বাক্সবন্দি হচ্ছে শাটল কক। উলুবেড়িয়ায় সুব্রত জানার ছবি।
অলিম্পিকে পিভি সিন্ধুর রুপো জয় স্বপ্ন দেখাচ্ছে উলুবেড়িয়াকে।
সুদূর রিও থেকে কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরে হাওড়ার উলুবেড়িয়ার বানীবন, যদুরবেড়িয়া, বানীতবলা। দেশের মধ্যে ব্যাডমিন্টনের শাটল কক তৈরির একমাত্র জায়গা। এক সময় রমরমা থাকলেও এখন অস্তিত্ব বাঁচানোর লড়াইয়ে সামিল এখনকার শ্রমিকেরা।
সাম্প্রতিক কালে ব্যাডমিন্টনে সাইনা নেওহাল, জালা গাট্টার সাফল্যে উৎসাহিত এখানকার শাটল কক ব্যবসায়ীদের আশা বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে রিও অলিম্পিকে রুপোজয়ী পিভি সিন্ধুর নজরকাড়া সাফল্য। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তাঁকে নিয়ে যে ভাবে উদ্বেল ছিলেন সারা দেশের মানুষ তাতে তাঁর এই সাফল্য আরও অনেককেই এই খেলায় আসতে উৎসাহ দেবে বলে মনে করছেন এখানকার ব্যবসায়ী থেকে শ্রমিক সকলেই। আর তাই সিন্ধুর এই সাফল্যকে ভর করেই ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া তাঁরা।
দীর্ঘদিন ধরে শাটল কক ব্যবসায় যুক্ত শ্যামসুন্দর অধিকারী বলেন, ‘‘উলুবেড়িয়া ছাড়া ভারতের আর কোথাও শাটল কক তৈরি হয় না। কিন্তু বাজার না পাওয়ায় এই শিল্প এখান থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। সিন্ধুর সাফল্য এই শিল্পের সামনে সুযোগ সৃষ্টি করেছে। রাজ্য সরকার যদি এই শিল্পকে বাঁচাতে এগিয়ে আসে তা হলে পশ্চিমবঙ্গের বেকার সমস্যার অনেকটা সমাধান এই শিল্পের হাত ধরে সম্ভব।’’
রাজ্য ছোট ও মাঝারি শিল্প দফতর অবশ্য এই শিল্পের উন্নতিতে ইতিমধ্যেই এগিয়ে এসেছে বলে জানিয়েছেন দফতরের এক কর্তা। তাঁর দাবি, উলুবেড়িয়ায় শতাধিক শাটল কক ব্যবসায়ীদের নিয়ে একটি ক্লাস্টার তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে। সেটি তৈরি হলে এই শিল্পের প্রযুক্তিগত ও বিপণন সমস্যা অনেকটাই মিটবে। পাশাপাশি তাঁরও আশা, অলিম্পিকে ব্যাডমিন্টনে ভারতের সাফল্য পরোক্ষে এই ব্যবসার উন্নতিতে সহায়ক হবে।
এক সময়ে উলুবেড়িয়ার তৈরি শাটল ককের সুনাম ছিল দেশজোড়া। এলাকার ব্যবসায়ীদের দাবি, এখানকার তৈরি শাটল কক নিয়ে খেলেছেন বহু খ্যাতনামা খেলোয়াড়। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন প্রকাশ পাড়ুকোন, আমি ঘিয়া, সৈয়দ মোদির মতো খেলোয়াড়। অন্তত ৪০ হাজার মানুষের রুটি-রুজির সংস্থান হয় এই শিল্পের মাধ্যমে। কিন্তু বছর পাঁচেক আগে থেকে এই শিল্পে মন্দা আসতে শুরু করে। ব্যবসায়ীরা জানান, উন্নত প্রযুক্তিতে তৈরি চিনা শাটল কক বাজার ধরে ফেলেছে। চিনা বহুজাতিক সংস্থাগুলির সঙ্গে পাল্লা দিতে না পেরে ক্রমশ পিছু হটতে শুরু করে উলুবেড়িয়া। সাইদুর রহমান নামে এক ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘চিনা শাটল কক দামেও যেমন সস্তা, প্রযুক্তিও উন্নত মানের। আমরা এর সঙ্গে পাল্লা দিতে পারছি না।’’
শ্যামসুন্দরবাবু বলেন, ‘‘এই রাজ্যে শুধুমাত্র শীতকালে ব্যাডমিন্টন খেলা হয়। মুম্বই, বেঙ্গালুরু বা পুনের মতো এ রাজ্যে বছরভর ইন্ডোরে ব্যাডমিন্টন খেলার প্রচলন নেই। থাকলে আমাদের ব্যবসার হাল এতটা খারাপ হত না।’’
সিন্ধুর সাফল্য আশা জাগিয়েছে সাইদুর বা শ্যামসুন্দরবাবু মতো ব্যবসায়ীদের মনে। তাঁদের মতে, সিন্ধুর সাফল্য নিশ্চিতভাবে দেশের মধ্যে এই খেলার জনপ্রিয়তা বাড়াবে। তার হাত ধরে চাহিদা বাড়বে শাটল ককের। বাঁচবেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy