১০০ দিনের কাজে শ্রমিকদের দ্রুত মজুরি দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হাওড়া জেলায় ইএফএমএস (ইলেকট্রনিক্স ফান্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম) চালু হয়েছিল। কিন্তু রাজ্যের তহবিলে টাকা না থাকায় নতুন এই ব্যবস্থা কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে। একশো দিনের কাজের প্রকল্পে জবকার্ডধারীদের অবস্থা পড়ে রয়েছে সেই তিমিরেই। কথা ছিল এই ব্যবস্থা চালু হলে শ্রমিকেরা কাজ শেষ হয়ে গেলেই মজুরি পেয়ে যাবেন। কিন্তু বাস্তবে দেখা গিয়েছে অন্য ছবি। তহবিলে টাকা না থাকায় মজুরির আশায় সেই হাপিত্যেস করে বসে থাকতে হচ্ছে শ্রমিকদের।
১০০ দিনের প্রকল্পের রাজ্য সেলের এক পদস্থ আধিকারিক অবশ্য জানান, ব্যবস্থাটি নতুন। তাই কিছু কিছু ক্ষেত্রে অসুবিধা হচ্ছে। তবে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।
ইএফএমএস ব্যবস্থা কী?
রাজ্য পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর সূত্রের খবর, এই ব্যবস্থায় প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতকে একটি নির্দিষ্ট সফটওয়্যার দেওয়া হয়েছে। একশো দিনের প্রকল্পে যে সব শ্রমিক কাজ করবেন তাঁদের কাজ শেষ হয়ে গেলেই মজুরির হিসাব সংক্রান্ত তালিকা ওই সফটওয়্যারের মাধ্যমে পৌঁছে যাবে রাজ্য সেলে। সেই তালিকায় সই করবেন সংশ্লিষ্ট গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান এবং নির্বাহী সহকারী। তালিকা দেখে জবকার্ডধারীদের নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দেবে রাজ্য সেল। যে সব ব্যাঙ্কে জবকার্ডধারীদের অ্যাকাউন্ট রয়েছে সেখানে টাকা আসার পরে তা তুলে নিতে পারবেন সংশ্লিষ্ট জবকার্ডধারী।
পুরনো ব্যবস্থায় রাজ্য থেকে টাকা দেওয়া হত জেলায়। জেলা থেকে টাকা আসত ব্লকে। ব্লক থেকে তা পাঠিয়ে দেওয়া হত পঞ্চায়েতের অ্যাকাউন্টে। পঞ্চায়েতের পাঠানো তালিকা মেনে ব্যাঙ্কগুলি জবকার্ডধারীদের অ্যাকাউন্টে টাকা দিয়ে দেত। জবকার্ডধারীরা তা তুলতে পারতেন। রাজ্য পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের বক্তব্য, ইএফএমএস ব্যবস্থায় এই জটিলতা থাকবে না। পঞ্চায়েত থেকে সরাসরি জবকার্ডধারীদের নাম এবং তাঁদের মজুরির তালিকা রাজ্য সেলে চলে গেলে সেখান থেকেই জবকার্ডধারীদের অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এর ফলে কবে রাজ্য থেকে জেলা বা জেলা থেকে ব্লক এবং গ্রাম পঞ্চায়েতের অ্যাকাউন্টে টাকা আসবে সে জন্য অপেক্ষায় থাকতে হবে না।
হাওড়া জেলায় গত ১ জুলাই থেকে ইএফএমএস ব্যবস্থা চালু করার জন্য গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এমনকী এই ব্যবস্থা চালু না করলে তাদের একশো দিনের কাজের প্রকল্পে টাকা দেওয়া হবে না বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়। সেই নির্দেশিকা মেনে জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহেই জেলার ১৫৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতে ইএফএমএস ব্যবস্থা চালু করে দেওয়া হয় বলে জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর। কিন্তু নতুন ব্যবস্থা চালু হলেও জবর্কাডধারীরা তার সুফল পাচ্ছেন না বলে বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান জানিয়েছেন। প্রধানদের অভিযোগ, কোনও একটি প্রকল্পের কাজ হয়ে গেলে জবকার্ডধারীদের নামের তালিকা এবং প্রাপ্য মজুরির বিবরণ তাঁরা ইএমএফএস ব্যবস্থার মাধ্যমে রাজ্য সেলে পাঠাতে চাইলেও ব্লক প্রশাসন থেকে তাঁদের বারণ করা হচ্ছে।
শ্যামপুর ২ ব্লকের এক পঞ্চায়েতের প্রধানের কথায়, “ইএমএফএস ব্যবস্থা চালু করার আগে প্রশিক্ষণের সময় আমাদের বলা হয়েছল, কাজ শেষ হয়ে গেলেই আমরা জবকার্ডধারীদের নামের তালিকা এবং প্রাপ্য মজুরির হিসাব রাজ্য সেলে পাঠাতে পারব। সঙ্গে সঙ্গে রাজ্য সেল থেকে জবকার্ডধারীদের অ্যাকাউন্টে টাকা চলে আসবে। কিন্তু ব্লক থেকে আমাদের বলা হল, এখন ও সব কিছু করবেন না। তহবিলে টাকা নেই। তা হলে নতুন ব্যবস্থায় সুবিধা কী হল?” ব্লকেরই আরও এক গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান বলেন, “ইএফএমএস ব্যবস্থায় কাজ হয় কিনা যাচাই করার জন্য ৪০ জন শ্রমিকের নাম এবং মজুরির বিবরণ নতুন ব্যবস্থার মাধ্যমে রাজ্য সেলে পাঠাই। পরে ব্যাঙ্কে খোঁজ নিয়ে দেখি তাঁদের অ্যাকাউন্টে টাকা আসেনি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy