Advertisement
E-Paper

বালিখাদ নিয়ে তৃণমূল-বিজেপির অবশ্য ভিন্ন সুর

‘ক্ষমতা যার, বালি তার।’ রাজনৈতিক পালা বদলের সঙ্গে আরামবাগে বালি দখলের মুখগুলোও রাতারাতি বদলে যায়। অনেক সময় বালির খাদ যাঁদের দখলে থাকে, তাঁরা রাতারাতি ঝান্ডা বদলে নেন। গত কয়েক দশক জুড়ে আরামবাগে দামোদর, মুণ্ডেশ্বরী, দ্বারকেশ্বর নদীর বালির খাদের দখলে এই সমঝোতাই দেখে এসেছে আম জনতা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:৪৬
পুরশুড়ায় মেশিন বসিয়ে দামোদর থেকে বালি তোলা হচ্ছে।—নিজস্ব চিত্র।

পুরশুড়ায় মেশিন বসিয়ে দামোদর থেকে বালি তোলা হচ্ছে।—নিজস্ব চিত্র।

‘ক্ষমতা যার, বালি তার।’

রাজনৈতিক পালা বদলের সঙ্গে আরামবাগে বালি দখলের মুখগুলোও রাতারাতি বদলে যায়। অনেক সময় বালির খাদ যাঁদের দখলে থাকে, তাঁরা রাতারাতি ঝান্ডা বদলে নেন। গত কয়েক দশক জুড়ে আরামবাগে দামোদর, মুণ্ডেশ্বরী, দ্বারকেশ্বর নদীর বালির খাদের দখলে এই সমঝোতাই দেখে এসেছে আম জনতা।

বাম জামানায় অনিল বসু-ই শেষ কথা বলতেন বালি নিয়ে। সাত বারের সাংসদ, দলের ব্যাস্ত কৃষক নেতা ছিলেন সাংসদ। তিনি সময় না পেলে তার হয়ে খানাকুল, পুড়শুড়া, আরামবাগ, তারকেশ্বর বা গোঘাটে দলের জোনাল স্তরের নেতারাই বালির রাজ্যপাট সামলাতেন। বালির ট্রাকের নিয়মিত ‘চাঁদায় (পড়ুন তোলায়) পুড়শুড়ায় দামোদরের পাড়ে প্রাসাদোপম অট্টালিকা তৈরি হয়েছে।

রাজ্যে বিজেপি-র উত্থানের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই বালিখাদের দখল নিয়ে ফের রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে। দফায় দফায় মারপিট যথারীতি ফিরে এসেছে। গ্রামবাসীদের ঘর ছাড়া, পাল্টা মারে ফের গ্রামছাড়ার চেনা ছবিও হাজির। শাসক দলের হয়ে পুলিশের লোক দেখানো দৌড়ও অব্যাহত আছে বাম জামানার অনুকরণে।

বস্তুত হরিণখোলায় জয়নাল খাঁ-র বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘিরেই দলে বিরোধের সূত্রপাত। জয়নালকে ঘিরেই সেখানে রাজনৈতিক পালাবদল আবর্তিত হয়। তিনি যখন যে দলে, হরিণখোলা লাগোয়া সাত থেকে দশটি গ্রাম সেই দলের ঝান্ডা ধরে। মাস কয়েক আগে জয়নালকে দলে যোগ দেওয়াতে এসে গ্রামবাসী, মূলত মহিলাদের মুখঝামটা খেয়ে বিজেপির রাজ্য নেতারা বিলক্ষণ বুঝেছিলেন, তাঁদের এই সিদ্ধান্ত কতটা ভুল।

প্রতিরোধের ঘটনায় তাঁরা কতটা শিক্ষা নিয়েছেন সে প্রশ্ন উঠছে। বুধবার ফের হরিণখোলা মার, পাল্টা মারে উত্তপ্ত হয়ে উঠলে বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের প্রতিক্রিয়া, “দল বড় হয়েছে। গ্রামে আগে যেখানে ৫০০ লোক ছিল, এখন সেখানে ২৫ হাজার।” তাই সংগঠনে খামতির কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “সেটিংয়ে (সংগঠনে) কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তা ছাড়া তৃণমূল উপ-নির্বাচনে জেতার পর আরও মারমুখী হয়ে উঠেছে।”

বস্তুত, আরামবাগ মহকুমার নদীগলিতে যখন যে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকে, সেই দলের নেতাদের লক্ষই থাকে বালি খাদের অংশীদার হওয়া। লুঠপাটের মোক্ষম জায়গা বলেই বরাবর বালিখাদ চিহ্নিত। মহকুমায় বালিকে কেন্দ্র করে (বৈধ এবং অবৈধ) প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে ভাবে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ যুক্ত। অতীতে হরিণখোলা এলাকার মুন্ডেশ্বরী নদীর উপর অরুণবেড়া, আমগ্রাম, শ্যামগ্রাম এবং কেষ্টপুরে চারটি বৈধ বালি খাদ ছিল। ওই খাদগুলি জয়নাল এবং তাঁর অনুগামীরা চালাতেন।

চারটি খাদই এখন তৃণমূলের দখলে। দলের অন্দরের খবর, ওই খাদগুলিতে ছড়ি ঘোরান বিধায়ক পারভেজ রহমানের অনুগামী আয়ুব খান। এ ছাড়াও আছে অগুন্তি অবৈধ বালি খাদ। খাদ মালিকদের সূত্রে জানা যায়, এক একটি খাদে গড়ে ৩০ জন করে কর্মী কাজ করেন। অনুমতির অতিরিক্ত বালি তোলা হয় এই খাদগুলি থেকে। শুধু পারমিটের আবেদনে ভিত্তিতেই অনেক বেশি বালি তুলে নেন।

প্রশাসন সূত্রেই অভিযোগ, রাজনৈতিক প্রভাবে মহকুমায় বালি চুরি এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে নিষিদ্ধ এলাকাও মানছে না বালি চোরেরা। নদীগুলির সেতুর পিলারের গা থেকেও বালি সাফ হয়ে যাচ্ছে। বৈধ অনুমতি ছাড়াই আরামবাগ মহকুমার নদীগুলো থেকে বালি চুরির রেওয়াজ ছিল বরাবরই। সে সব অধিকাংশই রাজনৈতিক নেতাদের মদতে বা বেনামি অংশীদারিত্বে চলে। সেখান থেকে এক পয়সাও রাজস্ব সরকারের কোষাগারে ঢোকে না। উল্টে বালি বোঝাই লরি আটকে নেতাদের হাতে হেনস্থা হতে হয়েছে সরকারি কর্মীদের, এমন নজিরও রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বালি ব্যবসায়ী বলেন, “১৯৯৩ সাল পর্যন্ত ব্যবসা ভাল ছিল। চুরি হত ঠিকই। কিন্তু বালি লুঠ হতো না। এখন তো অবাধে বালি লুঠ হচ্ছে। যদিও বালি তোলা নিয়ে রাজনৈতিক সংঘর্ষের প্রশ্নে পারভেজ এবং জয়নালের সুর একই। পারভেজ বলেন, “ওই সব গ্রামে বালি নিয়ে কোনও সমস্যা হয়নি।” একই বক্তব্য জয়নালেরও।

বাস্তব অবশ্য অন্য কথা বলছে।

এখন প্রশ্ন উঠেছে, এই অনাচার ঠেকাবে কে?

কেন না-‘এখন যে সাপের ঘরেই ঘোগের বাসা’।

harinkhola tmc
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy