নামটাই যা বহন করছে অতীতের স্মৃতি ‘পিতলের রথ’।
আরামবাগে রথযাত্রায় সেই পিতলের রথের পিতল আজ আর দেখা যায় না। সেই কবে চুরি হয়ে গিয়েছে সব পিতল। এমনকী, সামনে লাগানো দু’টি পিতলের ঘোড়ার একটি আজ আর নেই। স্থানীয় নাগ পরিবারের কাঠের রথেরই রশি টানেন কয়েক হাজার মানুষ। রবিবারও আরামবাগে সেই রথযাত্রাকে ঘিরে উন্মাদনা ছিল পুরোমাত্রায়। সদরঘাট থেকে ব্যানার্জি পাড়ায় মাসির বাড়ি পাঁচ মিনিটের পথ যেতে রথের লেগে গেল প্রায় তিন ঘণ্টা। এখানে রথের বিগ্রহ রাধাবল্লভ জিউ।
আরামবাগের রথযাত্রা কতটা প্রাচীন, তা বলতে পারেন না শহরের প্রবীণেরা। তাঁদের মতে, কয়েকশো বছর। কথিত আছে, প্রায় ৫০০ বছর আগে বর্ধমানের রাজা বিগ্রহটি দান করেন সদরঘাটের বাসিন্দা বিহারীনাথ মুখোপাধ্যায়ের পূর্বপুরুষকে। সেই সময় ওড়িশার এক ব্রাহ্মণ বিগ্রহের পুজো করতেন। তিনিই রথযাত্রা চালু করেন। তখন রথ ছিল কাঠের। পরে সেই রথযাত্রা বন্ধ হয়ে যায়। ওই ব্রাহ্মণের মৃত্যুর পর, ১৩৩২ বঙ্গাব্দে স্থানীয় নাগ পরিবারের বিন্দুবালা দাসী স্বপ্নাদেশ পেয়ে মেয়ে কুমুদিনী দাসীর সঙ্গে যৌথ ভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত কাঠের রথের পরিবর্তন ঘটিয়ে পিতলের রথ প্রতিষ্ঠা করেন। তখন থেকেই ঘটা করে রথযাত্রা শুরু হয়। কিন্তু ধীরে ধীরে সেই রথের পিতল সবই চুরি হয়ে যায়।
নাগ পরিবারের বর্তমান প্রজন্মই এখন রথযাত্রার আয়োজন করেন। রথযাত্রার পথের দু’ধারে সাত দিন ধরে মেলা বসে। এক হাত অন্তর জিলিপি-পাঁপড়ভাজার দোকান তো থাকেই, তার সঙ্গে বাঁশের তৈরি গৃহস্থালির সরঞ্জাম, তালপাতার পাখা, ঝুড়ি, মাছ ধরার সরঞ্জাম কীসের দোকান নেই? বিকেল থেকেই রমরমিয়ে চলে বিকিকিনি। ১৬০ বছর ধরে একটানা পালিত হয়ে আসছে আমতার সাহা পরিবারের রথযাত্রা উৎসব। ১৮৫৮ সালে প্রভাবশালী বিত্তবান সাহা পরিবারের কর্তা নটবর সাহা পুরীর রথযাত্রা উৎসব দেখে অভিভূত হয় এবং প্রতিষ্ঠা করেন জগন্নাথদেবকে। সেই থেকেই পালিত হচ্ছে সাহা পরিবারের রথযাত্রা উৎসব।
৯টি চূড়া বিশিষ্ট প্রায় ২০ ফুট উচ্চতা এবং ১২ ফুট চওড়া রথটি শাল ও সেগুন কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল। সাহা পরিবারের এই জন্মের এক সদস্য পিনাকি সাহা জানান, “রথের দিন রথ দেখতে হাজার হাজার দর্শনার্থীদের সমাগম ঘটে। বাড়িতে একটি ছোট রথ রয়েছে সেই রথেই নিত্য পুজো হয়। আর বড় পথটি বাড়ি থেকে দশ মিনিটের দূরত্বে থাকে। রথের জগন্নাথ, বলরাম ও শুভদ্রা আমাদের বাড়িতেই থাকে। রথের দিন এই তিনজন দেবতাকে বড় রথে নিয়ে যাওয়া হয়।” এই দিন ও উল্টো রথের দিন এখানে একটি মেলার আয়োজন করে রথ পরিচালনা কমিটি। একবার এই রথের কাঠ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় জন্য রথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু এলাকার কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তির সহায়তায় রথ মেরামত করে পালিত হল রথযাত্রা উৎসব। দুর্গাপুজোর মতো আমাদের কাছে এটিও একটি বড় উৎসব বলে জানান এই কমিটির সভাপতি স্বদেশ মজুমদার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy