প্রশিক্ষিত ডুবুরির দাবি জানিয়ে জনতা অবরোধ করলে তা তুলতে লাঠি চালায় প্রশাসন। অথচ প্রশাসনের গাফিলতিতেই জেলায় স্থায়ী ডুবুরি নেই দীর্ঘদিন ধরে। তাই সরকার পরিবর্তনেও হাল ফেরে না হুগলির বিপর্যয় মোকাবিলা ব্যবস্থার।
দিন কয়েক আগে স্নান করতে নেমে শ্রীরামপুরের খটিরবাজার এলাকার যুবক অমর প্রধান গঙ্গায় তলিয়ে যান। টানা দু’দিন ডুবুরি আনার দাবিতে গলা ফাটান এলাকার বাসিন্দারা। দাবি আদায়ে জিটি রোড অবরোধ করায় জনতার কপালে জোটে পুলিশের লাঠি। শেষ পর্যন্ত ঘটনার দু’দিন পরে কলকাতা থেকে প্রশিক্ষিত ডুবুরি এসে কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় জল থেকে তুলে আনে দেদহ।
সম্প্রতি কোন্নগরের বারোমন্দির ঘাটে চার জন স্কুল ছাত্র জলে ডুবে মারা যায়। কলকাতা থেকে উদ্ধারকারী দল এলেও জলে নামতে গড়িমসি দেখে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন ছাত্রদের পরিবারের লোকজন।
বছর খানেক আগে উত্তরপাড়ার দোলতলা ঘাটে তলিয়ে যাওয়া ছেলেকে উদ্ধারে গতি আনতে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হন মা। মুখ্যমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দেওয়ায় জোরকদমে তল্লাশি চলে। দেহ অবশ্য মেলেনি।
রাজ্যে ক্ষমতায় এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাম জমানার বেহাল ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টের (পেশাদার ডুবুরি ওই ব্যবস্থারই অঙ্গ) খোলনলচে বদলে দেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু আশ্বাসই সার। সরকারের সাড়ে তিন বছরেও পরিস্থিতি যে এতটুকু বদলায়নি একটার পর একটা ঘটনাই চোখে আঙুল দিয়ে তা দেখিয়ে দিচ্ছে। হুগলি-সহ বিভিন্ন জেলায় নৌকোডুবি থেকে জলে তলিয়ে যাওয়া কাউকে উদ্ধারে তাই কলকাতার দিকে তাকিয়ে থাকতে হয় জেলার মানুষকে।
উত্তরপাড়া থেকে বলাগড় পর্যন্ত হুগলির একের পর এক জনপদ গঙ্গার ধারে। মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন জায়গায় গঙ্গায় তলিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। কিন্তু প্রায় প্রতি ক্ষেত্রেই ডুবুরি আনতে রীতিমতো কাঠখড় পোড়াতে হয়। কেননা, জেলায় সিভিল ডিফেন্স থাকলেও তাঁদের ডুবুরি নেই। তাই এ ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসন কার্যত ঠুঁটো জগন্নাথ। প্রয়োজনে কলকাতার গুটিকতক ডুবুরির উপর নির্ভর করা ছাড়া গতি নেই। ফলে ওই দলের উপর চাপ বাড়ে। দূরে যেতে বহু সময় গড়িয়ে যায়। অনেক সময় সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনের গড়িমসি বা সমন্বয়ের অভাবেও বিষয়টি দীর্ঘায়িত হয়। ফলে তৈরি হয় বিক্ষোভের পরিস্থিতি।
অগত্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় আসরে নামতে হয় পুলিশকে। প্রয়োজন অনুযায়ী উদ্যোগী হয়ে নৌকো জোগাড় করা থেকে মানুষের ক্ষোভ প্রশমন করার দায়িত্ব তাদেরই নিতে হয়। শ্রীরামপুরে সুরকি ঘাটে তলিয়ে যাওয়া যুবকের খোঁজে ডুবুরি আনার ক্ষেত্রেও নানা দফতরে যোগাযোগ করেও কাজ না হওয়ায় দিশেহারা পুলিশ ঘটনার পরদিন খুঁজেপেতে সাঁতারে পটু কিছু ছেলেকে জলে নামিয়ে দেয়। কিন্তু প্রশিক্ষণ ছাড়া এমন পদক্ষেপ কতটা যুক্তিযুক্ত, সেই প্রশ্ন ভুলে যান প্রশাসনিক কর্তারাই।
সমস্যার কথা বুঝতে পেরে গঙ্গা লাগোয়া বৈদ্যবাটি পুরসভার চেয়ারম্যান অজয়প্রতাপ সিংহ বছর দু’য়েক আগেই রাজ্য সরকারের কাছে বিপর্যয় মোকাবিলা নিয়ে নির্দিষ্ট প্রস্তাব পাঠান রাজ্য সরকারের কাছে। পুর-কর্তৃপক্ষ জানান, পুর-এলাকায় এমন কিছু যুবক আছেন, যাঁরা সাঁতারে অত্যন্ত দক্ষ। গঙ্গায় মাছ ধরার সুবাদে তাঁরা জোয়ার-ভাটার সঙ্গে পরিচিত। বেশ কিছুক্ষণ জলে ডুবে থাকতেও অভ্যস্ত। শ্রাবণী মেলার সময় পুরসভার উদ্যোগে এঁরা গঙ্গায় ‘ডিউটি’ করেন। প্রস্তাবে বলা হয়, এই যুবকদের রাজ্য সরকার ডুবুরির প্রশিক্ষণ এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম দিক। পুরসভার তত্ত্বাবধানে নৌকোডুবি-সহ যে কোনও ঘটনায় উদ্ধারকাজে পাঠানো হবে তাঁদের। প্রাথমিক ভাবে পুরসভা এ জন্য ওই যুবকদের বেতনের ব্যবস্থাও করবে।
বলাবাহুল্য, প্রস্তাব নিয়ে দু’বছরেও প্রশাসনিক স্তরে কোনও নড়াচড়া হয়নি। বিপর্যয় মোকাবিলা ব্যবস্থা বেহালই থেকে গিয়েছে। এ ব্যাপারে অজয়প্রতাপবাবু অবশ্য কিছু বলতে চাননি। তিনি শুধু বলেন, “আমরা প্রস্তাব পাঠিয়েছি। তা কার্যকর হলে আমাদের তরফে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy