Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বুজে গিয়েছে খাল, নিকাশি সমস্যায় খলনায়ক পুরসভা

পুরসভার নথিতে রয়েছে নিকাশি খাল। কিন্তু এক সময়ের সেই প্রধান নিকাশি খাল বাস্তবে অস্তিত্ব হারিয়েছে। পরিণামে অল্প বৃষ্টিতেই জলমগ্ন পশ্চিম শ্রীরামপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা। দিনের পর দিন মাটি আর আবর্জনায় খালের চারপাশ অনেকটাই ভরে গিয়েছে। প্লট করে বিক্রিও হয়ে গিয়েছে সেই জমি। সেখানে মাথা তুলেছে বাড়িঘর। আর কচুরি পানা আর আগাছায় ভর্তি হয়ে একদা চওড়া খাল সরু নালার আকার নিয়ে এখনও নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে। যদিও পুর-কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, অবৈধ উপায়ে খালের চারপাশের জমি ভরাট করা হয়েছে। তাই তাঁরা ওই জমির মিউটেশন দেননি।

নামেই খাল। নেই নিকাশির ক্ষমতা।-নিজস্ব চিত্র।

নামেই খাল। নেই নিকাশির ক্ষমতা।-নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০১৪ ০০:৪২
Share: Save:

পুরসভার নথিতে রয়েছে নিকাশি খাল। কিন্তু এক সময়ের সেই প্রধান নিকাশি খাল বাস্তবে অস্তিত্ব হারিয়েছে। পরিণামে অল্প বৃষ্টিতেই জলমগ্ন পশ্চিম শ্রীরামপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা।

দিনের পর দিন মাটি আর আবর্জনায় খালের চারপাশ অনেকটাই ভরে গিয়েছে। প্লট করে বিক্রিও হয়ে গিয়েছে সেই জমি। সেখানে মাথা তুলেছে বাড়িঘর। আর কচুরি পানা আর আগাছায় ভর্তি হয়ে একদা চওড়া খাল সরু নালার আকার নিয়ে এখনও নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে। যদিও পুর-কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, অবৈধ উপায়ে খালের চারপাশের জমি ভরাট করা হয়েছে। তাই তাঁরা ওই জমির মিউটেশন দেননি। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি? এ প্রশ্নের মেলেনি উত্তর।

শ্রীরামপুর পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরের তারাপুকুর লেন থেকে খালটির উৎপত্তি। সেখান থেকে মল্লিকপাড়া, প্রভাসনগর, দিল্লি রোড হয়ে তা ডানকুনি খালে মিশেছে। মল্লিকপাড়া, হাড়িপাড়া, সানিপাড়া, তারাপুকুর-সহ বিস্তীর্ণ এলাকার নিকাশির জল ওই খালে পড়ত। তারাপুকুর লেনের একটি ওষুধ কারখানার বর্জ্যও ফেলা হত এই খালে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ খালটি কার্যত অস্তিত্ব হারানোয় বিস্তীর্ণ এলাকার নিকাশি ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়েছে। ফি-বর্ষায় পাশের রাস্তা জলে ডুবে যায়। রাস্তা দিয়ে হাঁটাচলা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। জল সরতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। ফলে, মশা আর পোকামাকড়ের উপদ্রবে সমস্যা বাড়ে স্থানীয় মানুষের।

বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, খাল বোজানোর পিছনে রয়েছে এলাকার কিছু প্রভাবশালী লোক। স্থানীয় বাসিন্দা তথা পুরসভার ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর পিন্টু নাগের অভিযোগ, “নব্বইয়ের দশকে সিপিএমের কিছু নেতা সমাজবিরোধীদের সঙ্গে নিয়ে খালটি বোজাতে শুরু করে। স্থানীয় ভাবে তখন আমরা চেষ্টা করেও তা রুখতে পারিনি।” যদিও ঘটনা হচ্ছে, এক সময় এই নিকাশি খাল বাঁচাতে পথে নেমেছিল সিপিএম। অনেক স্থানীয় বাসিন্দাও তাতে সামিল হয়েছিলেন। ধীরে ধারে অবশ্য সেই আন্দোলন স্তিমিত হয়ে যায়। পুরসভা সূত্রের দাবি, এক সময়ে নিকাশি খালের ভরাট হওয়া জমি মিউটেশনের জন্য সিপিএমের লোকজন পুর-কর্তৃপক্ষের কাছে দরবার শুরু করেছিলেন। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছে সিপিএম। সিপিএমের শ্রীরামপুর জোনাল কমিটির সম্পাদক প্রবীর দাস বলেন, “আমাদের দলের কেউ খাল বোজানোর সঙ্গে যুক্ত নয়। খাল বোজানো রুখতে আমরাই জোরদার আন্দোলন করেছিলাম। বিষয়টি নিয়ে আদালতে মামলাও হয়েছিল।” যদিও গুরুত্বপূর্ণ এই নিকাশি খাল বাঁচাতে তৎকালীন পুর-কর্তৃপক্ষ যেমন উদাসীন ছিলেন তেমনই বর্তমান পুর-কর্তৃপক্ষও তাঁদের ভূমিকা পালনে তৎপর নয় বলে ক্ষোভ রয়েছে বাসিন্দাদের।

বর্তমান পুরপ্রধান অমিয় মুখোপাধ্যায় বলেন, “অসাধু উপায়ে ওই জলাশয় ভরাট করা হয়েছিল। ওই জমি ভরাট নিয়ে ব্যক্তিগত এবং রাজনৈতিক চাপানউতোরও হয়েছিল অনেক। সেই কারণে বিতর্কিত ওই জমির মিউটেশন আমরা দিইনি।” তিনি আরও জানান, এলাকাবাসীর সমস্যা সমাধানের জন্য ওখানে একটি নিকাশি নালা তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছে। বর্ষার পরেই কাজ শুরু করা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE