প্রকল্পে নির্মিত শৌচাগার। ছবি: মোহন দাস।
নির্মল ভারত অভিযান কর্মসূচি রূপায়ণে উঠেপড়ে লেগেছে হুগলি জেলা প্রশাসন। প্রতিটি পরিবারে শৌচাগার তৈরি নিশ্চিত করতে পঞ্চায়েত ধরে ধরে একপ্রস্থ সমীক্ষা পর্ব আগেই শেষ হয়েছে। গত ১৮ থেকে ২১ জুন ব্লক ধরে ধরে প্রধান রাজমিস্ত্রিদের প্রশিক্ষণও সমাপ্ত। এ বার সুদৃশ্য শৌচাগার উপভোক্তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার পালা। সেই কাজও তড়িঘড়ি শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সমস্ত ব্লকগুলিকে।
জেলায় এই প্রকল্প রূপায়ণের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলাপরিষদ) সুমন ঘোষ বলেন, “আগামী দু’বছরের মধ্যে হুগলিকে নির্মল জেলা হিসাবে গড়ে তুলতেই এই বিশেষ তৎপরতা।” তিনি আরও জানান, এই কর্মসূচি ধারাবাহিকভাবে চলতেই থাকবে, নির্মল ভারত অভিযান কর্মসূচির লক্ষ্য প্রতিটি গ্রামে নির্মল পরিবেশ গড়ে তোলা। যাতে মানুষ সংক্রামক ডায়েরিয়া, কলেরা, পোলিও, টাইফয়েড ইত্যাদি থেকে মুক্তির পাশাপাশি তাঁদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন, জীবিকার উৎস শক্তিশালী করা এবং সর্বোপরি গ্রামের সার্বিক পরিকাঠামোর উন্নতি ঘটানো যায়।
জেলায় নির্মল ভারত অভিযান কর্মসূচিতে গতি আনতে সার্বিক স্বাস্থ্যবিধান কর্মসূচির সঙ্গে গ্রামীণ কর্মনিশ্চয়তা প্রকল্পের (১০০ দিনের কাজ) মেলবন্ধনের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয় ২২ ফেব্রুয়ারি। জেলা গ্রামোন্নয়ন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কেন্দ্রের নির্মল ভারত অভিযান কর্মসূচি সার্বিক স্বাস্থ্যবিধান অভিযানের মাধ্যমে সূচনা হয় ২০০৪ সাল নাগাদ। লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছতে এ কাজে উৎসাহ দিতে নির্মল গ্রাম পুরস্কারও চালু করা হয়। কর্মসূচি রূপায়ণের পর কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক দল ঘুরে দেখার পর বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেল পরিষদ নির্মল পুরস্কারও পায়। কিন্তু বাস্তবে দেখা গিয়েছে, ওই শৌচাগার নিয়মিত ব্যবহার হয়নি কিংবা ঘুঁটে বা জ্বালানি রাখার জন্য ব্যবহার হচ্ছে।
এই অবস্থায় প্রকল্পে নির্মিত শৌচাগারের যথাযথ ব্যবহার এবং প্রকল্পের কাজের গতি বাড়াতে কেন্দ্রীয় সরকার ২০১২ সালের ১১ সেপ্টেম্বর সার্বিক স্বাস্থ্যবিধান কর্মসূচির সঙ্গে মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মনিশ্চয়তা প্রকল্পের (১০০ দিন কাজ) সমন্বয়ের আদেশ জারি করে। তার প্রেক্ষিতেই হুগলিতে শুরু হচ্ছে এই কর্মসূচি। অতিরিক্ত জেলাশাসক (পঞ্চায়েত) সুমন ঘোষ বলেন, “আমাদের সার্বিক স্বাস্থ্যবিধান অভিযানের কাজ চলছিলই। ২০০৪ সালেই নির্মল জেলা হিসাবে আমরা অনেকটা এগিয়ে গিয়েছিলাম। সম্প্রতি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে জেলার ২০৭টি পঞ্চায়েতের বেশ কিছু পরিবারের শৌচাগার নির্মাণে অনীহা রয়েছে। এখন এই সমন্বয়ের ফলে প্রকল্পটির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে মানুষের আগ্রহ বাড়বে। সমন্বয়ের মাধ্যমে কর্মসূচি রূপায়ণে দরিদ্র পরিবারগুলির আর্থিক সমস্যার সুরাহা হবে।” তিনি আরও বলেন, “শৌচাগার পিছু দুই প্রকল্প থেকে আমরা দেব ১০ হাজার টাকা। উপভোক্তাকে দিতে হবে মাত্র ৯০০ টাকা।”
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, প্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী যে সব পরিবারে স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার নেই এবং অতীতে স্বাস্থ্যবিধান প্রকল্পে কোনও অনুদান পাননি তাঁরাই অর্থ সাহায্য পাবেন। আবার দারিদ্রসীমার উপরে বসবাসকারী পরিবারগুলির মধ্যে তপসিলি এবং তপসিলি উপজাতি পরিবার, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষি, ভূমিহীন পরিবার, শারীরিক অক্ষম এবং মহিলা নির্ভর পরিবার যাঁরা অতীতে অনুদান নেননি তাঁরাও শৌচাগার নির্মাণে অর্থ সাহায্য পাবেন।
যেহেতু নির্মল ভারত অভিযান কর্মসূচির সঙ্গে ১০০ দিন প্রকল্পের সমন্বয় ঘটানো হয়েছে তাই এই প্রকল্পের সুবিধা পেতে গেলে সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলির জবকার্ড থাকতে হবে। যে সব পরিবারে জবকার্ড নেই। তারা যাতে দ্রুত তা করিয়ে নিতে পারেন সে জন্য পঞ্চায়েতগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রকল্প রূপায়ণকারী সংস্থা হিসাবে কাজ করবে গ্রাম পঞ্চায়েত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy