Advertisement
E-Paper

শূন্য পদে নিয়োগ বন্ধ, ক্ষতি হচ্ছে পঠনপাঠনে

কোনওমতে নাকেমুখে গুঁজেই ছুটতে হয় স্কুলে। কারণ সবার আগে তিনি না পৌঁছলে বাকিরা কেউ স্কুলে ঢুকতে পারবেন না। আবার স্কুলের পরে বাড়ি ফিরে কন্যাশ্রী বা সবুজ সাথী প্রকল্পের কাগজপত্র নিয়ে বসতে হয়।

প্রকাশ পাল

শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৬ ০১:৪৪

কোনওমতে নাকেমুখে গুঁজেই ছুটতে হয় স্কুলে। কারণ সবার আগে তিনি না পৌঁছলে বাকিরা কেউ স্কুলে ঢুকতে পারবেন না। আবার স্কুলের পরে বাড়ি ফিরে কন্যাশ্রী বা সবুজ সাথী প্রকল্পের কাগজপত্র নিয়ে বসতে হয়।

নালিকুল বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকর রুটিনটাই এখন এরকম। কারণ, স্কুলে চতুর্ণ শ্রেণির কর্মীর অভাব। প্রধান শিক্ষিকা পারমিতা চৌধুরীর কথায়, ‘‘স্কুলে শিক্ষাকর্মীর পাশাপাশি ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট বা গ্রন্থাগারিকের পদও শূন্য। প্রতিনিয়ত সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।’’

এটা কোনও বিক্ষিপ্ত ছবি নয়। হুগলি জেলার বহু স্কুলেরই এমন হাল। শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর সংখ্যার নিরিখে পরিকাঠামোর হাল এমনই করুণ যে, কোনওমতে জোড়াতালি দিয়ে চলতে গিয়ে হিমসিম খাচ্ছে ওই সব স্কুল। বিভিন্ন স্কুল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, স্কুলের দৈনন্দিন হিসাবপত্র থেকে শিক্ষকদের বেতন সংক্রান্ত রিক্যুইজিশন তৈরি, ভর্তি প্রক্রিয়া, প্রভিডেন্ট ফান্ডের কাজের মতো দায়িত্ব করণিককে সামলাতে হয়। তার উপর বর্তমানে কন্যাশ্রী, শিক্ষাশ্রী বা সবুজ সাথী প্রকল্পের কাগজপত্র সামলানোর কথাও করণিকের। এই সব কাজের সূত্রে কখনও ডিআই বা এডিআই অফিস, কখনও বিডিও অফিস, কখনও এসআই অফিসে যাতায়াত করতে হয়। ফলে যে সব স্কুলে করণিকের পদ শূন্য, সেখানে এই সব কাজ সামলাতে প্রাণান্তকর অবস্থা হচ্ছে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। এ ভাবে চলতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের ক্লাস মার খাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পড়ুয়ারা। এ হেন পরিস্থিতিতে শিক্ষক-শিক্ষিকা থেকে ছাত্রছাত্রী সকলেই ক্ষুব্ধ। কিন্তু এর সমাধান কি, কারও সেই উত্তর জানা নেই।

চন্দননগর মহকুমার একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের ক্ষোভ, ‘‘পঠন-পাঠন ঠিকঠাক হচ্ছে কি না, তা নিয়ে কেউ খোঁজ নেন না। কিন্তু কন্যাশ্রী, সবুজ সাথী বা মিড-ডে-মিল নিয়ে মাঝেমধ্যেই মিটিং হয়।’’ তাঁর কথায়, ‘‘এগুলো নিশ্চয়ই পড়ুয়াদের জন্য উপযোগী। কিন্তু পঠনপাঠনের উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ে দেওয়াটা যেন ক্রমশই গৌণ বিষয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে!’’

হরিপাল ব্লকের নালিকুল বালিকা বিদ্যালয়ে পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় ১৫০০। শিক্ষিকা ২৩ জন। পার্শ্বশিক্ষিকা ৪ জন। চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নেই। করণিকের পদও শূন্য ছিল। শিক্ষিকারাই সেই কাজ সামলাচ্ছিলেন। সম্প্রতি এক মহিলা করণিক পদে এসেছেন। স্কুল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, ওই মহিলাকে কাজকর্ম বোঝাতেই কিছু দিন কেটে যাবে। অস্থায়ী ভাবে এক জন করণিক রাখা হয়েছে। প্রধান শিক্ষিকার বক্তব্য, ‘‘কর্মীর অভাবে মাঝেমধ্যে আমাকে স্কুলের দরজাও খুলতে হয়। ক্লার্কের কাজও করতে হয়। এ ছাড়া উপায় নেই। স্কুলের তহবিলের যা অবস্থা, তাতে বেশি টাকা খরচ করে লোক রাখাও অসম্ভব। বাড়িতে রাত জেগে স্কুলের কাজ করতে হয়।’’

হরিপালের জামাইবাটি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সন্দীপ সিংহ জানান, করণিক না থাকায় যাবতীয় কাজ তাঁকে বা অন্য এক শিক্ষককে করতে হচ্ছে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ক্লার্কের কাজ করতে গিয়ে এক জন শিক্ষকের ক্লাস মার খাচ্ছে। ওই কাজ সামাল দিতে রীতিমতো চাপে পড়তে হচ্ছে।’’

জিরাট কলোনি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মৃণালকান্তি সামন্ত বলেন, ‘‘আমার স্কুলে এক জন ক্লার্কের অভাব রয়েছে। নানা কাজে শিক্ষকদের হাত লাগাতে হয়।’’ পান্ডুয়ার দ্বারবাসিনী উচ্চ বালিকা বিদ্যাল‌য়ের প্রধান শিক্ষিকা কাকলি চক্রবর্তী জানান, ওই স্কুলে আটশোরও বেশি ছাত্রী আছে। একমাত্র করণিক অবসর নিয়েছেন ৪ বছর আগে। তার পরে আর ওই পদে নিয়োগ হয়নি। প্রধান শিক্ষিকা এবং সহ-শিক্ষিকারা মিলে ওই দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, বিদ্যালয় উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে উন্নীত হয়েছে। ২ জন করণিক থাকার কথা। কিন্তু এক জনও নেই। চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর পদ ২টি। আছেন এক জন।

অনেক স্কুলেই তাই এই ভাবে শিক্ষাকর্মীর কাজ কাঁধে তুলে নিতে হচ্ছে শিক্ষকদের।

Teacher Vacant position School student
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy