

কেমন সেই স্মৃতি?

প্রণববাবু জানান, ১৯৫৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষে এখানে শিক্ষক হিসাবে যোগ দেন। এখনকার মতো উন্নত রাস্তাঘাট তখন ছিল না। হাওড়া থেকে ট্রেন ধরে আমতায় নামতেন আড়াই ঘণ্টা পরে। তার পরে এক ঘণ্টা হাঁটা। দামোদর পেরিয়ে স্কুলে আসতেন। তবে, রোজ যাতায়াত করতেন না। স্কুলের সম্পাদকের বাড়িতে থাকতেন। ছাত্রদের সঙ্গেই বেশি মিশতেন। তাদের বাড়ি গিয়ে রেডিওতে খবর শুনতেন। এ ভাবেই সময় কাটাতেন।

বয়স কম হওয়ায় পড়াতে গিয়ে তাঁকে যে বিচিত্র পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হতো, সে কথাও জানান প্রাক্তন মাস্টারমশাই। তাঁর কথায়, ‘‘সদ্য ছাত্রাবস্থা কাটিয়ে শিক্ষক হিসাবে যোগ দিয়েছি। ভয় করত, ছাত্রেরা আমাকে দেখে হেসে ফেলবে না তো? তাই মুখ গোমড়া করে পড়াতাম। যাতে ছাত্রেরা আমাকে শিক্ষক হিসাবে ভয় করে। ছাত্রাবস্থায় মাস্টারদের প্রণাম করতাম। আমিই শেষ পর্যন্ত মাস্টার হলাম!’’

এই স্মৃতিচারণের সঙ্গে নিজের উপলব্ধির কথা জানাতেও ভোলেননি প্রণববাবু। তাঁর কথায়, ‘‘পড়ানোর থেকে আনন্দের আর কিছু নেই। সেই কারণেই রাষ্ট্রপতি ভবনের একটি স্কুলে আমি রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন টানা পাঁচ বছর পড়িয়েছি। ১৯৯৪ সালে ডব্লিউটিও-র (বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা) বিষয়ে সংসদের দুই কক্ষে আট-ন’দিন বক্তৃতা দিয়েছি। সাংসদেরা আমাকে বলেছিলেন, স্যার, আপনি দারুণ শিক্ষক। ভাল লেগেছিল সে কথা শুনে।’’ মঞ্চে ওঠার আগে স্কুলের শ্রেণিকক্ষে গিয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে দেখা করেন প্রণববাবু। সেই সময় ৭৫ বছরের এক বৃদ্ধ প্রণববাবুর কাছে এসে নিজেকে প্রাক্তন ছাত্র হিসেবে পরিচয় দেন। প্রণববাবুর প্রশ্ন, ‘‘পুরো নাম না বললে চিনব কী করে?’’

জানা গেল, বৃদ্ধের আসল নাম মুকুট রায়। প্রণববাবুর সঙ্গে মঞ্চে তাঁর আরও এক প্রাক্তন ছাত্রও দেখা করেন। তিনি বছর তিয়াত্তরের চিত্তরঞ্জন চক্রবর্তী। প্রণববাবু তাঁকে চিনতে পারেন। খোঁজখবর নেন তাঁর। স্মৃতি এখনও তাঁর টাটকা।

Pranab Mukherjee Students
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy