জেলার আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরগুলিতে টোটো নিয়ে রাজ্য সরকারি নির্দেশিকা পৌঁছে গিয়েছে আগেই। কিন্তু তা কার্যকর হয়নি এখনও। যার ফল, হাওড়া শহরে বেআইনি টোটোর বাড়বাড়ন্ত রুখতে জেলা প্রশাসন ও হাওড়া পুরসভা কার্যত ব্যর্থ। আর সে কারণে টোটো কার্যত বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়িয়েছে যাত্রীদের কাছে।
রিকশার থেকে দ্রুতগামী এবং পরিবেশবান্ধব এই যান চলাচলের জন্য হাওড়া পুরসভা অনুমতি দেওয়ার পরেই গত এক বছরে শহরের রাস্তায় নেমেছে প্রায় ৩০-৩৫ হাজার টোটো। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, এই গাড়িগুলি যাত্রী পরিবহণের পক্ষে কতটা নিরাপদ? কারণ, অধিকাংশ সময়ে দেখা যাচ্ছে রাস্তায় বা অলিগলিতে এই ত্রি-চক্র যানের চাকা বা যন্ত্রাংশ ভেঙে পড়ে রয়েছে। বহু ক্ষেত্রে আবার দেখা যাচ্ছে, সামান্য ধাক্কাতেই ভেঙে-তুবড়ে যাচ্ছে গাড়িগুলি।
হাওড়া আঞ্চলিক পরিবহণ দফতর সূত্রে খবর, টোটো নিয়ে রাজ্য পরিবহণ দফতর গত ২৮ এপ্রিল একটি নির্দেশিকা জারি করে। তাতে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, প্রথমত, কেন্দ্রীয় সরকার অনুমোদিত তিনটি পরীক্ষা কেন্দ্রের মধ্যে যে কোনও একটি থেকে টোটোর নকশা ও কারিগরির বিষয়টি অনুমোদন করতে হবে। তবেই সেই গাড়ি রাস্তায় নামবে। দ্বিতীয়ত, একমাত্র অনুমোদিত কোম্পানিগুলি বিভিন্ন অঞ্চলে শো-রুম খুলতে পারবে। তৃতীয়ত, টোটোর রেজিস্ট্রেশনের পাশাপাশি আলাদা ভাবে ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে হবে। তার জন্য ১০ দিনের প্রশিক্ষণ নিতে হবে জেলার আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরে। চতুর্থত, কোন রুটে টোটো চলবে, তা ঠিক করবেন মোটর ভেহিকল্স-এর অফিসারেরা। লাইসেন্স পেতে হলে টোটোর রুট নির্দিষ্ট হতে হবে। পঞ্চমত, যে অঞ্চলে এই গাড়ি চলবে, সেখানে অন্য যানবাহন চলবে না। কোনও বাসরাস্তা, জাতীয় সড়ক, রাজ্য সড়ক এবং গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় টোটো চলার অনুমতি মিলবে না।
হাওড়ার আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের কর্তাদের একাংশের অভিযোগ, স্থানীয় ভাবে তৈরি হওয়া যে কয়েক হাজার টোটো বর্তমানে চলছে, তার মধ্যে অধিকাংশের নকশা ও যন্ত্রাংশ অত্যন্ত নিম্নমানের। তাই মাঝেমধ্যেই রাস্তার পাশে ভাঙা টোটো পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘নানা জায়গা থেকে এই গাড়ির যন্ত্রাংশ কিনে এনে শহরের বিভিন্ন দোকানে জোড়া দেওয়া হচ্ছিল। যার ফলে গাড়িগুলি হচ্ছিল অত্যন্ত কমজোরি ও বিপজ্জনক। পুলিশকে নিয়ে আমরা তল্লাশি চালিয়ে কয়েকটি দোকান বন্ধও করে দিয়েছি।’’
কিন্তু রাজ্য সরকারের নির্দেশিকা পৌঁছনোর পরেও তা কার্যকর হচ্ছে না কেন? হাওড়া আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার প্রকাশ পাল বলেন, ‘‘রাজ্য পরিবহণ দফতর কলকাতা বাদে কয়েকটি জায়গায় টোটোর রেজিস্ট্রেশন ও লাইসেন্সের জন্য দু’টি নতুন সফ্টওয়্যার নিয়ে আসছে। তাদের নাম ‘বাহন’ ও ‘সারথি’। কিন্তু ওই দু’টি সফ্টওয়্যার এখনও কার্যকরী না হওয়ায় হাওড়া আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের তরফে নির্দেশিকা জারি করা যাচ্ছে না। ফলে অবৈধ টোটোর বিরুদ্ধেও অভিযান করা যাচ্ছে না।’’
এ ব্যাপারে রাজ্য পরিবহণ দফতরের এক পদস্থ কর্তা জানান, ‘বাহন’ ও ‘সারথি’ সফ্টওয়্যার দু’টি তৈরি হচ্ছে দিল্লিতে। সেখান থেকে আসতে সময় লাগার কারণেই দেরি হচ্ছে। দু’এক মাসের মধ্যেই সেগুলি এসে যাবে। পাশাপাশি, ওই কর্তার বক্তব্য, ‘‘সফ্টওয়্যার পাল্টানোর আগে সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরগুলির আরও কাজ আছে। সেগুলি তারা আগে শেষ করুক। তার মধ্যে সফ্টওয়্যার এসে যাবে।’’
কিন্তু নয়া সফ্টওয়্যার দু’টি আসার পরে শহরে চলা বেআইনি টোটোগুলির কী হবে? প্রকাশবাবু এ ব্যাপারে কিছু বলতে না চাইলেও আঞ্চলিক পরিবহণ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকারি নির্দেশিকা মেনে যে টোটোগুলি তৈরি হয়েছে, একমাত্র সেগুলিকেই চলার অনুমতি দেওয়া হবে। বাকিদের চলতে দেওয়া হবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy