ঘটনাস্থল: পড়ে রয়েছে দীপকবাবুর নিথর দেহ। নিজস্ব চিত্র
স্বাধীনতা দিবসের সকালে এক পড়শির বাড়ির উঠোনে আরামবাগের তৃণমূল নেতা, প্রাক্তন উপ-পুরপ্রধান দীপক সরকারের (৫৮) রক্তাক্ত মৃতদেহ মিলেছিল। মাথায় ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করে তাঁকে খুন করা হয় বলে পুলিশের অনুমান। সেই ঘটনার পরে পেরিয়ে গিয়েছে ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময়। বুধবার বিকেল পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
পুলিশ জানায়, তদন্ত চলছে। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে খুনের অভিযোগ দায়ের হয়েছে। দীপকবাবুর মোবাইল ফোনের কল-লিস্ট খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সন্দেহভাজনদের শনাক্তকরণের প্রক্রিয়া চলছে। বুধবার বিকেল পর্যন্ত ২০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে, কেন দীপকবাবুকে খুন করা হল তা নিয়ে অন্ধকারে তাঁর পরিবারের লোকজন। তাঁরা চান, দ্রুত অপরাধীদের গ্রেফতার করা হোক। দীপকবাবুর ছেলে, চিকিৎসক কুমারজ্যোতি সরকার বলেন, ‘‘বাবাকে নৃশংস ভাবে খুন করা হয়েছে। তাঁর রাজনৈতিক বা অন্য কোনও শত্রু ছিল বলে জানা নেই।’’
শহরের প্রাণকেন্দ্র ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কোর্ট রোডে দীপকবাবুর বাড়ি। এক সময়ে শহরে মার্ক্সবাদী ফরওয়ার্ড ব্লকের দাপুটে নেতা হিসেবেই পরিচিত ছিলেন তিনি। ১৯৮৬ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত আরামবাগ পুরসভার বামবোর্ডের উপ-পুরপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৩-র ডিসেম্বরে তিনি তৃণমূলে যোগ দেন। ২০১৫ পর্যন্ত তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ডেরও উপ-পুরপ্রধান ছিলেন তিনি। তারপর অবশ্য সক্রিয় রাজনীতি থেকে সরে যান। নিজের পেট্রল পাম্প এবং ঠিকাদারি ব্যবসা নিয়েই থাকতেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বার প্লাবনের কারণে তাঁর বাড়ির একতলায় জল ঢুকে গিয়ে সমস্ত আসবাবপত্র এবং বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম নষ্ট হয়ে যায়। দিন চারেক হল সেগুলি মেরামত এবং বাড়ি রঙের কাজ চলছে। সেই কারণে বাড়িতে ছেলেমেয়ে এবং স্ত্রী থাকলেও দীপকবাবু পাশেই নিজের প্রতিষ্ঠা করা একটি ক্লাবের দোতলার ঘরে রাতে থাকছিলেন। মঙ্গলবার সকাল ৭টা নাগাদ দীপকবাবুর পরিবারের লোকজন ক্লাব সংলগ্ন বাড়ির উঠোনে তাঁর দেহ পড়ে থাকার খবর পান।
ওই ক্লাবের দোতলায় ওঠার একটি সিঁড়ির সঙ্গে পাশের ওই বাড়িটির ছাদে ওঠার সিঁড়িও এক। দীপকবাবুকে খুন করে ওই ছাদ থেকেই দেহটি ফেলা হয় বলে পুলিশের অনুমান। যেখানে তাঁর দেহ পড়েছিল, সেখানে রক্ত ছাড়াও বমি পড়ে থাকতে দেখা যায়। দীপকবাবু ক্লাবের যে ঘরে ছিলেন, সেই ঘরের দরজা খোলা ছিল। পুলিশ ভিতরে কয়েকটি মদের গ্লাস, সিগারেট প্যাকেট, তাঁর মোবাইল ফোন এবং কয়েক হাজার টাকা ভর্তি মানিব্যাগ উদ্ধার করে। ঘরটি আপাতত ‘সিল’ করে দেওয়া হয়। দীপকবাবুর খুন হওয়ার কথা শুনে মঙ্গলবারই বাম ও তৃণমূল নেতারা ঘটনাস্থলে যান। পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান গোপল কচ ঘটনার সিআইডি তদন্তের দাবি তোলেন। তদন্তের দাবি জানান আরামবাগের বিধায়ক কৃষ্ণচন্দ্র সাঁতরা এবং বর্তমান পুরপ্রধান স্বপন নন্দীও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy