Advertisement
E-Paper

স্বামী ঠেঙিয়ে চোলাই ঠেক ভাঙলেন মহিলারা

দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল ওঁদের। এ বার ঘুরে দাঁড়ালেন। দুর্গাপুজোর মুখে ঘরের ছাপোষা বউদের ‘রণং দেহি’ রূপ দেখলেন গোঘাটের রঘুবাটি অঞ্চলের পুরুষেরা!

পীযূষ নন্দী

শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:১৮
চোলাইয়ের ঠেক ভেঙে দিচ্ছেন মহিলারা। শুক্রবার পার্বতীপুরে ছবি তুলেছেন মোহন দাস।

চোলাইয়ের ঠেক ভেঙে দিচ্ছেন মহিলারা। শুক্রবার পার্বতীপুরে ছবি তুলেছেন মোহন দাস।

দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল ওঁদের। এ বার ঘুরে দাঁড়ালেন।

দুর্গাপুজোর মুখে ঘরের ছাপোষা বউদের ‘রণং দেহি’ রূপ দেখলেন গোঘাটের রঘুবাটি অঞ্চলের পুরুষেরা!

শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে প্রায় চার ঘণ্টা ধরে এলাকার প্রায় ৮০টি চোলাইয়ের ভাটি ভাঙলেন রঘুবাটির পার্বতীপুর, সুবীরগেড়ে, গয়লাগেড়ে, খাটগ্রামের দাসপাড়া এবং বিজলকোনার বাগদীপাড়ার আদিবাসী এবং তফসিলি সম্প্রদায়ের প্রায় ১০০ মহিলা। বাধা দিতে গিয়ে কোনও পুরুষ মার খেলেন স্ত্রীর হাতেই! কেউ খেলেন তাড়া! নষ্ট করা হল অন্তত ৩০ হাজার লিটার মদ।

ওই গ্রামগুলির পুরুষদের ৯০ ভাগই হয় ১০০ দিনের প্রকল্পে কাজ করেন। নয়তো দিনমজুরি। বিভিন্ন পাড়ায় প্রায় প্রতিটি ঘরে চোলাই তৈরি হচ্ছিল। পুরুষেরা উপার্জনের বেশির ভাগটাই চোলাইয়ের নেশার পিছনে খরচ করে ফেলছিলেন। সন্ধ্যা নামলেই প্রাথমিক বিদ্যালয় চত্বর থেকে শুরু করে গ্রামের ডাকঘর কিংবা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রর দাওয়ায় নেশার আসর বসছিল। এ নিয়ে পরিবারে অশান্তি, মারধরও রোজকার ঘটনা। এ দিনের অভিযানে সামিল মহিলাদের অভিযোগ, আবগারি দফতর ও পুলিশ বছরে এক-দু’বার অভিযান চালিয়ে মদ তৈরির সরঞ্জাম ভাঙে ঠিকই। কিন্তু দু’দিন পরেই ফের সেগুলি গজিয়ে ওঠে। তার পিছনে শাসকদলের প্রশ্রয়ও ছিল। তাই তাঁরা এ দিন পরিকল্পনা করে এককাট্টা হয়ে রাস্তায় নামেন।

মহিলাদের এই অভিযানের এক নেত্রী আরতি মুর্মু গয়লাগেড়ে গ্রামের বাসিন্দা। পুকুরে স্বামীর চুবিয়ে রাখা মদের বোতল খুঁজতে নেমেছিলেন। স্বামী বাধা দিতেই লাঠি দিয়ে পেটান। মাধবী হাঁসদাকে দেখা যায়, স্বামীর চুলের মুঠি ধরে টানছেন। সরস্বতী মুর্মু লাঠি হাতে তাড়া করেন স্বামীকে। এমন টুকরো টুকরো দৃশ্য এ দিন প্রায় চার ঘণ্টা ধরে দেখা গিয়েছে ওই এলাকাগুলিতে। এমনকী, দলবল নিয়ে মহিলারা নিজের ঘরের আলমারি বা পুকুরের পাড়েও তল্লাশি চালান। খবর পেয়ে পুলিশও অভিযানে সামিল হয়।

সফল অভিযান চালানোর পরে কী বলছেন মহিলারা?

আরতিদেবী বলেন, ‘‘ভাল করে খেতেই পাই না। আর স্বামীরা মদ খেয়ে সব টাকা নষ্ট করছে। এ সব কতদিন সহ্য করা যায়?’’ সুচিত্রা সাঁতরা নামে এক জন বলেন, ‘‘চোলাই খেয়ে অল্প বয়সেই কেউ কেউ মারা যাচ্ছে। তাই প্রতিবাদেই নামতে হল।’’

বিহারে মদ কেনাবেচা বন্ধের জন্য বিধানসভা নির্বাচনের আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন নীতীশ কুমার। মুখ্যমন্ত্রী হয়ে সেই প্রতিশ্রুতি তিনি পালন করেন। রাজ্যের মহিলারা তাঁকে দু’হাত তুলে অভিনন্দন জানান। রঘুবাটির মতো পশ্চিমবঙ্গের এক প্রত্যন্ত এলাকায় অবশ্য মহিলারাই চোলাই ব্যবসা বন্ধ করে দিলেন। এ জন্য তাঁদের প্রশংসা করেছেন ভারপ্রাপ্ত মহকুমাশাসক (আরামবাগ) দেবজ্যোতি বসু। তিনি বলেন, “ভাল উদ্যোগ। মহকুমায় কোথায় কোথায় বেআইনি মদ তৈরি হচ্ছে তা খতিয়ে দেখে ধারাবাহিক ভাবে অভিযানের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।’’

আবগারি দফতরের আরামবাগের ওসি আশিস নন্দ গোস্বামী স্বীকার করেন, চোলাইয়ের বিরুদ্ধে অভিযান চালালেও লোকবলের অভাবে নিয়মিত নজরদারি সম্ভব হয় না। মহিলাদের ভূমিকার প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘‘ম্যাজিক শো, বাউল গান ইত্যাদির মাধ্যমে আমরা সচেতনতা শিবির করছি ঠিকই, তবে এই মহিলাদের মতো গ্রামবাসীরা উদ্যোহী হলে তবেই চোলাই উচ্ছেদ সম্ভব।” চোলাইয়ে প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ উড়িয়ে গোঘাটের তৃণমূল নেতা প্রদীপ রায় বলেন, “রঘুবাটির আদলেই প্রতি অঞ্চল ধরে মহিলাদের নিয়ে মদ-বিরোধী কমিটি গঠন করা হচ্ছে।”

কী বলছেন রঘুবাটির পুরুষেরা?

সকলে মুখ লুকোতে পারলেই বাঁচেন। শুধু তাঁদের মধ্যে এ দিন স্ত্রীর হাতে মার খাওয়া রবীন্দ্রনাথ মুর্মুর উপলব্ধি, ‘‘ওরা মনে হয় ঠিক কাজই করল।’’

Liquor shop
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy