Advertisement
০৪ মে ২০২৪
বালি

টোটো স্ট্যান্ডে মহিলার ‘সুলতানি’

দীর্ঘ দিন ধরেই বালিতে টোটোর দৌরাত্ম্য নিয়ে জেরবার সাধারণ মানুষ থেকে প্রশাসন। প্রতিদিনই টোটোর সংখ্যা বাড়ছে বলে অভিযোগ ছিল সকলেরই। বহু বার এ বিষয়ে বৈঠক করেও কোনও সুরাহা হয়নি বলেও দাবি ছিল স্থানীয় প্রশাসনের।

প্রাক্তন পুলিশকর্তা, বর্তমানে বিধায়ক সুলতান সিংহ রিভলভার ধরা শেখাচ্ছেন তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ’ মিলি রায়কে।

প্রাক্তন পুলিশকর্তা, বর্তমানে বিধায়ক সুলতান সিংহ রিভলভার ধরা শেখাচ্ছেন তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ’ মিলি রায়কে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৫ ০০:৩৭
Share: Save:

দীর্ঘ দিন ধরেই বালিতে টোটোর দৌরাত্ম্য নিয়ে জেরবার সাধারণ মানুষ থেকে প্রশাসন। প্রতিদিনই টোটোর সংখ্যা বাড়ছে বলে অভিযোগ ছিল সকলেরই। বহু বার এ বিষয়ে বৈঠক করেও কোনও সুরাহা হয়নি বলেও দাবি ছিল স্থানীয় প্রশাসনের। এ বার সেই সমস্ত অভিযোগকে স্বীকার করে নিয়ে টোটো চালকেরাই অভিযোগের আঙুল তুললেন তৃণমূলের স্থানীয় এক ‘নেত্রী’র বিরুদ্ধে। অভিযোগ উঠল মোটা টাকার বিনিময়েই টোটো দৌরাত্ম্যকে মদত দিচ্ছিলেন তিনি। নতুন টোটো নামানোর নামে চলছিল ‘তোলাবাজি’।

বৃহস্পতিবার সেই মহিলার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ তুলে বালিখাল টোটো স্ট্যান্ডে ব্যানারও ঝুলিয়ে দিলেন চালকেরা। তাঁদের অভিযোগ, মোটা টাকার বিনিময়ে প্রতিদিন নতুন টোটো স্ট্যান্ডে ঢুকিয়ে দিচ্ছেন স্থানীয় বিধায়ক সুলতান সিংহের ঘনিষ্ঠ ‘তৃণমূল নেত্রী’ তথা টোটো সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মিলি রায়। আর তাই বালিতে টোটো সংক্রান্ত সমস্যা বাড়ছে।

বালিখাল স্ট্যান্ডের চালকেরা জানান, বালিতে প্রথম টোটো চালু হয় এই স্ট্যান্ড থেকেই। প্রথমে ৫০টি মতো থাকলেও এখন টোটোর সংখ্যা বেড়ে ১৮৫। চালকদের অভিযোগ, প্রতিদিনই নতুন টোটো আসছে। ফলে রাস্তায় যানজট যেমন হচ্ছে, তেমনই ব্যবসার লোকসান হচ্ছে। আরও অভিযোগ, বারবার এ বিষয়ে মিলিদেবীকে জানানো হলেও তিনি কর্ণপাত করতেন না। উল্টে তাঁর লেখা চিঠি নিয়ে এসেই স্ট্যান্ডে দাঁড়াত নতুন টোটো। অভিযোগ, এলাকায় টোটো চলার জন্য স্থানীয় বিধায়ক সুলতান সিংহের অনুমতিপত্র প্রয়োজন বলেও নোটিস জারি করেছিলেন মিলিদেবী। স্থানীয় সূত্রে খবর, বিভিন্ন অনুষ্ঠানেই সুলতান সিংহের সঙ্গে তাঁকে দেখা গিয়েছে। মিলিদেবীকে পিস্তল চালানোর প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন সুলতান সিংহ, তেমন একটি ছবিও ছড়িয়ে পড়েছে। সুলতান সিংহ অবশ্য সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘‘এটি মিথ্যা রটনা। দলেরই আর একটি গোষ্ঠী এটা করাচ্ছে।’’ যদিও মিলিদেবী বলেন, ‘‘স্যার এক দিন নিজের খালি পিস্তলটা এনেছিলেন। সেটাই আমি দেখছিলাম। ভারী ছিল বলে স্যার (বিধায়ক সুলতান সিংহ) আমার হাত ধরে দেখাচ্ছিলেন, কী ভাবে ট্রিগার টিপতে হয়।’’ মিলিদেবী পিস্তলের কথা স্বীকার করলেও সুলতান সিংহের জবাব, ‘‘এ রকম কোনও ঘটনা মনে নেই।’’

এ দিকে, হাওড়া জেলা তৃণমূলের সভাপতি (শহর) তথা মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, ‘‘মিলি রায় কে, চিনি না। তবে তিনি দলের সদস্য নন। কে-কবে ওই টোটো সংগঠন বানাল, জানি না। তার জন্য তো দলের শ্রমিক সংগঠনের অনুমোদন প্রয়োজন।’’ তিনি জানান, নতুন টোটো নামানোর নামে তোলাবাজির বিষয়ে পুলিশকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বলা হবে। মিলিদেবী অবশ্য বলেন, ‘‘সমস্ত টোটো চালকদের সম্মতি নিয়ে বিধায়ক আমাকে সাধারণ সম্পাদক করেছেন। আমি কারও থেকে এক টাকাও নিয়িনি। উল্টে টোটো চালকদের বিপদে পাশে দাঁড়াতাম। এটা স্থানীয় তৃণমূল নেতা ভাস্করগোপাল চট্টোপাধ্যায়ের পরিকল্পনায় হচ্ছে।’’ যদিও ভাস্করবাবুর দাবি, ‘‘দলের অনুমোদিত কোনও টোটো সংগঠন বালিতে আছে বলে জানি না। উচ্চ নেতৃত্ব আমাকে টোটো দেখভালের দায়িত্ব কখনও দেননি। অহেতুক এ বিষয়ে আমার নাম কেন জড়ানো হচ্ছে, বুঝতে পারছি না।’’

বালিখাল স্ট্যান্ডের টোটো সংগঠনের সদস্য অশোক অধিকারী জানান, বিভিন্ন জায়গায় টোটো চলাচল শুরু হতেই বালিখাল, বেলুড় স্টেশন, বেলুড়মঠ ও লিলুয়া স্ট্যান্ডের জন্য একটি কেন্দ্রীয় সংগঠন তৈরি হয়। বালির রবীন্দ্রভবনে প্রায় ৯৫০টি টোটো নিয়ে বৈঠকও হয়েছিল। সেখানেই সংগঠনের সভাপতি হন বিধায়ক সুলতান সিংহ। সাধারণ সম্পাদক হন মিলিদেবী। অভিযোগ, এর পরেই ওই নেত্রীর ঘনিষ্ঠ দুই যুবক বালিখালে স্টার্টারের কাজ পান। তাঁরাই সব টোটো থেকে প্রতিদিন ১০ টাকা করে চাঁদা সংগ্রহ করতেন। অশোকবাবু বলেন, ‘‘বিপদে চালকদের সাহায্যের জন্য চাঁদা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সেই টাকা ব্যাঙ্কে জমানোর কথা। কিন্তু তা মানা হচ্ছিল না।’’

চালকদের আরও অভিযোগ, সম্প্রতি বালিতে ১০০০ টোটো লাইসেন্স পায়। তার পরেও রোজ নতুন টোটো নামছিল। এই নিয়ে মিলিদেবীর কাছে আপত্তি জানিয়ে লাভ হয়নি। এ বিষয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগও দায়ের করেছেন কয়েক জন চালক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

toto Sultan Singh bali MLA
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE