শরৎ এসে গেলেও মুখে হাসি নেই তাঁতিদের।
জিএসটি-র ধাক্কা সয়ে ওঠার আগেই সব কিছু ধুয়ে দিল জলের তোড়!
যেন মড়ার উপরে খাঁড়ার ঘা! পুজোর মুখে জোড়া ফলায় বিদ্ধ উদয়নারায়ণপুরের তাঁত শিল্প। তাঁতিদের দুশ্চিন্তা, ‘‘পুজোর বাজার আর বোধহয় ধরা যাবে না।’’
হাওড়া জেলায় অন্তত সাড়ে ছ’হাজার তাঁতঘর রয়েছে। তার মধ্যে সাড়ে পাঁচ হাজার তাঁতঘর রয়েছে শুধু উদয়নারায়ণপুরেই। এখানকার অন্তত ১৫ হাজার মানুষ এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। বন্যায় একদিকে যেমন ক্ষতি হয়েছে যন্ত্রপাতির, তেমনই নষ্ট হয়েছে সুতো, তৈরি হওয়া শাড়ি-ধুতি। জেলা হ্যান্ডলুম দফতর প্রাথমিক হিসাব বলছে, শুধু বন্যাতেই এই শিল্পে ক্ষতির পরিমাণ অন্তত ৪ কোটি টাকা।
উদয়নারায়ণপুরে হরালি-উদয়নারায়ণপুর, কুর্চি-শিবপুর, রামপুর-ডিহিভুরসুট-আসন্ডা, পাঁচারুল, দেবীপুর-সহ ১১টি পঞ্চায়েতেই তাঁতের কাজ হয়। হরালিতে ঘরে ঘরে তাঁত আছে। উদয়নারায়ণপুরের অধিকাংশ তাঁত হস্তচালিত। এগুলি বসানো হয় মেঝে থেকে অন্তত দু’ফুট গর্ত করে। সাম্প্রতিক বন্যায় ওই সব এলাকার তাঁতিদের ঘরে অন্তত চার ফুট জল দাঁড়িয়ে যায়। ফলে, তাঁতের যন্ত্রপাতি জলে ডুবে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। যন্ত্রে লাগানো মূল্যবান সুতোও নষ্ট হয়েছে।
বন্যার আগেই অবশ্য জিএসটি-র জন্য সঙ্কটে পড়েছিলেন তাঁতিরা। এখানকার বেশির ভাগ তাঁতি হুগলির রাজবলহাটে তাঁদের পণ্য বিক্রি করেন। ওই হাটে পণ্য বিক্রি হয় মহাজনী প্রথায়। অর্থাৎ, মহাজনেরা তাঁতিদের শাড়ি-ধুতির নকশা এবং সুতো দিয়ে দেন। সেই নকশামতো ধুতি-শাড়ি তৈরি করে দিলে মহাজন তাঁতিকে মজুরি দিয়ে দেন।
তাঁতিরা জানান, জিএসটি চালু হওয়ার ফলে মহাজনেরা একদিকে যেমন পণ্যের বরাত কমিয়ে দিয়েছেন। আগে যে সব বরাত দিয়েছিলেন সেগুলিও নিতে চাইছেন না। ফলে, তাঁতিদের ঘরে ডাঁই হয়ে পড়েছিল তৈরি হওয়া ধুতি-শাড়ি। বন্যায় সে সব বাঁচাতে পারেননি তাঁরা।
হরালি গ্রামের তাঁতি কার্তিক করণ বলেন, ‘‘মহাজনদের অনেকেরই জিএসটি ফাইল তৈরি হয়নি। ফলে, তাঁরা আমাদের পণ্য নেননি। বরাত কমিয়ে দেন। হয়তো ধীরে ধীরে জিএসটি-র সমস্যা মিটে যেত। কিন্তু বন্যা এসে সব ধুয়ে দিল।’’
ইতিমধ্যেই জেলা হ্যান্ডলুম দফতরের আধিকারিকেরা এই এলাকা পরিদর্শন করতে গিয়েছেন। দফতরের জেলা আধিকারিক দেবাশিস ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ ভালই।’’ ব্লক তন্তুবায় সমিতির সম্পাদক সনাতন মণ্ডল বলেন, ‘‘যন্ত্রপাতি মেরামত করে ফের উৎপাদন শুরু করতে এখনও কিছুটা সময় লাগবে। তার পরে আছে জিএসটির ফাঁড়া।’’
এখন তাঁতিদের একটাই লক্ষ্য। সরকারি ক্ষতিপূরণ নিয়ে কোনওমতে টিকে থাকা। স্থানীয় বিধায়ক সমীর পাঁজা বলেন, ‘‘তাঁতিরা যাতে ক্ষতিপূরণ পান, তার চেষ্টা করা হবে। ক্ষয়ক্ষতির নিখুঁত হিসাব চলছে।’’ শরৎ এসে গেলেও মুখে হাসি নেই তাঁতিদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy