Advertisement
E-Paper

বালির সমবায়ে উলটপুরাণ, প্রার্থী তুলে নিল তৃণমূল

ছাত্র সংসদের নির্বাচনে একের পর এক কলেজে বিরোধী সংগঠনকে মনোনয়নই জমা দিতে দেয়নি শাসক দল। বালির একটি সমবায়ের নির্বাচনে প্রার্থী তুলে নিল সেই তৃণমূলই! কয়েক মাসের মধ্যে যে বালিতে পুরভোট আসন্ন, সেখানে শাসক দলের স্থানীয় নেতৃত্বের এমন ময়দান ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত চাঞ্চল্য তৈরি করেছে!

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:২০

ছাত্র সংসদের নির্বাচনে একের পর এক কলেজে বিরোধী সংগঠনকে মনোনয়নই জমা দিতে দেয়নি শাসক দল। বালির একটি সমবায়ের নির্বাচনে প্রার্থী তুলে নিল সেই তৃণমূলই! কয়েক মাসের মধ্যে যে বালিতে পুরভোট আসন্ন, সেখানে শাসক দলের স্থানীয় নেতৃত্বের এমন ময়দান ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত চাঞ্চল্য তৈরি করেছে!

বালি বিধানসভার বেলুড় এলাকায় অ্যালুমিনিয়াম কারখানা হিন্ডালকো-র একটি সমবায় সমিতির (এমপ্লয়িজ কো-অপারেটিভ ক্রেডিট সোসাইটি) নির্বাচন আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি। মোট ১২টি আসনের সব ক’টিতেই প্রার্থী দিয়েছে কংগ্রেস-প্রভাবিত আইএনটিইউসি এবং সিপিএম সমর্থিত শ্রমিক সংগঠন। তৃণমূল প্রথমে মনোনয়ন জমা দিয়েছিল ৮টি আসনে! তার পরে ৩০ জানুয়ারি মনোনয়নপত্র তুলে নেওয়ার শেষ দিনে সেই ৮টি আসনের প্রার্থীদেরও প্রত্যাহার করে নিয়েছে শাসক দলের শ্রমিক সংগঠন!

হঠাৎ প্রার্থী প্রত্যাহার কেন? হিন্ডালকো’য় তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের সম্পাদক বাদল জানা বলেন, “সিপিএম ও কংগ্রেস, দুই সংগঠনের সঙ্গে মিলে সমবায়ে একটি মনোনীত বোর্ড করতে চেয়েছিলাম।” কিন্তু আচমকা সিপিএম ও কংগ্রেসের সঙ্গে মিলেমিশে পথ চলার সিদ্ধান্ত নিলেন কেন? বাদলবাবুর ব্যাখ্যা, “উৎপাদন কম। নির্বাচন ঘিরে শ্রমিক অসন্তোষ হলে কর্তৃপক্ষ অন্য কোনও ব্যবস্থা নিতে পারেন। তাই এটা ভেবেছিলাম। কিন্তু ওঁরা কেউই রাজি হলেন না।”

বাদলবাবুর এমন ব্যাখ্যায় সহমত নন সবাই। এলাকায় চলছে নানা জল্পনা। বালির কংগ্রেস নেতৃত্বের একাংশ যেমন অভিযোগ করছেন, সিপিএমের সঙ্গে তলে তলে সমঝোতা করেই প্রার্থী তুলে নিয়েছে তৃণমূল। সিপিএম-পরিচালিত বালি পুরসভায় দুর্নীতির কিছু অভিযোগের ক্ষেত্রে তৃণমূলের নরম সুর দেখেই তাঁদের এমন সন্দেহের সূত্রপাত। যদিও নিজেদের ভাবমূর্তির ক্ষতি করে সিপিএমকে সুবিধা করে দিয়ে তৃণমূলের কী লাভ, তার সুদত্তর নেই! পাশাপাশি, বালি এবং বেলুড় এলাকা যে হেতু তৃণমূলের নানা স্তরের গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বে জেরবার, তাই এই ঘটনার সঙ্গে শাসক দলের অভ্যন্তরীণ সমীকরণের যোগসূত্রও দেখছেন অনেকে।

তৃণমূলেরই একাংশের বক্তব্য, দলের হাওড়া জেলা সভাপতি (শহর) তথা মন্ত্রী অরূপ রায়ের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত বাদলবাবু প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই সিপিএম ও কংগ্রেসকে জায়গা ছেড়ে দিয়ে বিধায়ক সুলতান সিংহের গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কড়া বার্তা দিয়েছেন। তার প্রভাব পুরভোটেও পড়তে পারে বলে দলের এই অংশের আশঙ্কা। বাদলবাবুর সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন তৃণমূলের হাওড়া জেলা শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি অরূপেশ ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “উনি কার সঙ্গে কথা বলে এটা করলেন, জানতে চাইব!” শুনে বিস্ময় প্রকাশ করে মন্ত্রী অরূপবাবু বলেন, “ব্যাপারটা জানতাম না। দলের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া এটা কী ভাবে করল, জানতে চাইব!”

বাম-তৃণমূল ‘সমঝোতা’র অভিযোগ এনে হিন্ডালকো-র আইএনটিইউসি শ্রমিক সংগঠনের সম্পাদক দেবব্রত বর্ধন অবশ্য বলছেন, “তৃণমূলের এই কাণ্ড নির্বাচনে সিপিএমকে বেশি অক্সিজেন জোগাতে সাহায্য করবে!” যদিও ওই কারখানার সিপিএম সমর্থিত শ্রমিক সংগঠনের সম্পাদক প্রদীপ দে-র সাফ বক্তব্য, “তৃণমূল কেন প্রার্থী তুলে নিল, তা ওঁরাই বলতে পারবেন!” হাওড়া জেলা কমিটির সদস্য তথা বালির সিপিএম নেতা শঙ্কর মৈত্র আর এক ধাপ এগিয়ে বলেছেন, “তৃণমূলের নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে। সে কারণেই হয়তো ওঁরা প্রার্থী দিতে পারেননি।”

কারণ যা-ই হোক, পুরভোটের আগে একটি সমবায় নির্বাচনে শাসক দলের এ ভাবে ময়দান ছেড়ে দেওয়া জল্পনায় মশগুল করে তুলেছে বালি-বেলুড় এলাকাকে! তৃণমূলের এক নেতাই প্রশ্ন তুলছেন, “এর পরে পুরভোটে গণ্ডগোল এড়াতে সিপিএম-সহ অনান্য দলের সঙ্গে মিলেমিশে চলার জন্য স্থানীয় নেতৃত্ব আবার প্রার্থী প্রত্যাহার করে নেবেন না তো!”

shantanu ghosh southbengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy