Advertisement
১৯ মে ২০২৪
পর পর দুর্ঘটনা দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে

পাঁচ বছর পরও ট্রমা সেন্টার চালু তিমিরেই

একের পর এক প্রাণহানি আটকাতে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে হুগলিতে এসে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে লাগোয়া এলাকায় ট্রমা কেয়ার সেন্টার তৈরির কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

থমকে: তৈরি হয়েও এ ভাবে পড়ে নষ্ট হচ্ছে ট্রমা সেন্টার। ছবি: দীপঙ্কর দে।

থমকে: তৈরি হয়েও এ ভাবে পড়ে নষ্ট হচ্ছে ট্রমা সেন্টার। ছবি: দীপঙ্কর দে।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০১৭ ০২:৩৭
Share: Save:

দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে পথ দুর্ঘটনার বিরাম নেই। সাধারণ মানুষ থেকে শিল্পী—এই রাস্তায় পথ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন অনেকে। বৃহস্পতিবার রাতেও দুর্ঘটনায় ঘটেছে এই রাস্তায়। ট্রাকের ধাক্কায় মারা গিয়েছেন এক সাইকেল আরোহী। প্রাণহানি অব্যাহত থাকলেও সিঙ্গুরে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের পাশে ট্রমা কেয়ার সেন্টারটি এখনও চালু হল না।

একের পর এক প্রাণহানি আটকাতে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে হুগলিতে এসে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে লাগোয়া এলাকায় ট্রমা কেয়ার সেন্টার তৈরির কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘সিঙ্গুরে অত্যাধুনিক ট্রমা কেয়ার সেন্টার তৈরি হবে।’’ কারণ হিসেবে ওই সড়কে ধারাবাহিক দুর্ঘটনার প্রসঙ্গ তোলেন তিনি। ট্রমা সেন্টারের জমি দেখার জন্য তিনি হরিপালের বিধায়ক বেচারাম মান্নাকে দায়িত্ব দেন। জমি বাছা হয় দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের ধারে। সেই কেন্দ্র ইতিমধ্যে তৈরিও হয়েছে। কিন্তু কবে চালু হবে সেই প্রশ্নের উত্তর নেই।

হুগলির জেলাশাসক সঞ্জয় বনশল বলেন, ‘‘পূর্ত দফতর ট্রমা কেয়ারটির ভবন তৈরির কাজ শেষ করেছে। বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ এগিয়েছে। যন্ত্রপাতি কোথায়, কী ভাবে বসবে, এখন সেই পরিকল্পনাই চলছে। পুজোর আগে স্বাস্থ্য ভবনের একটি দল কাজের অগ্রগতিও দেখে গিয়েছেন।’’ হুগলির মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভ্রাংশু চক্রবর্তীর আশ্বাস, ‘‘কাজ অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে। ডিসেম্বর মাস নাগাদ সেটি চালু হতে পারে।’’

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সিঙ্গুর কলেজ লাগোয়া প্রায় ১৪ বিঘা জমিতে প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকা ব্যয়ে ট্রমা কেয়ার সেন্টারটি তৈরি হয়েছে। পথ দুর্ঘটনায় আহতদের দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজন। জাতীয় সড়ক সংস্থার (এনএইচআই) একটি পরিসংখ্যান বলছে, দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে প্রতিদিন একটি করে দুর্ঘটনা ঘটেই। কিন্তু ওই সড়কের আশপাশে ভাল মানের হাসপাতাল নেই বললেই চলে। গ্রামীণ হাসপাতাল থাকলেও সেখানে দুর্ঘটনায় গুরুতর আহতদের চিকিৎসার পরিকাঠামো নেই।

এক বছর আগে সিঙ্গুরের কাছে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনায় আহত হয়েছিলেন যুব তৃণমূলের সর্বভারতীয় সভাপতি তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। চলতি বছরের মার্চে গুড়াপের কাছে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে যাওয়ার সময়ে নয়ানজুলিতে উল্টে যায় বাংলা গানের দল দোহারের গাড়ি। মৃত্যু হয়েছিল গায়ক কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্যের। তারপর দুর্ঘটনা রুখতে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসন পদক্ষেপ করলেও দুর্ঘটনা বন্ধ হয়নি।

পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতে ডানকুনির হাউজিং মোড়ের কাছে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে সুরেশ মাহাতো (৫০) নামে এক সাইকেল আরোহীকে ধাক্কা মারে কলকাতামুখী একটি ট্রাক। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় সুরেশের। স্থানীয় বাসিন্দাদের আক্ষেপ, ট্রমা কেয়ার সেন্টারটি চালু হয়ে গেলে হয়তো তাঁকে বাঁচানো যেত।

রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, প্রস্তাবিত ট্রমা কেয়ারে ৬০টি শয্যা থাকবে। থাকার কথা দু’টি অপারেশন থিয়েটার, আইসিসিইউ। কিন্তু এখনও সবটাই খাতায়-কলমে। স্বাস্থ্য দফতর ডিসেম্বর নাগাদ কেন্দ্রটি চালুর সম্ভাবনার কথা বললেও সেখানরাপ সংযোগকারী রাস্তার কাজ এখনও অসমাপ্ত। জমি খোঁজার দায়িত্বে থাকা বেচারামবাবুর দাবি, ‘‘বর্ষার জল জমে থাকায় ওই রাস্তা এখনও তৈরি হয়নি। জেলা পূর্ত দফতর ওই কাজের দায়িত্বে রয়েছে। জল নামলেই কাজ শুরু হবে।’’

আপাতত অপেক্ষা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE