Advertisement
০৪ মে ২০২৪

জরিশিল্পীকে খুনের দায়ে যাবজ্জীবন ১০ জনের

উন্মত্ত জনতার হাত থেকে বাঁচার জন্য বাড়িতে ঢুকে খাটের নীচে লুকিয়ে পড়েছিলেন তিনি। সেখান থেকেই তাঁকে টেনে বের করে তারা। তারপর বাইরে নিয়ে গিয়ে পরিবারের সামনেই খুন করে তাঁকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পাঁচলা শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০০:৫৯
Share: Save:

উন্মত্ত জনতার হাত থেকে বাঁচার জন্য বাড়িতে ঢুকে খাটের নীচে লুকিয়ে পড়েছিলেন তিনি। সেখান থেকেই তাঁকে টেনে বের করে তারা। তারপর বাইরে নিয়ে গিয়ে পরিবারের সামনেই খুন করে তাঁকে। চোখের সামনে এমন ঘটনা ঘটলেও ভয়ে কেউ মুখ খোলেননি।

১৯৯৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর পাঁচলার শুভরআড়া পঞ্চায়েত এলাকার শাহ পাড়ায় এভাবেই খুন হন কুদ্দুস পাটোয়ার। ঘটনায় ১৪ জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন কুদ্দুসের পরিবার। শুক্রবার ওই মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে এক মহিলা-সহ দশজনের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দিলেন হাওড়া আদালতের তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক মনোজ শর্মা। একইসঙ্গে দোষীদের পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে ছয় মাস করে সশ্রম কারাদণ্ডেরও আদেশ দিয়েছেন তিনি। দোষীরা হল ইনসান শাহ, মানোয়ার শাহ, হাফিজ শাহ, আফজল শাহ, কেরো শাহ, খোরসেন শাহ, হাফিজান বিবি, বাহার আলি শাহ, মস্তান শাহ এবং ইয়াদ আলি শাহ। বাকি চারজনের মধ্যে মামলা চলাকালীন তিনজন মারা যান। একজন পলাতক।

ঠিক কী ঘটেছিল সেদিন?

পুলিশ সূত্রে খবর, কুদ্দুস কংগ্রেসের স্থানীয় নেতা ছিলেন। দোষীরা ছিলেন সিপিএমের সঙ্গে যুক্ত। উভয়পক্ষের মধ্যে রাজনৈতিক বিরোধ ছিল। তার সঙ্গে যোগ হয়েছিল জমি নিয়ে বিবাদ। তারই জেরে সেদিন বেলা ১১টা নাগাদ দোষীরা কুদ্দুসকে আক্রমণ করে। তাদের হাতে ছিল বল্লম, তরোয়াল, রিভলভারের মতো অস্ত্র। পেশায় জরির ওস্তাগর কুদ্দুস তখন জমিতে কাজ করছিলেন। প্রাণ বাঁচাতে ছুটে বাড়িতে ঢুকে খাটের নীচে লুকিয়ে পড়েন। কিন্তু রেহাই মেলেনি। দরজা ভেঙে ঢুকে দোষীরা খাটের নীচ থেকে তাঁকে টেনে বের করে। তারপর বাইরে নিয়ে গিয়ে লোকজনের সামনেই খুন করা হয় কুদ্দুসকে।

কুদ্দুসের স্ত্রী, পাঁচ ছেলে এবং দুই মেয়ে রয়েছে। পরিবারের এবং গ্রামের লোকজনের সামনে খুন হলেও ভয়ে কেউ টুঁ শব্দ করেননি। শুধু খুন করেই ক্ষান্ত হয়নি দোষীরা। কুদ্দুসের বাড়িতেও লুঠপাট চালিয়ে ফিরে যায় তারা।

ওইদিন বিকেলেই থানায় কুদ্দুসের পরিবারের পক্ষ থেকে ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়। পু‌লিশ ১৩ জনকে গ্রেফতার করে। একজন পালিয়ে যায়। তবে ১৪ জনের বিরুদ্ধেই চার্জশিট দেয় দেয় পুলিশ। মামলা চলাকালীন মারা যায় গোলাম শাহ, জবিদ আলি শাহ ও মোহর আলি শাহ। পলাতকের নাম রফিক আলি শাহ। তাকে এখনও গ্রেফতার করা যায়নি।

এ দিন মামলার সরকারি আইনজীবী পুলককুমার রায় বলেন, ‘‘যে পলাতক তাকে খুঁজে পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধেও বিচারের প্রক্রিয়া শুরু হবে।’’

বাবাকে যখন খুন করা হয় তখন বড় ছেলে হাফিজুল শাহর বয়স ১২ বছর। এ দিন বিচারকের রায় শুনে বছর তিরিশের হাফিজুল বলেন, ‘‘আজও ভুলতে পারি না সেই দৃশ্য। ওরা বাবাকে খাটের নীচ থেকে টেনে-হিঁচড়ে বাইরে নিয়ে এসে খুন করল। আমাদেরও মেরে ফেলার ভয় দেখাচ্ছিল। কিছু করতে পারিনি বাবাকে বাঁচানোর জন্য।’’

কুদ্দুসের দাদা রফিক পাটোয়ার বলেন, ‘‘মামলা তুলে নিতে আমাদের লাগাতর ভয় দেখানো হয়েছিল। তবু মামলা তুলিনি। আজ শান্তি পেলাম।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ten men punishment murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE