স্কুলের সার্বিক উন্নয়নের জন্য সর্বশিক্ষা প্রকল্পের মাধ্যমে হাওড়ার প্রত্যেক স্কুলকে প্রয়োজনীয় টাকা মঞ্জুর করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। তারপর তিন-চার বছর পেরিয়ে গেলেও সেই টাকা এখনও খরচ করতে পারেনি জেলার একাধিক স্কুল। বাধ্য হয়ে তাই কড়া ব্যবস্থার পথে হাঁটল হাওড়া জেলা প্রশাসন দফতর।
যেসব স্কুল এখনও বরাদ্দ টাকা খরচ করতে পারেনি তাদেরকে টাকা ফেরত এবং যে সব স্কুল টাকা খরচ করলেও এখনও ‘ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট’ জমা দেয়নি তাদের তা দ্রুত জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে জেলা সর্বশিক্ষা মিশন দফতর। লিখিত ভাবে সেই নির্দেশ স্কুলে স্কুলে পাঠানোও হয়েছে। তারপরেও কোনও স্কুল ‘ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট’ জমা দিতে দেরি করলে পরবর্তী কালে সেই স্কুলকে উন্নয়ন খাতে টাকা না দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা সর্বশিক্ষা মিশন।
সম্প্রতি হাওড়া জেলা সর্বশিক্ষা মিশনের লক্ষ করে যে, স্কুলের উন্নয়নের কাজে সর্বশিক্ষা মিশনের দেওয়া টাকা খরচই করতে পারেনি জেলার কুড়িটির বেশি স্কুল। তিন-চার বছর ধরে প্রায় দু’কোটি টাকা পড়ে রয়েছে স্কুলে।
সর্বশিক্ষা মিশন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, হাওড়ার গ্রামীণ ও শহর এলাকায় মোট ২০৯৭টি প্রাইমারি স্কুল ও ৬৪০টি আপার প্রাইমারি স্কুল রয়েছে। মূলত হাওড়া পুরসভা ও উলুবেড়িয়া পুরসভার ২০টি স্কুলে এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। এর জন্য অবশ্য স্কুল কর্তৃপক্ষগুলি জমি সংক্রান্ত সমস্যাকে দায়ী করেছেন।
অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) সঞ্জয় বসু বলেন, “পড়ে থাকা টাকা যাতে স্কুলগুলি অন্য খাতে ব্যবহার না করে, সে জন্য টাকা ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছি আমরা। তবে যেসব স্কুল এখনও ‘ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট’ জমা দেয়নি তাদের পরবর্তীকালে উন্নয়নমূলক খাতে অর্থ বরাদ্দ না করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছি আমরা।’’
জেলার সর্বশিক্ষা মিশন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় প্রাথমিক ও উচ্চপ্রাথমিক মিলিয়ে ৬০০ থেকে ৭০০টি স্কুল সবমিলিয়ে প্রায় ২০ কোটি টাকার ‘ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট’ জমা দিতে পারেনি। গত বছরও ওই ‘সার্টিফিকেট’ জমা না দিতে পারায় জেলার কোনও স্কুলকেই উন্নয়নমূলক কাজের জন্য সর্বশিক্ষা মিশন প্রকল্পের টাকা দেওয়া যায়নি। সর্বশিক্ষা মিশনের হাওড়া জেলা প্রকল্প অধিকর্তা বোলান ভট্টাচার্য বলেন, “আমরা বিশেষ উদ্যোগী হয়ে অর্ধেকের বেশি টাকা উদ্ধার করতে পেরেছি। তবে এখনও ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকার ‘ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট’ আদায় করতে পারিনি।”
এ বিষয়ে দফতরের আর এক কর্তার মন্তব্য, “স্কুল সার্টিফিকেট দেবে কী করে? ওই টাকা তো এখনও খরচই হয়নি। তিন চার বছর ধরে পড়ে রয়েছে।’’ সব মিলিয়ে তাই স্কুলগুলির দায়বদ্ধতা ও জেলা সর্ব শিক্ষা দফতরের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
তবে হাওড়া জেলা পরিষদের শিক্ষা-কর্মাধ্যক্ষ শ্রীধর মণ্ডল এর জন্য জেলার সর্বশিক্ষা দফতরকেই দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, “উন্নয়নের টাকা এ ভাবে ফেলে রাখা মোটেও ঠিক হয়নি। আমরা ক্ষমতায় আসার পর দ্রুত সমস্যা সমাধানের জন্য সর্বশিক্ষা মিশন ও ডিআই, এসআই-কে নিয়ে বৈঠক করি। ‘ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট’ জমা না দিতে পারায় গত বছর জেলার কোনও স্কুলকে নতুন করে কোনও টাকা দেওয়া যায়নি। এ বছরও যাতে এমনটা না হয় সেটা দেখা হচ্ছে।’’
তবে স্কুলগুলিতেও পরিকাঠামোগত সমস্যা রয়েছে। আমতার পীতাম্বর হাইস্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১২ সালে কোনও পরিচালন সমিতি না থাকায় টাকা পড়েছিল। পরে প্রশাসক নিয়োগ করায় ওই বছরের টাকা স্কুল কর্তৃপক্ষ ধীরে ধীরে খরচ করতে পেরেছে। এমনই অবস্থা জেলার বেশিরভাগ স্কুলের। এছাড়া স্কুলগুলি হিসাবপত্র যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণেও তেমন পটু নয়। সেজন্য সর্বশিক্ষা দফতরের পক্ষ থেকে ক্যাম্পের ব্যবস্থা করা হত। সেখানেই হিসেবপত্র মিলিয়ে নিয়ে সর্বশিক্ষা দফতর হাতে হাতে ‘ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট’ আদায় করত। ক্যাম্পে স্কুলগুলিও তাদের সমস্যার কথা তুলে ধরত। কিন্তু এ বছর জেলায় একাধিক স্তরের নির্বাচন হওয়ায় কোনও ক্যাম্পের আয়োজন করা যায়নি। ফলে এই সমস্যা হয়েছে বলে দাবি স্কুলগুলির।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy