উদয়নারায়ণপুরের ডিভিসুটে দামোদরের বাঁধ মেরামতির কাজ দেখছেন সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।
ডিভিসি জল ছাড়লেই ত্রাহি ত্রাহি রব ওঠে হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর এবং আমতা ২ ব্লকে। কার্যত ফি বছর একই চিত্র দেখা যায় এই দু’টি ব্লকে। ভবিষ্যতে আর যাতে এই ঘটনা না ঘটে তার জন্য এক গুচ্ছ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে রাজ্য সেচ দফতর। এর জন্য প্রায় ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে বলে রাজ্য সেচ দফতর সূত্রের খবর। ইতিমধ্যেই কয়েকটি পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়েই গিয়েছে। বাকি কাজগুলির জন্য টেন্ডার হয়েছে বলে সেচ দফতরের আমতা সাব ডিভিশন সূত্রে জানা গিয়েছে।
শুক্রবার রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় উদয়নারায়ণপুর ও আমতা ২ ব্লকের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন। তাঁর দাবি, “দামোদরের বাঁধ মেরামতির সিংহভাগ কাজ হয়েছে। বাকি পরিকল্পনাগুলিও দ্রুত রূপায়ণ করা হবে। আশা করি এবারে বর্ষার সময়ে ডিভিসি জল ছাড়লে দু’টি ব্লকের বাসিন্দারা আর দুর্দশার মধ্যে পড়বেন না।”
উদয়নারায়ণপুর এবং আমতা ২ ব্লক দামোদরের স্পিল এলাকায় অবস্থিত। এই দিকে দামোদরের পাড়ে সেচ দফতর কোনও বাঁধ দিতে পারে না। পূর্বতম জমিদারি বাঁধই এখানে সম্বল। ফলে ফি বছর ডিভিসি যখন জল ছাড়ে তখন পাড় উপছে তা এই দু’টি ব্লককে ভাসিয়ে দেয়। বাঁধ দিতে না পারায় আমতা ২ ব্লকের থলিয়া থেকে বাগনানের বাকসি পর্যন্ত প্রায় ১৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের একটি খাল কেটেছে সেচ দফতর। এই খাল দিয়ে ডিভিসির ছাড়া জল থলিয়ার কাছে দামোদর থেকে বেরিয়ে বাকসির কাছে রূপনারায়ণে গিয়ে পড়ে। কিন্তু এর পরেও বন্যা পুরোপুরি আটকানো যায়নি।
শেষ পর্যন্ত সেচ দফতর সিদ্ধান্ত নেয় বাঁধ উঁচু করা না হলেও যেসব এলাকা দিয়ে জল ঢুকে পড়ে সেইসব এলাকায় দামোদরের পাড় মজবুত করা হবে। সেই পরিকল্পনা মাফিক, এই অর্থ বছরের প্রায় ৯০ লক্ষ টাকা খরচ করে উদয়নারায়ণপুরের ডিহিভুরসুট, আখনা এবং মনসুখায় পাড় মেরামত করা হয়। এর জন্য খরচ করা হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা।
এছাড়া মজা দামোদর নামে পরিচিত ডিহিভুরসুট থেকে বাগনানের বাকসি পর্যন্ত প্রায় ৩৪ কিলোমিটার বিস্তৃত যে খালটি রয়েছে সেটির প্রায় ১০ কিলোমিটার সংস্কারে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। ১২ কোটি টাকা খরচ করে বাকি ২৪ কিলোমিটার অংশ সংস্কারের জন্য টেন্ডার ডাকা হয়েছে। এর ফলে ডিভিসির ছাড়া জল এই খাল বাহিত হয়ে ডিহিভুরসুট থেকে বাকসিতে এসে রূপনারায়ণে পড়বে। এ ছাড়া থলিয়া-বাকসি শর্টকার্ট চ্যানেলের উপরে নির্মিত সাইফনটির সংস্কার করার হচ্ছে। এর জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ১১ কোটি টাকা। এই সাইফন সংস্কার করা হলে খাল দিয়ে জল দ্রুত চলাচল করতে পারবে। ফলে কমবে বন্যার আশঙ্কা।
সেচমন্ত্রী বলেন, “বামফ্রন্ট আমলে দীর্ঘদিন ধরে উদয়নারায়ণপুর এবং আমতা ২ ব্লকে বন্যা প্রতিরোধে কোনও কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমদের দফতর বিস্তর সমীক্ষা করে এইসব পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এগুলি রূপায়িত হলে মানুষ ফিবছর বন্যার হাত থেকে অনেকটা রেহাই পাবেন।”
এদিন সেচমন্ত্রী আমতায় মান্দারিয়া খালের উপরে সংস্কার হওয়া সেতুরও উদ্বোধন করেন। এই সেতুটি সংস্কার করতে খরচ হয়েছে ১ কোটি ৫৬ লক্ষ টাকা। এই সেতু সংস্কার হওয়ার ফলে স্থানীয় বাসিন্দাদের বহুদিনের দাবি পূরণ হল। ছবি: সুব্রত জানা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy