Advertisement
০৪ মে ২০২৪
হাওড়ায় ১০০ দিনের প্রকল্প

আড়াই মাসেও কাজ শুরু করতে পারেনি বহু পঞ্চায়েত

গত আর্থিক বছরে জেলায় ১০০ দিনের কাজে ৪৪টি শ্রমদিবস তৈরি হয়েছিল। এ বার ১০০ দিনের কাজে সেই সংখ্যা আরও বাড়িয়ে আগের রেকর্ড ভাঙতে হবে বলে মঙ্গলবারই জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

মনিরুল ইসলাম
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৬ ০৬:৩৪
Share: Save:

গত আর্থিক বছরে জেলায় ১০০ দিনের কাজে ৪৪টি শ্রমদিবস তৈরি হয়েছিল। এ বার ১০০ দিনের কাজে সেই সংখ্যা আরও বাড়িয়ে আগের রেকর্ড ভাঙতে হবে বলে মঙ্গলবারই জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

অথচ চলতি অর্থবর্ষে আড়াই মাস কেটে গেলেও হাওড়া জেলায় ১০০ দিনের কাজে অনেক পঞ্চায়েতেই করুণ চিত্র ধরা পড়েছে। ওই সব গ্রাম পঞ্চায়েত জুনের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত একশো দিনের কাজে খাতা এখনও খুলতেই পারেনি। এই পরিস্থিতে জেলা প্রশাসনের একাংশ এ বার একশো দিনের কাজে জেলার পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন। যদিও জেলা প্রশাসনের এনআরইজিএ দফতরের এক কর্তার আশ্বাস, ‘‘ওই সব পঞ্চায়েতে যাতে দ্রুত ১০০ দিনের কাজ শুরু করা যায় তার চেষ্টা হচ্ছে। আমরা আশাবাদী যে সামগ্রিকভাবে এই জেলা ভাল ১০০ দিনের কাজে বাল ফল করতে সক্ষম হবে।’’

প্রশাসন সূত্রে খবর, হাওড়া জেলায় ১৫৭টি গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ পঞ্চায়েত একশো দিনের কাজ শুরু করলেও এখনও প্রায় তিরিশটির মতো পঞ্চায়েতের শ্রমদিবস শূন্য। জেলা প্রশাসনিক কর্তারা এর জন্য সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত ও ব্লক প্রশাসনকেও দায়ী করেছেন। তবে পঞ্চায়েত ও ব্লক প্রশাসনের কর্তাদের যুক্তি, ২০১৬-২০১৭ আর্থিক বর্ষের শুরুতেই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন পড়ে যায়। ফলে নানা উন্নয়নমূলক কাজের মতো জেলায় একশো দিনের কাজও ব্যাহত হয়েছে। তাই কিছুটা পিছিয়ে গিয়েছে তারা। তবে নির্বাচন পর্ব মেটার পরেই বেশিরভাগ পঞ্চায়েত কোমর বেঁধে কাজে নেমে পড়েছে। কারণ, মে-জুন মাসের পর রাজ্যে বর্ষা এসে পড়ে। ফলে তার আগেই তড়িঘড়ি কাজ করতে হয়। আর সেটাই লক্ষ্য বেশিরভাগ গ্রাম পঞ্চায়েতের।

বাগনান ২, শ্যামপুর ১ ও ২, উলুবেড়িয়া ১ ও ২ ব্লকের সব পঞ্চায়েতই ইতিমধ্যে একশো দিনের কাজে কর্মদিবস সৃষ্টি করলেও তিরিশটির মতো পঞ্চায়েত এখনও ১০০ দিনের কাজই শুরু করতে পারেনি। এর মধ্যে শহর এলাকার পঞ্চায়েত যেমন রয়েছে তেমনি গ্রামীণ এলাকার পঞ্চায়েতও রয়েছে। এনআরইজিএ সূত্রে খবর, যে সব পঞ্চায়েতে শ্রমদিবসের সংখ্যা এখনও শূন্যতে, তাদের মধ্যে অন্যতম হল বাগনান ১ ব্লকের সাবসিট ও বাইনান গ্রাম পঞ্চায়েত। এ ছাড়া রয়েছে আমতা ১ ব্লকের আনুলিয়া, ভান্ডারগাছা, চন্দ্রপুর ও খড়দহ, আমতা ২ ব্লকের ভাটোরা, কাশমলি, কূশবেড়িয়া সহ ৬টি গ্রাম পঞ্চায়েত, ডোমজুড়ের মহিয়াড়ি ১ ও ২ এবং উত্তর ঝাঁপড়দহ গ্রাম পঞ্চায়েত। পাঁচলার জুজুারসাহা, জগৎবল্লভপুরের পোলগুস্তিয়া ও শঙ্করহাটি ২ গ্রাম পঞ্চায়েত এবং সাঁকরাইল ব্লকের অন্তত ১১টি পঞ্চায়েত এখনও শ্রমদিবস সৃষ্টি করতে পারেনি। তবে কিছু ক্ষেত্রে প্রশাসনিক কর্তাদের দাবি, পঞ্চায়েতগুলি কমবেশি কাজ শুরু করছে কিন্তু সে সব প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তা শ্রমদিবস হিসাবে দেখানো সম্ভব হয়নি।

প্রশাসন সূত্রে খবর, যে সব পঞ্চায়েত জুন মাসের অর্ধেক পর্যন্ত কাজ শুরু করতে পারেনি তাদের অন্যতম বাইনান। এখানে ২৬০০-র বেশি জব কার্ড হোল্ডার রয়েছে। পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষের দাবি প্রশাসনিক ত্রুটির জন্য টাকা পেতে দেরি হয়েছে। তবে শীঘ্রই কাজ শুরু হবে।

তবে যে সব পঞ্চায়েত শ্রমদিবস সৃষ্টি করতে পারেনি, তাদের ক্ষেত্রে ব্লক প্রশাসনের তদারকি বা নজরদারি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ব্লক প্রশাসনের তরফে ওই পঞ্চায়েতে দ্রুত কাজ করানোর আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

এদিকে কাজ না হওয়ার জন্য বঞ্চিত হচ্ছেন জবকার্ড হোল্ডাররা। পেশায় দিনমজুর পশ্চিম বাইনানের বাসিন্দা বিশ্বনাথ মন্ডল ও গিরি ঘুকু জব কার্ড হোল্ডার। তাঁদের কথায়, ‘‘হাতে বিশেষ কোনও কাজ নেই। তার উপর পঞ্চায়েতে ১০০ দিনের কাজও বন্ধ। ফলে বিপদে পড়েছি।’’ বাইনানের বাসিন্দা সেখ আব্দুল হোসেন বলেন, ‘‘দিনমজুরি করি। এখন বেশি কাজ। তার উপর রমজান মাস চলছে। ১০০ দিনের কাজ হলে হাতে কিছু টাকা আসত। অভাব মিটত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

panchayet
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE